ঢাকা ০২:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সেন্টমার্টিনে যেতে লাগছে এনআইডি ও লিখিত অনুমতি!

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:০৩:০২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৪ ২৬ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে আনুষ্ঠানিক কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও দ্বীপের বাসিন্দা ছাড়া সেখানে কেউ যেতে পারছে না। নভেম্বর মাসে পর্যটকরা যেতে পারবেন, তবে থাকতে পারবেন না এমন ঘোষণা থাকলেও দ্বীপ ভ্রমণের সব ব্যবস্থা বন্ধ। দ্বীপের বাসিন্দারা বলছেন, তাদের আত্মীয় স্বজনরাও বেড়াতে যেতে পারছেন না।

সরকারি ভাষ্যমতে, নভেম্বর মাসে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে বাধা থাকার কথা নয়, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেখানে বেড়াতে যাওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দাদেরও জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে নিজ এলাকায় প্রবেশ করতে হচ্ছে। এমনকি নভেম্বরের চার তারিখ সংবাদ সংগ্রহের জন্য সেন্টমার্টিন যেতে বিবিসির প্রতিবেদককে স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে লিখিত অনুমতি নিয়ে কোস্টগার্ডকে জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি দিতে হয়েছে।

সেন্টমার্টিন ভ্রমণের দ্রুতগামী যাতায়াদের আরেকটি ব্যবস্থা হলো স্পিডবোটে চলাচল। নিরাপত্তার বিবেচনা থেকে স্পিডবোট চলাচলও এখন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিশেষ অনুমতি ছাড়া স্পিডবোট চালানোর অনুমতি দেয়া হয় না।

যাতায়াতের জন্য এখনো সেন্টমার্টিন রূটে পর্যটকবাহী একটিও জাহাজ চলাচল শুরু হয়নি। স্পিডবোট চলাচলও বন্ধ। যাত্রীবাহী ট্রলার বা সার্ভিস বোট চলাচল করলেও ভ্রমণ করতে লিখিত অনুমতি লাগছে। সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা ছাড়া কাউকে ভ্রমণ করতে দেয়া হচ্ছে না।

দ্বীপের অধিবাসী কিনা নিশ্চিত করতে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে ট্রলারের টিকেট বিক্রি হচ্ছে। দফায় দফায় কোস্টগার্ড যাত্রীদের এনআইডি যাচাই করছে। অন্যদিকে ভ্রমণের জন্য কোনো অনুমোদন দিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন। উপজেলা পরিষদে একাধিক দেয়ালে বিজ্ঞপ্তি টানিয়ে দেয়া হয়েছে যেখানে বলা হচ্ছে ২২শে অক্টোবর থেকে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে কোনো অনুমতি দিচ্ছে না উপজেলা প্রশাসন।

এদিকে পর্যটনে এমন কড়াকড়ির ফলে দ্বীপের বেশিরভাগ দোকান-পাট, পর্যটনকে ঘিরে নির্মিত হোটেল রেস্তোরা বন্ধ। ভ্রমণে এই কড়াকড়ি নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করেন দ্বীপের স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ী এবং বাইরে থেকে যাওয়া বিনিয়োগকারীরা। বাইরে থেকে যারা পর্যটন খাতে দ্বীপে বিনিয়োগ করেছেন তারা পড়েছেন মারাত্মক বিড়ম্বনায়।

সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে দৈনিক দুই হাজার করে পর্যটক সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন। যার প্রতিবাদে নিয়মিত বিক্ষোভ আন্দোলন ও মানববন্ধন কর্মসূচি চলছে সেন্টমার্টিনে। পাঁচই নভেম্বর সেখানে এক বিক্ষোভ মিছিল এবং মানববন্ধন করে দ্বীপের ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় বাসীন্দারা।

স্থানীয় বিএনপির সভাপতি নুরুল আলম বলেন, স্বাধীন দেশ, আমি যদি এখান থেকে বাংলাদেশের প্রত্যেকটা জেলায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেতে পারলে, আমার সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের অংশ হইয়া স্বাধীনভাবে আমার বাংলাদেশের লোকজন আসতে পারবে না কেন?

সি ক্রুজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার থেকে জাহাজ দিনে গিয়ে ফেরা সম্ভব নয়। তাই নভেম্বর মাসে সেন্টমার্টিনে পর্যটন জাহাজ যাতায়াত শুরু করতে পারবে কি-না সেটি অনিশ্চিত।

রিসোর্টের ব্যবসায়ী মো. জসিম বলেন, সেন্টমার্টিনে দ্বীপের ১০ হাজার মানুষের জীবন ও জীবিকা এবং পরিবেশ দুটোই সমান গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ দুই মাস পর্যটন দিয়ে আমাদের বারোমাস চালানো সম্ভব না। পর্যটক যদি না আসে আমিতো উপোস থাকতে পারবো না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আদনান চৌধুরী বলেন, এনজিও কর্মী, গবেষণার কাজে কিংবা সংবাদ সংগ্রহের মতো জরুরি প্রয়োজনে যারা যায়, তাদেরকেই কেবল অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।

সেন্টমার্টিনে কোস্টগার্ডের স্টেশন কমান্ডার লে. কমান্ডার এস এম রাশাদ হায়দার বলেন, নিরাপত্তার বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ভ্রমণ করতে কেউ সেন্টমার্টিন যাতে না আসতে পারে সেজন্য তারা মনিটরিং করছেন।

এ বিষয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, একচল্লিশ ভাগ প্রবাল ক্ষয় হয়ে গেছে, এটা হচ্ছে জাতীয় পরিসংখ্যান। আন্তর্জাতিক সকল গ্রহণযোগ্য জার্নালে বলা হচ্ছে এভাবে চলতে থাকলে ২০৪৫ সালের মধ্যে সকল কোরাল ক্ষয় হয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপটা ডুবে গেলে পর্যটনটা থাকবে কোথায়?

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

সেন্টমার্টিনে যেতে লাগছে এনআইডি ও লিখিত অনুমতি!

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:০৩:০২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৪

সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে আনুষ্ঠানিক কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও দ্বীপের বাসিন্দা ছাড়া সেখানে কেউ যেতে পারছে না। নভেম্বর মাসে পর্যটকরা যেতে পারবেন, তবে থাকতে পারবেন না এমন ঘোষণা থাকলেও দ্বীপ ভ্রমণের সব ব্যবস্থা বন্ধ। দ্বীপের বাসিন্দারা বলছেন, তাদের আত্মীয় স্বজনরাও বেড়াতে যেতে পারছেন না।

সরকারি ভাষ্যমতে, নভেম্বর মাসে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে বাধা থাকার কথা নয়, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেখানে বেড়াতে যাওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দাদেরও জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে নিজ এলাকায় প্রবেশ করতে হচ্ছে। এমনকি নভেম্বরের চার তারিখ সংবাদ সংগ্রহের জন্য সেন্টমার্টিন যেতে বিবিসির প্রতিবেদককে স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে লিখিত অনুমতি নিয়ে কোস্টগার্ডকে জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি দিতে হয়েছে।

সেন্টমার্টিন ভ্রমণের দ্রুতগামী যাতায়াদের আরেকটি ব্যবস্থা হলো স্পিডবোটে চলাচল। নিরাপত্তার বিবেচনা থেকে স্পিডবোট চলাচলও এখন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিশেষ অনুমতি ছাড়া স্পিডবোট চালানোর অনুমতি দেয়া হয় না।

যাতায়াতের জন্য এখনো সেন্টমার্টিন রূটে পর্যটকবাহী একটিও জাহাজ চলাচল শুরু হয়নি। স্পিডবোট চলাচলও বন্ধ। যাত্রীবাহী ট্রলার বা সার্ভিস বোট চলাচল করলেও ভ্রমণ করতে লিখিত অনুমতি লাগছে। সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা ছাড়া কাউকে ভ্রমণ করতে দেয়া হচ্ছে না।

দ্বীপের অধিবাসী কিনা নিশ্চিত করতে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে ট্রলারের টিকেট বিক্রি হচ্ছে। দফায় দফায় কোস্টগার্ড যাত্রীদের এনআইডি যাচাই করছে। অন্যদিকে ভ্রমণের জন্য কোনো অনুমোদন দিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন। উপজেলা পরিষদে একাধিক দেয়ালে বিজ্ঞপ্তি টানিয়ে দেয়া হয়েছে যেখানে বলা হচ্ছে ২২শে অক্টোবর থেকে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে কোনো অনুমতি দিচ্ছে না উপজেলা প্রশাসন।

এদিকে পর্যটনে এমন কড়াকড়ির ফলে দ্বীপের বেশিরভাগ দোকান-পাট, পর্যটনকে ঘিরে নির্মিত হোটেল রেস্তোরা বন্ধ। ভ্রমণে এই কড়াকড়ি নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করেন দ্বীপের স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ী এবং বাইরে থেকে যাওয়া বিনিয়োগকারীরা। বাইরে থেকে যারা পর্যটন খাতে দ্বীপে বিনিয়োগ করেছেন তারা পড়েছেন মারাত্মক বিড়ম্বনায়।

সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে দৈনিক দুই হাজার করে পর্যটক সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন। যার প্রতিবাদে নিয়মিত বিক্ষোভ আন্দোলন ও মানববন্ধন কর্মসূচি চলছে সেন্টমার্টিনে। পাঁচই নভেম্বর সেখানে এক বিক্ষোভ মিছিল এবং মানববন্ধন করে দ্বীপের ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় বাসীন্দারা।

স্থানীয় বিএনপির সভাপতি নুরুল আলম বলেন, স্বাধীন দেশ, আমি যদি এখান থেকে বাংলাদেশের প্রত্যেকটা জেলায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেতে পারলে, আমার সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের অংশ হইয়া স্বাধীনভাবে আমার বাংলাদেশের লোকজন আসতে পারবে না কেন?

সি ক্রুজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার থেকে জাহাজ দিনে গিয়ে ফেরা সম্ভব নয়। তাই নভেম্বর মাসে সেন্টমার্টিনে পর্যটন জাহাজ যাতায়াত শুরু করতে পারবে কি-না সেটি অনিশ্চিত।

রিসোর্টের ব্যবসায়ী মো. জসিম বলেন, সেন্টমার্টিনে দ্বীপের ১০ হাজার মানুষের জীবন ও জীবিকা এবং পরিবেশ দুটোই সমান গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ দুই মাস পর্যটন দিয়ে আমাদের বারোমাস চালানো সম্ভব না। পর্যটক যদি না আসে আমিতো উপোস থাকতে পারবো না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আদনান চৌধুরী বলেন, এনজিও কর্মী, গবেষণার কাজে কিংবা সংবাদ সংগ্রহের মতো জরুরি প্রয়োজনে যারা যায়, তাদেরকেই কেবল অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।

সেন্টমার্টিনে কোস্টগার্ডের স্টেশন কমান্ডার লে. কমান্ডার এস এম রাশাদ হায়দার বলেন, নিরাপত্তার বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ভ্রমণ করতে কেউ সেন্টমার্টিন যাতে না আসতে পারে সেজন্য তারা মনিটরিং করছেন।

এ বিষয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, একচল্লিশ ভাগ প্রবাল ক্ষয় হয়ে গেছে, এটা হচ্ছে জাতীয় পরিসংখ্যান। আন্তর্জাতিক সকল গ্রহণযোগ্য জার্নালে বলা হচ্ছে এভাবে চলতে থাকলে ২০৪৫ সালের মধ্যে সকল কোরাল ক্ষয় হয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপটা ডুবে গেলে পর্যটনটা থাকবে কোথায়?