বিক্রি হচ্ছে আশ্রয়ণের ঘর!
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৫২:০১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৪ ৬ বার পড়া হয়েছে
পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর বিক্রি হচ্ছে মোটা অংকের টাকায়। ঘর বরাদ্দ পাওয়ার ৭ মাসের মাথায় বিক্রি করে চলে গেছেন নিজ বসত বাড়িতে। কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের নয়াপাড়া-ফাসিপাড়া আবাসন প্রকল্পের চারটি ঘর ইতিমধ্যে বিক্রি হয়েছে। বিক্রির দেন দরবার চলছে আরো কয়েকটির। প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের না দিয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিলো ধনীদের এমন অভিযোগ আশ্রয়নবাসীর।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের নয়াপাড়া ও ফাঁসিপাড়া গ্রামে নির্মাণ করা হয় ৬৪টি ঘর। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা মো: হুমায়ুন কবির’র তত্ত্বাবধানে চলতি বছরের মার্চের মাঝামাঝি নির্মাণ কাজ শেষ হয়। প্রতিটি ঘরে দুই লাখ ৮৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ঘরগুলো গত ২১ মার্চ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন। এরপর লতাচাপলী ইউনিয়ন ও কুয়াকাটা পৌরসভার ভূমিহীন ও গৃহীনদের বসবাসের জন্য ঘরগুলো হাস্তান্তর করার কথা ছিল। কিন্তু বেশ কিছু ঘর বরাদ্দ পেয়েছে ধনীরা। তারা ইতোমধ্যে বরাদ্দ পাওয়া ঘর বিক্রি করেছেন।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, আশ্রয়ন প্রকল্পের ৩৭ নম্বর ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন নুরুন্নাহার বেগম। তিনি স্থানীয় বাসিন্দা মো: হানিফের নিকট ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। ৪১ নম্বর ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন মো: নূর হোসেন। এলাকার অসহায় মো: সুমন মিয়ার কাছে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। ৫১ নম্বর ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন মোসা: ছনিয়া বেগম। তার কাছ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় কিনেছেন জহিরুল ইসলাম।
৫৩ নম্বর ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন শহীদ ফকির। তিনি ১লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন আশাদুল বেপারীর নিকট।
এছাড়া ১১ নম্বর ঘর আ: ছালাম বরাদ্দ পেয়ে আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা মোস্তফা গাজী মেয়ে মোসা: ফেরদৌসী বেগমের নিকট ভাড়া দিয়ার অভিযোগ করেছেন অন্যান্য বাসিন্দারা। তবে ফেরদৌসী বেগম ভাড়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ঘরের মালিক আ: ছালাম ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য বাড়িতে গেছেন। পরীক্ষা শেষ হলে আবার এসে বসবাস করবেন। আপাতত আমরা থাকি।
৫৪ নম্বর ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন হেমায়েত উদ্দিন। তিনি নিজস্ব বাড়িতে চলে গেছেন। অসহায় ফেরদৌস ও পাখি বেগম দম্পতিকে থাকতে দিয়েছেন।
প্রকল্পের ২৪ নম্বর ঘরটি বরাদ্দ পেয়েছিলেন অসহায় বিধবা বৃদ্ধা নূরভানু। তিনি চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এ সুযোগে তৎকালীন মহিপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশীলদার রফিকুল ইসলাম মোটা অংকের টাকা নিয়ে বেলাল হোসেনকে দিয়েছেন। বেল্লাল হোসেন এখন ওই ঘরে বসবাস করছেন। তবে লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বেল্লাল হোসেন।
আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা সোহরাফ হোসেন বলেন, তৎকালীন আওয়ামী লীগের নেতারা টাকা পয়সা নিয়ে কিছু ঘর ধনীদের বরাদ্দ দিয়েছিলো। তারা এখানে না এসে বিক্রি করে দিয়েছেন।
জানা গেছে, মুজিব শতবর্ষের ৪র্থ পর্যায় প্রকল্পের আওতায় ৬৪টি ঘর নির্মিত হয়েছে। কিন্তু কাজ নিম্নমানের হওয়ায় অনেক ঘরের চালা থেকে পড়ছে বৃষ্টির পানি। অধিকাংশ ঘরের প্লাস্টার খসে পড়ছে। উঠে গেছে দেয়ালের রং। নেই রান্নার পানির কোন ব্যবস্থা। এখন হয়নি চলাচলের রাস্তা। একটু বৃষ্টি হলেই ঘরের সামনে জমে পানি। কাদায় একাকার হয়ে যায় পুরো আশ্রয়ন প্রকল্পের পথ। প্রখর রোদের খরতাপে অতিষ্ট আশ্রয় কেন্দ্রের বাসিন্দারা। রান্নার পানির ব্যবস্থা হয়নি এখনো। পাশের একমাত্র খালটির পানিও লবণাক্ত। লবণ পানি ব্যবহারের ফলে বাড়ছে রোগ বালাই। বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে ঘরের আসবাবপত্রসহ প্রয়োজনীয় মালামাল। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করায় ভেস্তে যাচ্ছে প্রকল্পের আসল উদ্দেশ্য। দ্রুত এসব সমস্যার সমাধানের দাবি আশ্রয়নবাসীর।
৪৫ নম্বর ঘরের উপকারভোগী মোসা: সাথী বলেন, আমার ঘরে ওঠার সময় পিছনের একটা দরজা ও সামনের একটি জানালা ভাঙ্গা পেয়েছি এবং পিছনের জানালাই ছিলো না। এখনও রাস্তা, পানি ও বিদ্যুত ব্যবস্থা করা হয় নাই। এখানে বসবাস করতে এসে চরম দুর্ভোগে পড়েছি।
৪৭ নম্বর ঘরের উপকারভোগী মো: তারেক হোসেন বলেন, কিন্তু ঘর নির্মাণের কাজের সাথে যারা জড়িত ছিলেন তারা নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে কাজ করায় আমাদের এ ভোগান্তি।
৫৯ নম্বর ঘরের উপকারভোগী লালবরু বলেন, আমরা শুধু একটা ঘর পেয়েছি। চলাচলের কোন রাস্তা নেই। ঘরের সামনে পানি জমা আছে। আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে।
২৩ নম্বর ঘরের উপকারভোগী মো: ছিদ্দিক বলেন, থাকার ঘর হয়েছে। বৃষ্টি হতে না হতেই চলাচলের পথে পানি জমে কাদা হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: রবিউল ইসলাম বলেন, কেউ ঘর বিক্রি করলে তার বরাদ্দ বাতিল করে অসহায়দের মাঝে নতুন করে বরাদ্দ দেয়া হবে।