সার্ভেয়ার মুক্তারের বিরুদ্ধে খাস পুকুর লীজে দুর্নীতর অভিযোগ
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১০:২২:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ জুলাই ২০২৪ ১১৭ বার পড়া হয়েছে
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার (ভারপ্রাপ্ত কাননগো) মোক্তারুজ্জামান মুক্তারের বিরুদ্ধে সরকারী খাস পুকুর লীজ প্রদানে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তার দুর্নীতি ও অনিয়মের ফলে যেমন সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয়, তেমনি উপজেলার সাধারন মৎস্যচাষীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
মুক্তারের ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের ব্যাপারে সুষ্ঠ তদন্তসহ সুবিচারের দাবিতে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছে গোদাগাড়ী উপজেলার নারায়ন পুর গ্রামের ইসমাইল হোসেন।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, গোদাগাড়ী উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার সরকারী খাস পুকুর রয়েছে। এ খাস পুকুর থেকে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় হওয়ার কথা থাকলেও মোক্তারুজ্জামানের দুর্নীতি পরায়ন স্বার্থের কারনে তা সম্ভব হচ্ছে না। বাংলা ১৪৩১ হতে ১৪৩৩( ১ম পর্যায়) মেয়াদে অনলাইন পদ্ধতিতে দাখিলকৃত দরপত্রের মধ্যে মোট ২৫ টি খাস পুকুর অনুমোদন দেয় উপজেলা ভুমি অফিস তথা উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি।
প্রথম পর্যায়ে যে সকল পুকুর লীজ প্রদান করা হয়নি সেগুলো ২য় পর্য়ায়ে ১৮ এপ্রিল স্বাক্ষরিত একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত তালিকায় পুকুরের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৭শ” ৪৯ টি। এই তালিকার বিপরীতে দাখিলকৃত দরপত্র যাচাই বাচাই করে উপজেলা ভুমি অফিস তথা উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি ৩০ মে তারিখের স্বাক্ষর দেখিয়ে ২০ জুন ফলাফল তালিকা প্রকাশ করেন। যাতে ফলাফলের বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নিকট যাতে আপিল করা না যায়। সরকারী মুল্য নির্ধারণপূর্বক প্রকাশিত তালিকার সাথে অনুমোদিত তালিকায় সরকারী মুল্যের কোন নিয়ম পরিপালন করা হয়নি।
প্রকাশিত তালিকায় ২৪৬৮ নং ক্রমিকে বর্নিত গোগ্রাম ইউনিয়নের সেখপুর মৌজার জেএল নং ৩১৯, দাগ নং ৯, পরিমান ২.৩০ একর পুকুরটি সরকারী মুল্য নির্ধারন করা হয়েছিল ৪লক্ষ ১১ হাজার টাকা। চুড়ান্ত ফলাফল তালিকায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে মাত্র ৭ হাজার ৫শ” টাকায়। একই মোজার দাগ নং ৪৫ পরিমান ৩.৯১ পুকুরটি সরকারী মুল্য নির্ধারন করা হয়েছিল ৭লক্ষ ১১ হাজার টাকা। চুড়ান্ত ফলাফল তালিকায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে মাত্র ১৫ হাজার টাকায়। মুক্তারের কৌশল ছিল বড় পুকুর গুলো সরকারী মুল্য বেশী নির্ধারন করা। যাতে কেউ ওই পুকুর গুলোতে দরপত্র জমা না দেয়। পরে মুক্তার আগে থেকেই কন্টাক করা ব্যাক্তিদের কম মুল্যে দিতে পারে।
এছাড়াও প্রকাশিত তালিকায় ক্রমিক নং ১৪২৫, মোজা সাগুয়ান , জেএল ২১৪ পরিমান ০.৯৯ পুকুরটি একবছওে ইজারা মুল্য ৯৪ হাজার ৫শ’ টাকা দেখানো হলেও মন্তবের কলামে মামলা সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা উলেখ থাকলেও অনুমোদন তালিকায় ৩০৩ ক্রমিক নং এ ৫ হাজার টাকা বাৎসরিক দরে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তিরিন্দা মোজায় জেএল নং ২৫৬, দাগ ৫১, পরিমান ২.৫৪ পুকুরটি লজি প্রকাশিত তালিকায় মামলার কোন বিবরন না থাকলেও অনুমোদন তালিকায় মামলার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে মর্মে দরপত্র বাতিল করা হয়েছে।
১৪৩১ হতে ১৪৩৩ ( ২য় পর্যায়) নারায়নপুর মোজার জেএল নং ৫৮, দাগ ৪০, পরিমান ১.১০, দোগাছি মোজার জেএল নং ৭১, দাগ ২১৩, পরিমান ১.৪৪, গোপালপুর মোজার জেএল নং ৯৪, দাগ ৭৬ পরিমান ২.৩৮, কৃষ্টবাটি মোজার জেএল নং ২৭৪, দাগ ৫৭, পরিমান ৩.০৪ পুকুরসহ বেশ কিছু পুকুর লীজ তালিকার বাইরে রেখে চুড়ান্ত ফলাফল তালিকায় নামমাত্র মূল্যে তা লীজ অনুমোদন দেখান।
এমনকি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতিমালায় স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে প্রকৃত নিবন্ধিত সমিতির নিকট সরকারী খাস পুকুর যথাযথ প্রক্রিয়ায় লীজ প্রদান করতে হবে। অথচ উপজেলা সমবায় অফিস থেকে নিবন্ধন প্রাপ্ত নয় এমন সমিতিকে অর্থের বিনিময়ে সরকারী খাস পুকুর অনুমোদন দিয়েছে।
উপজেলার প্রায় ২০০টি খাস পুকুর তালিকা বহির্ভুতভাবে চুক্তিনামা দলিল সম্পাদন কওে দিয়েছে অর্থেও বিনিময়ে।
সার্ভেয়ার (ভারপ্রাপ্ত কাননগো) মোক্তারুজ্জামান মুক্তার ২০২১ সালে হতে গোদাগাড়ী উপজেলা ভুমি অফিসে কর্মরত আছে। সেই সময় থেকে খাস পুকুরের ফাইল নিয়ন্ত্রন করে আসছে। সেই সুবাদে পুকুর সিন্ডিকেটের লোক জনের সাথে আতাআত করে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে মুক্তার তার নিজ গ্রাম সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলায় বহুতল বাড়ীসহ নামে-বেনামে কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন সে।
১৪৩১ হতে ১৪৩৩ সন ( ২য় পর্যায়) অনুমোদিতখাস পুকুর গুলো চুক্তিনামা দলিল সম্পাদন করার সময় দলিল প্রতি ১ হাজার টাকা কওে ঘুষ নিয়ে প্রায় ৭ শ” দলিল থেকে ৭ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়েছে বলে মুক্তারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগে রয়েছে।
এ বিষয়ে গোদাগাড়ী উপজেলার ভুমি অফিসের সার্ভেয়ার (ভারপ্রাপ্ত কাননগো) মোক্তারুজ্জামানের সাথে মোবাইল ফোনে কয়েক বার যোগাযোগ করা হলেও সে মোবাইল ফোণন রিসিভ না করে লাইন কেটে দেন। যার ফলে এ বিষয়ে তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গোদাগাড়ী উপজেলার সহকারী কমিশরার (ভুমি) মোঃ জাহিদ হাসানের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযো করা হলে তিনি বলেন , এ বিষয়ে আমি কোন অভিযোগ পাইনি। পেলে অভিযোগ কি দেখে এ বিষয়ে বলতে পারবো।
এ বিষয়ে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবুল হায়াত বলেন, বিষয়টি আমি জানিনা। জেনে বলবো।