ঢাকা ০৮:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সফুরা বেগমের এক জীবনের গল্প

মো: বিপ্লব, রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও)
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৬:২৭:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫ ৬ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার রাউত নগর এক প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা সফুরা বেগম। তার ছোট্ট একখন্ড জমি, যেখানে তিনি সারা বছর ফসল ফলানোর চেষ্টা করেন। স্বামী হারিয়েছেন অনেক আগেই, সন্তানদের নিয়ে তার জীবন যুদ্ধের গল্প যেন শেষ হবার নয়। খরার সময় পানির অভাবে তার জমি ফেটে যায়, আর বর্ষার সময় সেই জমিতেই বন্যার পানি ঢুকে ধানের চারা মরে যায়। উত্তরবঙ্গে উন্নত সেচ ব্যবস্থা নেই, পাকা রাস্তা নেই, আর বিদ্যুতের অবস্থা তো আজও নড়বড়ে।

সফুরার মতো হাজারো মানুষ দিনরাত সংগ্রাম করছে বেঁচে থাকার জন্য, কিন্তু উন্নয়নের ছোঁয়া তাদের নাগালের বাইরে এখনো তার বাড়ি মাটির ঘর সন্তানের খাবার জোগাড় করতে পারেনি তাই সন্তান কাজের সন্ধানে রাজধানীর সহ বিভিন্ন জেলায় কাজ করে চলে সফুরা সংসার । আজ যদি উওরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় হতো কলকারখানা সফুরা আর সন্তান বিভিন্ন জেলায় যেতো হতোনা কাজের খোঁজে। মায়ের সাথে থাকতে পারতো সন্তান।

এক সময় এই অঞ্চলকে বলা হতো ‘ধানের দেশ, যেখানকার প্রতিটি গ্রাম কৃষির সোনালী সম্ভাবনায় ভরপুর ছিল। ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, রংপুর, দিনাজপুরের প্রতিটি মাঠ একসময় কৃষকের কন্ঠে ভরে থাকতো শস্য ফলনের গান দিয়ে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় উত্তরবঙ্গের মানুষ যেন আজ এক অবহেলার বলি। উন্নয়নের দৌড়ে এই অঞ্চল পড়ে গেছে অনেক পেছনে, যেন শহরের কোলাহল থেকে দূরে কোনো এক নীরব আক্ষেপের সাগরে ডুবে আছে।

অপেক্ষার প্রহর: উত্তরবঙ্গের মানুষ আজও অপেক্ষায় আছে, একটি রাস্তা যেন মসৃণ হয়, স্কুলগুলোতে যেন পর্যাপ্ত শিক্ষক থাকে, চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোতে ভালো সেবা পাওয়া যায়। বড় বড় শহরের আলো-ঝলমলে জীবন যখন টেলিভিশনের পর্দায় ভেসে ওঠে, তখন উত্তরবঙ্গের গ্রামে বসে একজন বৃদ্ধ কৃষক চুপচাপ সেই দৃশ্য দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তার চোখে হয়তো জল আসে, মনে পড়ে যায় তার ছেলে কাজের খোঁজে ঢাকা গেছে, আর ফিরতে পারছে না। কারণ এখানে কাজ নেই, শিল্প নেই।

একটি উন্নয়নশীল স্বপ্ন: আমরা যারা উত্তরবঙ্গের সন্তান, আমাদের বুকেও আছে এক অদম্য স্বপ্ন। আমরা চাই আমাদের সন্তানরা ভালো স্কুলে পড়ুক, চিকিৎসার জন্য ঢাকায় না গিয়ে এখানেই সুস্থ হয়ে উঠুক। আমাদের মাটিতে যেন শিল্প স্থাপন হয়, যেন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়। শুধু তাই নয়, আমরা চাই আমাদের মাটির গন্ধ যেন দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ে, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের ঐতিহ্য, সব যেন একটি স্বপ্নময় উন্নয়ন গল্পে পরিণত হয়।

সরকারের কাছে দাবি: উত্তরবঙ্গ আজও সেই উন্নয়নের প্রতীক্ষায় দিন কাটাচ্ছে। মানুষের দাবি অবিলম্বে এই অঞ্চলকে প্রাধান্য দিন। অবকাঠামো উন্নয়ন, আধুনিক সেচ ব্যবস্থা, শিক্ষার প্রসার, স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন, এগুলো ছাড়া উত্তরবঙ্গের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, চাই কার্যকর পদক্ষেপ। উত্তরবঙ্গের মানুষ আজও স্বপ্ন দেখে, তাদের সন্তানদের জন্য একটি আলোকিত ভবিষ্যৎ।

উত্তরবঙ্গ আমাদের গর্ব, কিন্তু এই গর্বকে সমৃদ্ধ করতে হলে চাই সরকারের বিশেষ নজর। এখনই সময় উত্তরবঙ্গকে উন্নয়নের মূল স্রোতে যুক্ত করার। নয়তো আমরা হারিয়ে ফেলব একটি সম্ভাবনাময় অঞ্চলকে, যেটি একদিন সারা দেশের অর্থনীতির ভিত্তি হতে পারত।

এই গল্প শুধু সফুরা বেগমের নয়, এটি উত্তরবঙ্গের প্রতিটি পরিবারের গল্প। উন্নয়নহীনতার যন্ত্রণায় ভুগতে থাকা মানুষগুলোর কণ্ঠস্বর যেন আজ দেশের সরকার ও নীতিনির্ধারকদের কানে পৌঁছে যায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

সফুরা বেগমের এক জীবনের গল্প

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৬:২৭:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫

ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার রাউত নগর এক প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা সফুরা বেগম। তার ছোট্ট একখন্ড জমি, যেখানে তিনি সারা বছর ফসল ফলানোর চেষ্টা করেন। স্বামী হারিয়েছেন অনেক আগেই, সন্তানদের নিয়ে তার জীবন যুদ্ধের গল্প যেন শেষ হবার নয়। খরার সময় পানির অভাবে তার জমি ফেটে যায়, আর বর্ষার সময় সেই জমিতেই বন্যার পানি ঢুকে ধানের চারা মরে যায়। উত্তরবঙ্গে উন্নত সেচ ব্যবস্থা নেই, পাকা রাস্তা নেই, আর বিদ্যুতের অবস্থা তো আজও নড়বড়ে।

সফুরার মতো হাজারো মানুষ দিনরাত সংগ্রাম করছে বেঁচে থাকার জন্য, কিন্তু উন্নয়নের ছোঁয়া তাদের নাগালের বাইরে এখনো তার বাড়ি মাটির ঘর সন্তানের খাবার জোগাড় করতে পারেনি তাই সন্তান কাজের সন্ধানে রাজধানীর সহ বিভিন্ন জেলায় কাজ করে চলে সফুরা সংসার । আজ যদি উওরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় হতো কলকারখানা সফুরা আর সন্তান বিভিন্ন জেলায় যেতো হতোনা কাজের খোঁজে। মায়ের সাথে থাকতে পারতো সন্তান।

এক সময় এই অঞ্চলকে বলা হতো ‘ধানের দেশ, যেখানকার প্রতিটি গ্রাম কৃষির সোনালী সম্ভাবনায় ভরপুর ছিল। ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, রংপুর, দিনাজপুরের প্রতিটি মাঠ একসময় কৃষকের কন্ঠে ভরে থাকতো শস্য ফলনের গান দিয়ে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় উত্তরবঙ্গের মানুষ যেন আজ এক অবহেলার বলি। উন্নয়নের দৌড়ে এই অঞ্চল পড়ে গেছে অনেক পেছনে, যেন শহরের কোলাহল থেকে দূরে কোনো এক নীরব আক্ষেপের সাগরে ডুবে আছে।

অপেক্ষার প্রহর: উত্তরবঙ্গের মানুষ আজও অপেক্ষায় আছে, একটি রাস্তা যেন মসৃণ হয়, স্কুলগুলোতে যেন পর্যাপ্ত শিক্ষক থাকে, চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোতে ভালো সেবা পাওয়া যায়। বড় বড় শহরের আলো-ঝলমলে জীবন যখন টেলিভিশনের পর্দায় ভেসে ওঠে, তখন উত্তরবঙ্গের গ্রামে বসে একজন বৃদ্ধ কৃষক চুপচাপ সেই দৃশ্য দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তার চোখে হয়তো জল আসে, মনে পড়ে যায় তার ছেলে কাজের খোঁজে ঢাকা গেছে, আর ফিরতে পারছে না। কারণ এখানে কাজ নেই, শিল্প নেই।

একটি উন্নয়নশীল স্বপ্ন: আমরা যারা উত্তরবঙ্গের সন্তান, আমাদের বুকেও আছে এক অদম্য স্বপ্ন। আমরা চাই আমাদের সন্তানরা ভালো স্কুলে পড়ুক, চিকিৎসার জন্য ঢাকায় না গিয়ে এখানেই সুস্থ হয়ে উঠুক। আমাদের মাটিতে যেন শিল্প স্থাপন হয়, যেন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়। শুধু তাই নয়, আমরা চাই আমাদের মাটির গন্ধ যেন দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ে, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের ঐতিহ্য, সব যেন একটি স্বপ্নময় উন্নয়ন গল্পে পরিণত হয়।

সরকারের কাছে দাবি: উত্তরবঙ্গ আজও সেই উন্নয়নের প্রতীক্ষায় দিন কাটাচ্ছে। মানুষের দাবি অবিলম্বে এই অঞ্চলকে প্রাধান্য দিন। অবকাঠামো উন্নয়ন, আধুনিক সেচ ব্যবস্থা, শিক্ষার প্রসার, স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন, এগুলো ছাড়া উত্তরবঙ্গের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, চাই কার্যকর পদক্ষেপ। উত্তরবঙ্গের মানুষ আজও স্বপ্ন দেখে, তাদের সন্তানদের জন্য একটি আলোকিত ভবিষ্যৎ।

উত্তরবঙ্গ আমাদের গর্ব, কিন্তু এই গর্বকে সমৃদ্ধ করতে হলে চাই সরকারের বিশেষ নজর। এখনই সময় উত্তরবঙ্গকে উন্নয়নের মূল স্রোতে যুক্ত করার। নয়তো আমরা হারিয়ে ফেলব একটি সম্ভাবনাময় অঞ্চলকে, যেটি একদিন সারা দেশের অর্থনীতির ভিত্তি হতে পারত।

এই গল্প শুধু সফুরা বেগমের নয়, এটি উত্তরবঙ্গের প্রতিটি পরিবারের গল্প। উন্নয়নহীনতার যন্ত্রণায় ভুগতে থাকা মানুষগুলোর কণ্ঠস্বর যেন আজ দেশের সরকার ও নীতিনির্ধারকদের কানে পৌঁছে যায়।