প্রকাশ্যে আসছেন আ’ লীগের পলাতক নেতারা
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:১১:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪ ৯ বার পড়া হয়েছে
ছাত্র-জনতার গণঅভুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই পলাতক আছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ অন্য শীর্ষ নেতারা। তারদ কেউ কেউ বিদেশে অবস্থান করেছেন আর বাকিরা দেশেই বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থেকে দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন।
দেশে থাকা এসব নেতাদের অনেকেই গত তিনমাসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন। আর বিদেশে থাকা নেতাদের কয়েকজন ভিডিও বার্তা, বিবৃতি অথবা বিদেশী মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার মাধ্যমে প্রকাশ্যে এসেছেন। এরমধ্যে অজ্ঞাত স্থান থেকে দলটির সভাপতি মন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ভিডিও বার্তার মাধ্যমে ও ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহামুদ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্যাটেলাইট টেলিভিশনে থেকে সাক্ষাৎকার দিয়ে প্রকাশ্যে এসেছেন।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বাংলা সংবাদমাধ্যম ‘ঠিকানা’ নিউজের ইউটিউবে চ্যানেলে খালিদ মহিউদ্দিন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সাক্ষাৎকারের ঘোষণা দিয়েছেন। এরআগে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়সে ভেলেকে বক্তব্য দেন তিনি। পলাতক এসব নেতাদের প্রকাশ্যে আসা নিয়েও তৈরি হচ্ছে ব্যাপক সমালোচনা। এদিকে হাসিনা সরকারের পতনের পর হামলা-মামলায় জর্জরিত তৃণমূল নেতাদের সংগঠিত করার উদ্যোগ থাকলেও নেতারা পলাতক থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। বিপর্যস্ত তৃণমূল নেতাকর্মীদের জন্য দলের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো সহায়ক কর্মসূচি চালু করতে পারেনি দলটি। আপাতত অপেক্ষা আর পর্যবেক্ষণের বার্তা দিয়েই তাদের সান্তনা দিচ্ছেন পলাতক নেতারা।
গত ৬ আগস্ট দেশ ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিমের হাতে আটক হন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এরপর আগস্টের শেষে বেলজিয়াম পালিয়ে যান তিনি। তার পালিয়ে যাওয়া নিয়ে বিস্ময় তৈরি হয় সবার মনে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক বাংলা স্যাটেলাইট টেলিভিশন ‘চ্যানেল এস’-এর মতামত বিষয়ক অনুষ্ঠান ‘অভিমত’-এ গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর প্রথমবার আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেন হাছান মাহমুদ। ইমিগ্রেশনে পালিয়ে যাওয়ার পর তার প্রকাশ্যে আসা নিয়ে শুরু হয়েছে বিভিন্ন সমালোচনা।
ওই অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, গতন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের জন্য যদি প্রয়োজন হয়, অবশ্যই বিএনপির সঙ্গে একযোগে কাজ করতে আমরা তৈরি আছি, এক্ষেত্রে কোনো দ্বিমত নেই। তিনি আরও বলেন, তার দল একটি গণতান্ত্রিক দল। তবে শেখ হাসিনা হচ্ছে আওয়ামী লীগের প্রাণ ভোমরা। তাকে ছাড়া আওয়ামী লীগ কল্পনা করা যায় না। তিনি মনে করেন, শেখ হাসিনা দেশে ফিরলে তাকে কেন্দ্র করে দলের নেতাকর্মীরা আবার একতাবদ্ধ হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে কখনো নিষিদ্ধ করা যাবে না। কারণ বাংলাদেশে কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে।
এরআগে ২৪ অক্টোবর নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লাইভে আসেন দলটির সভাপতিমÐলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। লাইভে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা এখনও বাংলাদেশের বৈধ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বহাল রয়েছেন বলে দাবি করেন। নানক বলেন, রাষ্ট্রপতি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র কোথায়, তিনি কোনো লিখিত দেননি। তার মানে শেখ হাসিনা এখনও বাংলাদেশের বৈধ প্রধানমন্ত্রী। আর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ড. আসিফ নজরুল এবং তার গংরা যে সরকার গঠন করেছে এটি একটি অবৈধ, অসাংবিধানিক ও দখলদার সরকার। এই অন্তর্র্বতী সরকারের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতিকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মতো আরেকটি ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামেরও আহŸান জানান নানক।
সবশেষ গতকাল বুধবার খালেদ মহিউদ্দীন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বাংলা সংবাদমাধ্যম ‘ঠিকানা’ নিউজের ইউটিউবে চ্যানেলে ছাত্রলীগ সভাপতির সাক্ষাৎকার নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর তোপের মুখে পড়ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যপক সমালোচনার ঘড় বইছে এগটনার পর। সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা সংগঠন ছাত্রলীগের সভাপতিকে ‘প্রমোট’ করার মাধ্যমে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ‘শহীদদের রক্তের সঙ্গে খালেদ মহীউদ্দীন বেইমানি করছেন’ বলে দাবি করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহŸায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সম্পাদক সারজিস আলম। নিজ নিজ ফেসবুক প্রোফাইল পোস্টে এসব অভিযোগ করেন তারা।
সারজিস আলম লিখেছেন, খালেদ মহিউদ্দীন ভাই, এর পূর্বে কয়টা নিষিদ্ধ সংগঠনের লিডারদের সাথে টকশো করেছেন? এটা আমাদের ২ হাজারের অধিক শহীদের সাথে বেইমানি, অর্ধ-লক্ষ রক্তাক্ত ভাইবোনের রক্তের সাথে বেঈমানি। হাসনাত আবদুল্লাহ লিখেছেন, নিষিদ্ধ সংগঠনের সভাপতিকে প্রমোট করার মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে শহীদ ও জাতীয় বিপ্লব ও সংহতির সাথে প্রতারণা করা হলো।
এদিকে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার তিন মাস পেরোলো। এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেননি দলটির নেতাকর্মীরা। প্রায় সব নেতাকর্মীই এখনো আত্মগোপনে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের দু-একজন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন কিছু কর্মী। যার সঙ্গেই আলাপ হচ্ছে, তাকেই আপাতত অপেক্ষা ও পর্যবেক্ষণের পরামর্শ দিচ্ছেন ওই নেতারা।
আওয়ামী লীগের কিছু নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গ্রেপ্তারের ভয়ে তারা এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে আসতে সাহস পাচ্ছেন না। আবার প্রকাশ্যে এলে হামলা হতে পারে বা জীবনের নিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে, এমন আতঙ্ক এখনো তাদের মধ্যে রয়ে গেছে। অনেকের ক্ষেত্রে আত্মগোপনেও বেশিদিন থাকা সম্ভব হচ্ছে না। দীর্ঘ তিন মাস আত্মগোপনে থাকায় তারা অর্থনৈতিক, পারিবারিকসহ বিভিন্ন সংকট ও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন। এখন তারা কী করবেন, আর কতদিন এভাবে থাকতে হবে কেউ কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। স¤প্রতি জেল হত্যা দিবসসহ দলের দুই একটি দিবসে কেউ কেউ স্বল্প পরিসরে কিছু করার চেষ্টা করেও সফল হননি।
তাছাড়া এখন পর্যন্ত কর্মীদের প্রতি দলের কোনো স্পষ্ট দিক-নির্দেশনাও নেই। আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, দুই একজন নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতার সঙ্গে কখনো কখনো তাদের মোবাইল ফোনে কথা হচ্ছে। ওই নেতারা যখনই যার সঙ্গে কথা বলছেন, তাকেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার পরামর্শ দিচ্ছেন। কর্মীদের বলছেন, অপেক্ষায় থাকতে হবে। অপেক্ষা আর পর্যবেক্ষণ ছাড়া এখন কিছু করার নেই। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, এজন্য আরও সময়ের প্রয়োজন।