শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে কাফনের কাপড় বেঁধে শপথ
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৩:৫৪:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৪ ৫১ বার পড়া হয়েছে
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নিজ নির্বাচনী এলাকা। এই আসন থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা ৮ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এখান থেকে নির্বাচিত হয়েই তিনি ৫ বার প্রধানমন্ত্রী ও ৩ বার বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি নির্বাচনী এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। সৃষ্টি করেছেন কর্মসংস্থান। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে এলাবাসীর রয়েছে আত্মার সম্পর্ক। শেখ হাসিনাও নির্বাচনী এলাকার মানুষকে প্রণের অধিক ভালবাসতেন। তার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা অবিচল।
সোমবার (৫ আগস্ট) তিনি পদত্যাগ করার পর সাধারণ মানুষ হতভম্ব হয়ে পড়েন। সারাদেশে আওয়ামী লীগ অফিস ভাংচুর অগ্নিসংযোগ। নেতা কর্মীর বাড়িঘরে আগুণ দেওয়া লুটপাট, সাংখ্যালঘু নির্যাতন, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, ভাস্কর্য গুড়িয়ে দেওয়া ও ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটি পুড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ গত সোমবার থেকে শুরু হয় গোপালগঞ্জ থেকে। এদিন জেলা আওয়ামী লীগ শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) জেলা আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা জানিয়ে শপথ বাক্য পাঠ করেন। বুধবার (৭ আগস্ট) টুঙ্গিপাড়া উপজেলা সদরে ২০ হাজার মানুষ শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে মিছিল ও সমাবেশ করে। পরে তারা বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে শপথ বাক্য পাঠ করেন। এছাড়া বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) গোপালগঞ্জ ও কাশিয়ানী উপজেলায় বিক্ষোভ সমাবেশে হয়েছে।
শুক্রবার (৯ আগস্ট ) গোপালগঞ্জ শহরে সকালে ও সন্ধ্যায় এবং মুকসুদপুর উপজেলার গোহালা ও ভারাসুর ইউনিয়নে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন।
শনিবার (১০ আগস্ট) আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে কোটালীপাড়ায় মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে শপথ গ্রহণ করেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতা-কর্মী, মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ। এতে লক্ষাধিক মানুষ জমায়েত হন ।
এদিন দুপুরে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের সামনে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাবুব আলী খান নেতা-কর্মীদের শপথ বাক্য পাঠ করান।
এ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জি এম শাহাবুদ্দিন আজম, কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ভবেন্দ্রনাথ বিশ^াস, সাধারণ সম্পাদক আয়নাল হোসেন শেখ, সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান হাওলাদার, গোলাম কিবরিয়া দাড়িয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এইচ এম অহিদুল ইসলাম, কামাল হোসেন শেখ, সাংগঠনিক সম্পাদক মতিয়ার রহমান হাজরা, কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট নিখিল দত্ত, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান দেব দুলাল বসু পল্টু, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ফজলুর রহমান দিপু, সাধারণ সম্পাদক বাবুল হাজরা, সহসভাপতি নজরুল ইসলাম হাজরা মন্নু, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি খায়রুল রাজ্জাক খসরু, সাধারণ সম্পাদক বাবলু হাজরা, উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম তালুকদার, উপজেলা ছাত্র লীগের সাবেক সভাপতি মেহেদী হাসান মুনসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মী সহ লাখ জনতা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার সব ওয়ার্ড থেকে খন্ড খন্ড মিছিল সহকারে লাঠি, বৈঠা নিয়ে নেতা-কর্মীরা উপজেলা পরিষদ চত্ত¡রে এসে সমাবেত হয়। সকাল ১১টায় বিক্ষোভ মিছিল শুরুর কথা থাকলেও সকাল ৯টার মধ্যে উপজেলা পরিষদ মাঠসহ এর আশ পাশের এলাকা সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে জনঅরণ্যে পরিনত হয়। বন্ধ হয়ে যায় গোপালগঞ্জ-পয়সারহাট, কোটালীপাড়া-সাতলা, কোটালীপাড়া-রাজৈর সড়কে যানবাহন চলাচল।
সকাল ১১টায় উপজেলা পরিষদ চত্ত¡রে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালের সামনে দাড়িয়ে জেলা আওয়ামী
লীগের সভাপতি মাহাবুব আলী খান নেতা-কর্মীদের শপথ বাক্য পাঠ করান।
সকাল ৯ টা থেকে লাখো নেতা-কর্মী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার শ্লোগানে শ্লোগানে উপজেলা পরিষদ চত্ত¡র ও এর আশ পাশের এলাকা মুখরিত করে তোলেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাবুব আলী খান বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যতদিন দেশে ফিরে না আসবে ততোদিন আমাদের এই সংগ্রাম চলবে। আমরা রাজপথে আছি, রাজপথেই থাকবো।
তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা কেউ মনোবল হারাবেন না। আমাদের প্রিয় নেত্রী খুব শীঘ্রই দেশে ফিরে এসে এই দলের হাল ধরবেন।
কোটালীপাড়া উপজেলার ধারাবাসইল গ্রামের আলী আহম্মেদ, কলাবাড়ি গ্রামের বলাই অধিকারী, লাখিরপাড় গ্রামের সালমান হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আমাদের একামাত্র অভিভাবক। তিনি আমাদের প্রণের সম্পন্দন। তিনি আমাদের জন্য জন্য সবকিছু করেছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় আমাদের খোঁজ খবর রাখেন। তিনি দেশে নেই, এটা ভাবতেই আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। তিনি আমাদের প্রণের চেয়েও বেশি ভালবাসেন। অন্যরা ক্ষমতায় আসলে আমরা বৈষম্যের শিকার হই। আমরা উন্নয়ন ও চাকরি থেকে বঞ্চিত হই। তাই তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে আমরা সাধারণ মানুষ রাজপথে নেমেছি। তাকে দেশে ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব।