ঢাকা ০৮:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সচিবালয়ের সামনে অনশনে জবি শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৭:৫৩:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫ ৭৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা তিন দাবি পূরণে সচিবালয়ের সামনে অনশনে বসেছেন। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বিকেল পৌনে ৫টা থেকে তারা এ কর্মসূচি শুরু করেন।

শিক্ষার্থীরা বলছেন,  আমরা এক ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছিলাম অঙ্গীকারের লিখিত চিঠি নিয়ে আসতে। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে কোনো চিঠি আসেনি। ফলে পূর্বঘোষিত আলটিমেটাম অনুযায়ী আমরা সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছি। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।

এর আগে এদিন অনশনরত শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দেন দুপুর দেড়টার মধ্যে মন্ত্রণালয় ও সেনা কর্মকর্তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে না বসলে সচিবালয় ঘেরাও করবেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে তাৎক্ষণিক এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের জবি শাখার সভাপতি এ কে এম রাকিব।

রোববার তিন দফা আন্দোলনে অনশন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি- দ্বিতীয় ক্যাম্পাস সেনাবাহিনীকে হস্তান্তর; শিক্ষার্থীদের অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা এবং অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত অন্তত ৭০ ভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ভাতার ব্যবস্থা করা।

রাতে আন্দোলনকারীদের ১৪ জন অসুস্থ হয়ে পড়েন, যাদেরকে বিভিন্ন হাসপাতালে দেখতে যান উপাচার্য রেজাউল করিম। তখন তিনি অনশন ভাঙার অনুরোধ করলে ফের তা নাকচ করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর গভীররাতে সংহতি জানাতে অনশনস্থলে আসেন শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের অর্ধশতাধিক ছাত্রী। এরপর আজ সকালে শিক্ষার্থীরা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে নামেন।

২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে আবাসিক হলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মাসব্যাপী আন্দোলনের মুখে কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের সিদ্ধান্ত জানায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার।

অ্যাকাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, আবাসন ব্যবস্থা, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, ক্যাফেটেরিয়া, খেলার মাঠ, চিকিৎসা কেন্দ্র, সুইমিংপুল, লেক নির্মাণসহ উন্নতমানের ক্যাম্পাস তৈরির মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে তেঘরিয়ার পশ্চিমদি মৌজায় ২০০ একর ভূমি অধিগ্রহণের অনুমোদন দেওয়া হয়।

২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর জমির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়। ৯ অক্টোবর নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনে ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়নের জন্য প্রকল্প অনুমোদন করে একনেক। এক হাজার ৯২০ কোটি ৯৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের অক্টোবরের মধ্যে।

পরের বছর ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি মোট ২০০ একর জমির মধ্যে ১৮৮ দশমিক ৬০ একর জমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বুঝে পায়। কিন্তু এখনও অবশিষ্ট ১১ দশমিক ৪০ একর জমি বুঝে পায়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

গত আগস্টে ক্ষমতার পালাবদলের পর দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের নির্মাণ কাজের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে দেওয়াসহ তিন দাবিতে আন্দোলনে নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গত ৫ নভেম্বর তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন।

এরপর ১১ নভেম্বর ইউজিসি প্রস্তাবিত পাইলট প্রকল্পে জগন্নাথের বিষয়টি অন্তর্ভুক্তিসহ ৫ দাবিতে সচিবালয় ‘ঘোরাও করেন’ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

সেদিন শিক্ষা সচিবের সঙ্গে দেখা করতে না পেরে তারা সচিবালয়ের বাইরে অবস্থান নেন। এরপর তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম তিন দিন সময় চাইলে সচিবালয়ের সামনের অবস্থান থেকে সরে যান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের মুখে পরদিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের নির্মাণ কাজ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তরে সায় দেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

এরপর দুই মাস পেরিয়ে গেলেও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় অনশনের ডাক গত সপ্তাহে দিয়ে রাখেন শিক্ষার্থীরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

সচিবালয়ের সামনে অনশনে জবি শিক্ষার্থীরা

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৭:৫৩:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা তিন দাবি পূরণে সচিবালয়ের সামনে অনশনে বসেছেন। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বিকেল পৌনে ৫টা থেকে তারা এ কর্মসূচি শুরু করেন।

শিক্ষার্থীরা বলছেন,  আমরা এক ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছিলাম অঙ্গীকারের লিখিত চিঠি নিয়ে আসতে। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে কোনো চিঠি আসেনি। ফলে পূর্বঘোষিত আলটিমেটাম অনুযায়ী আমরা সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছি। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।

এর আগে এদিন অনশনরত শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দেন দুপুর দেড়টার মধ্যে মন্ত্রণালয় ও সেনা কর্মকর্তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে না বসলে সচিবালয় ঘেরাও করবেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে তাৎক্ষণিক এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের জবি শাখার সভাপতি এ কে এম রাকিব।

রোববার তিন দফা আন্দোলনে অনশন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি- দ্বিতীয় ক্যাম্পাস সেনাবাহিনীকে হস্তান্তর; শিক্ষার্থীদের অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা এবং অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত অন্তত ৭০ ভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ভাতার ব্যবস্থা করা।

রাতে আন্দোলনকারীদের ১৪ জন অসুস্থ হয়ে পড়েন, যাদেরকে বিভিন্ন হাসপাতালে দেখতে যান উপাচার্য রেজাউল করিম। তখন তিনি অনশন ভাঙার অনুরোধ করলে ফের তা নাকচ করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর গভীররাতে সংহতি জানাতে অনশনস্থলে আসেন শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের অর্ধশতাধিক ছাত্রী। এরপর আজ সকালে শিক্ষার্থীরা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে নামেন।

২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে আবাসিক হলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মাসব্যাপী আন্দোলনের মুখে কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের সিদ্ধান্ত জানায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার।

অ্যাকাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, আবাসন ব্যবস্থা, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, ক্যাফেটেরিয়া, খেলার মাঠ, চিকিৎসা কেন্দ্র, সুইমিংপুল, লেক নির্মাণসহ উন্নতমানের ক্যাম্পাস তৈরির মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে তেঘরিয়ার পশ্চিমদি মৌজায় ২০০ একর ভূমি অধিগ্রহণের অনুমোদন দেওয়া হয়।

২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর জমির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়। ৯ অক্টোবর নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনে ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়নের জন্য প্রকল্প অনুমোদন করে একনেক। এক হাজার ৯২০ কোটি ৯৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের অক্টোবরের মধ্যে।

পরের বছর ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি মোট ২০০ একর জমির মধ্যে ১৮৮ দশমিক ৬০ একর জমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বুঝে পায়। কিন্তু এখনও অবশিষ্ট ১১ দশমিক ৪০ একর জমি বুঝে পায়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

গত আগস্টে ক্ষমতার পালাবদলের পর দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের নির্মাণ কাজের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে দেওয়াসহ তিন দাবিতে আন্দোলনে নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গত ৫ নভেম্বর তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন।

এরপর ১১ নভেম্বর ইউজিসি প্রস্তাবিত পাইলট প্রকল্পে জগন্নাথের বিষয়টি অন্তর্ভুক্তিসহ ৫ দাবিতে সচিবালয় ‘ঘোরাও করেন’ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

সেদিন শিক্ষা সচিবের সঙ্গে দেখা করতে না পেরে তারা সচিবালয়ের বাইরে অবস্থান নেন। এরপর তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম তিন দিন সময় চাইলে সচিবালয়ের সামনের অবস্থান থেকে সরে যান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের মুখে পরদিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের নির্মাণ কাজ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তরে সায় দেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

এরপর দুই মাস পেরিয়ে গেলেও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় অনশনের ডাক গত সপ্তাহে দিয়ে রাখেন শিক্ষার্থীরা।