নিষেধাজ্ঞায়ও থেমে নেই ইলিশ ধরা-বিক্রি
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৩:০৯:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪ ২৭ বার পড়া হয়েছে
ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বিপণন ও মজুত ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। মা ইলিশ রক্ষা করতে বিজ্ঞানভিত্তিক প্রজনন সময় বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে চাঁদপুর মেঘনা ও পদ্মা নদী সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় নিষেধাজ্ঞাতেও থেমে নেই মা ইলিশ নিধন ও বিক্রি।
শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে সরজমিন দেখা যায়, এক শ্রেণির জেলে প্রকাশ্যেই নদীতে বিচরণ করছে। নদীর তীরবর্তী প্রতিটি চর এলাকায় নৌকা নিয়ে ইলিশ শিকারে মেতে রয়েছে তারা। নিষেধাজ্ঞার কথা যেন কোনোভাবেই জেলেদের কানে যাচ্ছে না। দিনরাত চলছে ইলিশ শিকার। সেইসঙ্গে বসছে নদীর পাড়ের নির্জনস্থানে ইলিশ বেচা কেনা। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে প্রশাসন নদীতে কম নেমেছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে বসে ছিলেন না চাঁদপুর সদর,হাইমচর ও মতলবের জেলেরা। অনেকেই জাল নৌকা নিয়ে চরের ঝোঁপ জঙ্গলে লুকিয়ে থেকে নদীতে গিয়ে জাল ফেলে ইলিশ শিকার করছে।
এসব ইলিশ কিনতে মেঘনা ও পদ্মা পাড়ের দুর্গম চরাঞ্চলে ছুটে আসছেন এলাকার ক্রেতা ও হকাররা। অনেকটা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন নিষিদ্ধ মৌসুমে গড়ে উঠা অস্থায়ী ইলিশের হাটে। তবে প্রশাসন একদিকে নদীতে অভিযান চালাচ্ছে অন্যদিকে নদীর পাড়ের অনেক এলাকা জুড়ে চলছে প্রকাশ্যে ইলিশ মাছ নিধন ও বিক্রি।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, মা ইলিশ রক্ষায় চাঁদপুরের পদ্মা মেঘনা নদীতে উপজেলা মৎস্য অফিস, জেলা উপজেলা প্রশাসন, নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ডের অভিযান চলমান রয়েছে। সময় ভাগ করে একাধিক টিম নদীতে অভিযান চালায়। জেলেদের আটকসহ জব্দ করা হচ্ছে লাখ লাখ মিটার জাল। গত কয়েক দিনে পদ্মা মেঘনা নদীতে অভিযান চালিয়ে নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ড দেড় শতাধিক জেলে, বিপুল জালসহ মাছ ও অনেকগুলো নৌকা আটক করেছে।
উপজেলা মৎস্য অফিস ও নৌ-পুলিশ কমপক্ষে সাড়ে নয় লাখ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করে ধ্বংস করেছে। এ ছাড়া ট্রলার জব্দও করেছে। আটক জেলেদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে করাদণ্ড, জরিমানা করা হয়েছে। আর উদ্ধারকৃত মাছ বিভিন্ন এতিমখানায় বিতরণ করে দেওয়া হয়েছে। জাল গুলো আগুনের পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়।
চাঁদপুর মেঘনা পাড়ের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিষেধাজ্ঞার মধ্যে নদীর পাড়েই মাছের হাট বসে প্রতিদিন। মতলব,হাইমচর ও চাঁদপুর সদর উপজেলার প্রতিটি চরে এবং নদীর পাড়ে প্রতিদিন ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এবং সকাল থেকে দুপুরে ইলিশ ধরার জন্য জেলেরা নদীতে যায়। তাদের আহরিত ইলিশ নদীর পাড়েই উৎপেতে থাকা ইলিশ হকাররা কেনার জন্য ভিড় করেন।সেখানেই বিক্রি হয় ইলিশ। মতলব উত্তরের মোহনপুর,এখলাশপুর,আমিরাবাদ, ফরাজিকান্দি, চাঁদপুর সদরের রাজরাজেশ্বর, বিষ্ণুপুরের লালপুর, সফরমালি, আনন্দবাজার, বহরিয়া, দোকানঘর, রনাগোয়াল, লক্ষ্মীপুর,হরিনা গোবিন্দিয়া,আখনের হাট, ইব্রাহিপুর গুচ্ছ গ্রাম, কোম্পানির চর, হাইমচরের কাটাখালি,মনিপুরচর, ঈশানবালা, চরভৈরবী,আমতলী,মাঝের চর সংলগ্ন নদীর তীরবর্তী এলাকায় গড়ে উঠা এসব অস্থায়ী হাটে ইলিশ বিক্রি চলছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) চাঁদপুর সদর নৌ থানার ওসি ইকবাল জানান, গত চব্বিশ ঘন্টায় মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে পদ্মা মেঘনা নদীতে মাছ ধরা অবস্থায় ৮ জেলেকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। ৪টি জেলে নৌকাসহ বিপুল পরিমাণ জাল জব্দ করা হয়।
নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের এক প্রেস নোটে জানানো হয়, ২৪ অক্টোবর ১০৮ কেজি ইলিশ, ৭ লাখ ১৮ হাজার ৬০০ মিটার জাল উদ্ধার, মাছ ধরার ৬টি নৌকা আটক,২ মামলা রুজু, ৩টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। গ্রেফতার ২২ আসামীর মধ্যে ১৮ জনকে সাজা দেয়া হয়।
একদিকে প্রশাসনের অভিযান অন্যদিকে নিষেধাজ্ঞা ও অমান্য করে নদীতে শিকার করছে জেলেরা। প্রায় সময় গ্রামে ও শহরের অলি গলিতে হকারি করে ইলিশ মাছ বিক্রি করা হয় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ কে নিরাপদে ডিম ছাড়ার সুযোগ দিতে নদীতে দুর্বৃত্ত জেলেদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের তৎপরতা আরো জোরদার অভিযান করা দরকার বলে মনে করছেন এলাকার পর্যবেক্ষক ও সচেতন মহল।