বিদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে এমপি-মন্ত্রী হন আ’ লীগের ২৪ জন

বাংলা টাইমস ডেস্ক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৫:০০:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪ ১১ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন মেয়াদে মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও এমপি ছিলেন এমন ২৪ জনের দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করলে তিনি এমপি বা মন্ত্রী হতে পারেন না।

গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রভাবশালী ১৮০ জনের অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে টাকা পাচারের বিষয়টি অনুসন্ধান করছে দুদক।

সেই অনুসন্ধানে এখন পর্যন্ত ২৪ জনের দ্বৈত নাগরিকত্ব বা রেসিডেন্স কার্ড থাকার ব্যাপারে তথ্য পেয়েছে দুদক। অনুসন্ধানে যে ২৪ জনের নাম এসেছে, তাদের মধ্যে পাঁচজন এখন কারাগারে। বাকিরা গত ৫ আগস্টের পর আর প্রকাশ্যে আসেননি।

তথ্য অনুযায়ী, সাবেক পাঁচজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর নাগরিকত্ব রয়েছে যুক্তরাজ্যে। তারা হলেন আ হ ম মুস্তফা কামাল, মো. তাজুল ইসলাম, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও মো. মাহবুব আলী। তাদের মধ্যে গত ১৫ সেপ্টেম্বর মাহবুব আলীকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব বা গ্রিন কার্ড রয়েছে সাবেক চারজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ সাতজন সংসদ সদস্যের। দুদকের অনুসন্ধানে এখন পর্যন্ত যাদের নাম এসেছে, তারা হলেন আব্দুস শহীদ, নসরুল হামিদ, জুনাইদ আহ্‌মেদ, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, আবদুস সোবহান মিয়া (গোলাপ), মাহফুজুর রহমান ও সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদ। তাদের মধ্যে সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ, সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তারের পর এখন কারাগারে।

দুদকের অনুসন্ধানে কানাডার নাগরিকত্ব রয়েছে, এমন ছয়জনের নাম পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একজন সাবেক মন্ত্রী, অন্যরা সাবেক সংসদ সদস্য। এর মধ্যে রয়েছেন আবদুর রহমান, মাহবুব উল আলম হানিফ, আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী (নাসিম), শামীম ওসমান, শফিকুল ইসলাম (শিমুল) ও হাবিব হাসান।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, সুইজারল্যান্ডের নাগরিকত্ব রয়েছে সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের এবং জাপানে থাকার অনুমতি (রেসিডেন্স কার্ড) রয়েছে সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমের। সাবেক সংসদ সদস্য (টাঙ্গাইল-২ আসন) তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনির জার্মানির নাগরিক এবং সাবেক সংসদ সদস্য (ময়মনসিংহ-১১) এম এ ওয়াহেদ পাপুয়া নিউগিনির নাগরিকত্ব নিয়েছেন।

সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের মধ্যে যাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে, তারা বড় অঙ্কের টাকা বিদেশে পাচার করেছেন—এমন তথ্য দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। এ বিষয়ে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। যারা টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দুদকের অনুসন্ধানে যে ২৪ জনের নাম এসেছে, তাদের মধ্যে পাঁচজন এখন কারাগারে। বাকিরা গত ৫ আগস্টের পর আর প্রকাশ্যে আসেননি। তাদের মুঠোফোন নম্বরও বন্ধ রয়েছে। আবার অনেকে দেশ ছেড়েছেন বলে প্রচার আছে। যে কারণে দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে তাদের বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে, এমন কোনো ব্যক্তির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া বা মন্ত্রিত্ব লাভের সুযোগ নেই। তথ্য গোপন করে যদি এ কাজ হয়ে থাকে, তাহলে আইন ও সংবিধান পরিপন্থী কাজ হয়েছে।- সূত্র: প্রথম আলো

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

বিদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে এমপি-মন্ত্রী হন আ’ লীগের ২৪ জন

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৫:০০:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪

আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন মেয়াদে মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও এমপি ছিলেন এমন ২৪ জনের দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করলে তিনি এমপি বা মন্ত্রী হতে পারেন না।

গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রভাবশালী ১৮০ জনের অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে টাকা পাচারের বিষয়টি অনুসন্ধান করছে দুদক।

সেই অনুসন্ধানে এখন পর্যন্ত ২৪ জনের দ্বৈত নাগরিকত্ব বা রেসিডেন্স কার্ড থাকার ব্যাপারে তথ্য পেয়েছে দুদক। অনুসন্ধানে যে ২৪ জনের নাম এসেছে, তাদের মধ্যে পাঁচজন এখন কারাগারে। বাকিরা গত ৫ আগস্টের পর আর প্রকাশ্যে আসেননি।

তথ্য অনুযায়ী, সাবেক পাঁচজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর নাগরিকত্ব রয়েছে যুক্তরাজ্যে। তারা হলেন আ হ ম মুস্তফা কামাল, মো. তাজুল ইসলাম, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও মো. মাহবুব আলী। তাদের মধ্যে গত ১৫ সেপ্টেম্বর মাহবুব আলীকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব বা গ্রিন কার্ড রয়েছে সাবেক চারজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ সাতজন সংসদ সদস্যের। দুদকের অনুসন্ধানে এখন পর্যন্ত যাদের নাম এসেছে, তারা হলেন আব্দুস শহীদ, নসরুল হামিদ, জুনাইদ আহ্‌মেদ, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, আবদুস সোবহান মিয়া (গোলাপ), মাহফুজুর রহমান ও সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদ। তাদের মধ্যে সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ, সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তারের পর এখন কারাগারে।

দুদকের অনুসন্ধানে কানাডার নাগরিকত্ব রয়েছে, এমন ছয়জনের নাম পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একজন সাবেক মন্ত্রী, অন্যরা সাবেক সংসদ সদস্য। এর মধ্যে রয়েছেন আবদুর রহমান, মাহবুব উল আলম হানিফ, আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী (নাসিম), শামীম ওসমান, শফিকুল ইসলাম (শিমুল) ও হাবিব হাসান।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, সুইজারল্যান্ডের নাগরিকত্ব রয়েছে সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের এবং জাপানে থাকার অনুমতি (রেসিডেন্স কার্ড) রয়েছে সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমের। সাবেক সংসদ সদস্য (টাঙ্গাইল-২ আসন) তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনির জার্মানির নাগরিক এবং সাবেক সংসদ সদস্য (ময়মনসিংহ-১১) এম এ ওয়াহেদ পাপুয়া নিউগিনির নাগরিকত্ব নিয়েছেন।

সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের মধ্যে যাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে, তারা বড় অঙ্কের টাকা বিদেশে পাচার করেছেন—এমন তথ্য দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। এ বিষয়ে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। যারা টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দুদকের অনুসন্ধানে যে ২৪ জনের নাম এসেছে, তাদের মধ্যে পাঁচজন এখন কারাগারে। বাকিরা গত ৫ আগস্টের পর আর প্রকাশ্যে আসেননি। তাদের মুঠোফোন নম্বরও বন্ধ রয়েছে। আবার অনেকে দেশ ছেড়েছেন বলে প্রচার আছে। যে কারণে দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে তাদের বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে, এমন কোনো ব্যক্তির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া বা মন্ত্রিত্ব লাভের সুযোগ নেই। তথ্য গোপন করে যদি এ কাজ হয়ে থাকে, তাহলে আইন ও সংবিধান পরিপন্থী কাজ হয়েছে।- সূত্র: প্রথম আলো