প্রমিলা ও দুখীরামের জীবনে জোসনার আলো
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:০০:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ৩২ বার পড়া হয়েছে
বাবা মারা গেছে ২৫ বছর আগে। বড় বোন মধুমালার বিয়ে হয়ে গেছে। আরেক বোন প্রমিলা ও একমাত্র ভাই দুখীরাম দু’জনই বুদ্ধি প্রতিবন্ধি। এদিকে অস্থিচর্মিসার বৃদ্ধা মা জোসনা অধিকারী রোগাকান্ত। কিন্ত এমন শরীর নিয়ে প্রতিবন্ধি ছেলেমেয়ে দু’টিকে তাকেই সামলাতে হয়।
কেননা রাত গড়িয়ে সকাল হলেই প্রতিদিন ৩ জনের ভাতের জোগাড়ে বের হতে হয় তাকে। গ্রাম ঘুরে কোন দিন ক্ষুধা মেটে, না হলে থাকতে হয় অনাহারে। আবার রাত পোহালেই মা জোসনার অধিকারীর জন্য এসে যায় পরের দিনের খাবারের ভাবনা। সারাবছর তাদের এমনিভাবে দিনকাটে। যেখানে প্রমিলা দুখীরামদের অন্ধকারচ্ছন্ন জীবনে একমাত্র জোসনার আলোই ভরসা। তাদের বাড়ি ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের জামাল ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামে।
সরেজমিনে প্রমিলা দুখিরামদের গ্রাম বাসুদেবপুরে গেলে দেখা যায়, মাটির উপরে বাঁশ খুটির টিনের ছাউনি আর বেড়ার ছোট্র একটি ঝুপড়ি ঘর। যেখানে বৃদ্ধা জোসনা অধিকারী ও তার দুই সন্তানের মাথা গোজার জায়গা। যে ঝুঁপড়ি ঘরটির সামনে বসে তারা খেয়াল খুশি মত কি যেন বলছে। আর তাদের বৃদ্ধা মা জোসনা অধিকারী বেরিয়েছেন তাদের খাবারের সন্ধ্যানে। কিছুক্ষন পরে মা খাবার নিয়ে ফিরলে বুদ্ধি প্রতিবন্ধি দুই ভাই বোনের হাসিমাখা মুখই বলে দিচ্ছিল ক্ষুধার জ্বালা সবার জন্য সমান। আর মা বৃদ্ধা জোসনা অধিকারীর অস্থিচর্মিসার রোগাকান্ত দেহ নিয়ে দুই সন্তানের জন্য বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভাত জোগাড় করে আনার বিষয়টি প্রমান করেছে সন্তানের প্রতি মায়ের অকৃত্রিম ভালোবাসা। এখন তাদের রক্তের সম্পর্কের দেখাশুনা করার মত আর কেউ নেই। শুধুমাত্র মা জোসনায় তাদের একমাত্র ভরসা। তিনটি জীবন বেঁচে আছে ঠিকই, কিন্ত অসহায়ত্বের সর্বনিম্ন স্তরে থেকে অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন তাদের।
মা জোসনা অধিকারী জানান, ২৫ বছর অগে তার স্বামী মারা গেছে। আমি নিজেও শারীরিকভাবে অসুস্থ। ৩ সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে মধুমালাকে বিয়ে দিয়েছেন। মেজো মেয়ে প্রমিলা ও ছেলে দুখিরাম দুজনেই বুদ্ধি প্রতিবন্ধি। তারা নিজেদের মত করে চলতে পারে না। আবার সংসারে তাদের আয় রোজগারেরও কেউ নেই।
তিনি বলেন, প্রতিবন্ধি ভাতা পান, কিন্ত নিজেদের ঔষধ কিনতেই অধিকাংশ টাকা ব্যয় হয়ে যায়। এখন ওদের মা বাবা দুটিই আমি। একদিকে নিজের শরীর চলে না তারপরও দেখাশুনা থেকে শুরু করে তাদের জন্য গ্রাম ঘুরে খাবার সংগ্রহ করেন। ৩ জনের মধ্যে কর্মক্ষম কেউ না থাকায় মানুষের কাছে হাত পাততে হয়।
তিনি আরও বলেন, এলাকার মানুষ আমাদের প্রতি সদয় বলেই এখনও বেঁচে আছি। এখন নিজের বয়স হয়ে গেছে। নিজের চলাফেরাতেও কষ্ট হয়। কিন্ত আমি মরে গেলে ওদের দেখবে কে সারাক্ষন সেই চিন্তায় করি।
প্রতিবেশি স্কুল শিক্ষক রবিউল ইসলাম জানান, প্রমিলা দুখিরামদের বাড়িতে গেলে তাদের কষ্টের নমুনা দেখা যাবে। বৃদ্ধা মায়ের শরীর চলে না। তবুও তার ঘাড়ে দুই বুদ্ধি প্রতিবন্ধি সন্তান। গ্রামের মানুষ তাদের প্রতি সদয় আছে ঠিকই কিন্ত কে কার কয়দিন দেখতে পারে।
ইউপি সদস্য ইমদাদুল ইসলাম জানান, আসলে অভিভাবকহীন হতদরিদ্র ওই পরিবারটি অত্যন্ত অসহায়। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে তাদের। অন্যদিকে অসুস্থ বৃদ্ধা মা একদিকে তাদের দেখভাল করছেন। অন্যদিকে বাড়ি বাড়ি ঘুরে তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করছেন।
তিনি বলেন, ইউপি সদস্য হিসেবে তিনি সাধ্যমত তাদেরকে সহযোগীতা করেছেন। তবে এখনকার দিনে বৃদ্ধা মায়ের পক্ষে তিন জনের জীবন চালানো অত্যন্ত কষ্টকর ব্যাপার।