ঢাকা ১০:৩৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রংপুরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট

রায় বাতিল, রাষ্ট্রের কাছে ক্ষতিপূরণ চান আপীলকারী

আদালত প্রতিবেদক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৪:৩৬:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ অগাস্ট ২০২৪ ৪৫ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

টাঙ্গাইলের ১ নম্বর যুগ্ম দায়রা জজ আদালতের সাবেক বিচারক ও বর্তমানে রংপুরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুরুজ সরকারের দেয়া একটি বহুল আলোচিত রায় বাতিল করেছেন টাঙ্গাইলের জেলা ও দায়রা জজ আদালত।

জানা গেছে, করোনা মহামারীকালে ২০২১ সালের ২১ জুন আদালত আসামির জামিন বাতিল করে ও তাকে পলাতক দেখিয়ে ও তার নিয়োজিত আইনজীবীর অনুপস্থিতিতে শুধু বাদীর জবানবন্দি নেন। এ ছাড়া আসামিপক্ষকে জেরা করার সুযোগ না দিয়ে, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় পরীক্ষা না করে এবং যুক্তিতর্কের জন্য তারিখ ধার্য না করেই ২০২১ সালের ৩০ জুন মামলায় একতরফাভাবে রায় ও আদেশ দেন। রায়ে আসামিকে এক বছরের সাজা ও ২১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেন। আসামি মো. মাহফুজুলের বিরুদ্ধে সাজা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকায় ২০২২ সালের ১৪ জানুয়ারি খিলক্ষেত থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়। এরপর ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর মাহফুজুল আপিলের শর্তে জামিন লাভ করেন। তিনি জামিনে বেরিয়ে টাঙ্গাইলের দায়রা জজ আদালতে আপিল করেন (যার নম্বর ৫৫৫/২০২২)। আপীল শুনানি শেষে টাঙ্গাইলের জেলা ও দায়রা জজ মোঃ নাজিমুদ্দৌলা টাঙ্গাইলের তৎকালীন যুগ্ম দায়রা জজ সুরুজ সরকারের দেয়া রায় ও আদেশ বাতিল করে মামলাটি পুনরায় বিচারের জন্য ( মামলা রিমান্ডে) প্রেরণ করেন। মামলাটি রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন বিজ্ঞ পিপি আকবর আলী খান। আসামি পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার। তাকে সহযোগিতা করেন টাঙ্গাইল জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহানশাহ সিদ্দিকী মিন্টু। মামলার রায় গত ২৭ জুন প্রদান করা হলেও আপীলকারী পক্ষ ২১ আগস্ট রায় ও আদেশের নকল হাতে পান।

এর আগে টাঙ্গাইলের ১ নম্বর যুগ্ম দায়রা জজ আদালতের সাবেক বিচারক ও বর্তমানে রংপুরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুরুজ সরকারের শাস্তি দাবি করে সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ করা হয়। বিগত ১৩ মে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর ঢাকার খিলক্ষেতের বাসিন্দা মো. মাহফুজুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি ওই লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় ২৪টি কাগজ দাখিল করেছেন তিনি।

অভিযোগে বলা হয়েছে, মো. মাহফুজুল ইসলাম টাঙ্গাইলের ১ নম্বর যুগ্ম দায়রা জজ আদালতের দায়রা মামলা নম্বর ২৪৯/২০২১-এর বিবাদী/আসামি/আপিলকারী। জনৈক হাসমত আলী বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ৩ মার্চ টাঙ্গাইলের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৮৮১ সালের এনআই অ্যাক্টের ১৩৮ ধারায় ২০ লাখ টাকার একটি সিআর মামলা (নম্বর ২৮/২০২০) করেন। পরে ২০২০ সালের ১০ নভেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পান তিনি।

মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হলে দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়, যার নম্বর ২৪৯/২০২১। মামলাটি বিচার ও নিষ্পত্তির জন্য টাঙ্গাইলের ১ নম্বর যুগ্ম দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। ২০২১ সালের ২৬ জানুয়ারি অভিযোগকারী মো. মাহফুজুল ইসলাম আদালতে হাজির হয়ে পূর্ব শর্তে জামিন লাভ করেন এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ২৬৫(গ) ধারা অনুযায়ী মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন জানান। তবে আদালত তার আবেদন নামঞ্জুর করে তার বিরুদ্ধে ১৮৮১ সালের এনআই অ্যাক্টের ১৩৮ ধারায় চার্জ গঠন করেন এবং সাক্ষীর জন্য ২০২১ সালের ৭ এপ্রিল দিন ধার্য করেন।

কিন্তু মহামারি করোনার কারণে ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ একই বছরের ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ১১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে। একই তারিখে একই ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করেন টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, ফলে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকে।

সুপ্রিম কোর্ট থেকে ২০২১ সালের ১৯ জুন এক আদেশে একই বছরের ২০ জুন তারিখ থেকে অধস্তন দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত এবং ট্রাইব্যুনালগুলোয় শারীরিক উপস্থিতিতে স্বাভাবিক বিচার কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেন। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত হয়ে টাঙ্গাইল জেলা আইনজীবী সমিতির কয়েকজন আইনজীবী মৃত্যুবরণ করায় ২০ জুন শোকসভা অনুষ্ঠিত হয় এবং আদালতের কার্যক্রম স্থগিত থাকে। পরে ২০ জুন টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ২২ জুন ভোর ৬টা থেকে ২৮ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত টাঙ্গাইল পৌরসভা ও এলেঙ্গা পৌরসভা পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেন। এর প্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ২২ জুন থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকে।

এরপর ২০২১ সালের ১২ আগস্ট তার (মো. মাহফুজুল ইসলাম) নিযুক্তীয় আইনজীবী মামলার তারিখ সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখতে পান আদালতের কজলিস্টে উক্ত মামলা ২০২০ সালের ২১ জুন (প্রকৃতপক্ষে হবে ২০২১ সালের ২১ জুন) তারিখ নির্ধারণ আছে এবং ওই তারিখে আদালত আসামির জামিন বাতিল করে পলাতক দেখিয়ে তার ও তার নিয়োজিত আইনজীবীর অনুপস্থিতিতে শুধু বাদীর জবানবন্দি নেন। এ ছাড়া আসামিপক্ষকে জেরা করার সুযোগ না দিয়ে, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় পরীক্ষা না করে এবং যুক্তিতর্কের জন্য তারিখ ধার্য না করেই ২০২১ সালের ৩০ জুন মামলায় একতরফাভাবে রায় ও আদেশ দেন। রায়ে আসামিকে এক বছরের সাজা ও ২১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১৭ আগস্ট তিনি (মো. মাহফুজুল ইসলাম) টাঙ্গাইল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর টাঙ্গাইলের ১ নম্বর যুগ্ম দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. সুরুজ সরকার কর্তৃক দায়রা মামলা নম্বর ২৪৯/২০২১-এর বিভ্রান্তিমূলক তারিখ নির্ধারণ ও অবৈধ রায় ও আদেশ প্রদানের বিপরীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু আইনজীবী সমিতি কোনও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়নি।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, টাঙ্গাইলের ১ নম্বর যুগ্ম দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. সুরুজ সরকার কর্তৃক দায়রা মামলা নম্বর ২৪৯/২০২১-এর বিভ্রান্তিমূলক তারিখ নির্ধারণ ও অবৈধ রায় ও আদেশের প্রেক্ষিতে তার ৮ মাস পাঁচ দিন কারাগারে থাকতে হয়েছে। এতে তার লাখ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। পাশপাশি শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হয়েছে, যা পুষিয়ে নেওয়া কখনোই সম্ভব নয়।

অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টকে মাহফুজুল বলেন, খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি টাঙ্গাইলের তৎকালীন ১ নম্বর যুগ্ম দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. সুরুজ সরকার বর্তমানে রংপুরে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত আছেন। আমি তার উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি।

বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার বলেন, আদালত হচ্ছে মানুষের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল। বিচারকদের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে কাজ করা উচিত। উক্ত মামলার কাগজপত্র দেখে যে কেউ বুঝতে পারবেন বিচারক ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। করোনা মহামারীকালে যখন সবকিছুই বন্ধ ছিল তখন একদিন সাক্ষী নিয়ে তড়িঘড়ি করে রায় প্রদান যুক্তিসঙ্গত নয়।

এ বিষয়ে মাহফুজুল ইসলাম বলেন,‌ আমার অভিযোগই সত্য প্রমাণিত হলো। আমি বিচারক সুরুজ সরকারের শাস্তি দাবি করছি ও রাষ্ট্রের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

রংপুরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট

রায় বাতিল, রাষ্ট্রের কাছে ক্ষতিপূরণ চান আপীলকারী

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৪:৩৬:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ অগাস্ট ২০২৪

টাঙ্গাইলের ১ নম্বর যুগ্ম দায়রা জজ আদালতের সাবেক বিচারক ও বর্তমানে রংপুরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুরুজ সরকারের দেয়া একটি বহুল আলোচিত রায় বাতিল করেছেন টাঙ্গাইলের জেলা ও দায়রা জজ আদালত।

জানা গেছে, করোনা মহামারীকালে ২০২১ সালের ২১ জুন আদালত আসামির জামিন বাতিল করে ও তাকে পলাতক দেখিয়ে ও তার নিয়োজিত আইনজীবীর অনুপস্থিতিতে শুধু বাদীর জবানবন্দি নেন। এ ছাড়া আসামিপক্ষকে জেরা করার সুযোগ না দিয়ে, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় পরীক্ষা না করে এবং যুক্তিতর্কের জন্য তারিখ ধার্য না করেই ২০২১ সালের ৩০ জুন মামলায় একতরফাভাবে রায় ও আদেশ দেন। রায়ে আসামিকে এক বছরের সাজা ও ২১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেন। আসামি মো. মাহফুজুলের বিরুদ্ধে সাজা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকায় ২০২২ সালের ১৪ জানুয়ারি খিলক্ষেত থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়। এরপর ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর মাহফুজুল আপিলের শর্তে জামিন লাভ করেন। তিনি জামিনে বেরিয়ে টাঙ্গাইলের দায়রা জজ আদালতে আপিল করেন (যার নম্বর ৫৫৫/২০২২)। আপীল শুনানি শেষে টাঙ্গাইলের জেলা ও দায়রা জজ মোঃ নাজিমুদ্দৌলা টাঙ্গাইলের তৎকালীন যুগ্ম দায়রা জজ সুরুজ সরকারের দেয়া রায় ও আদেশ বাতিল করে মামলাটি পুনরায় বিচারের জন্য ( মামলা রিমান্ডে) প্রেরণ করেন। মামলাটি রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন বিজ্ঞ পিপি আকবর আলী খান। আসামি পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার। তাকে সহযোগিতা করেন টাঙ্গাইল জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহানশাহ সিদ্দিকী মিন্টু। মামলার রায় গত ২৭ জুন প্রদান করা হলেও আপীলকারী পক্ষ ২১ আগস্ট রায় ও আদেশের নকল হাতে পান।

এর আগে টাঙ্গাইলের ১ নম্বর যুগ্ম দায়রা জজ আদালতের সাবেক বিচারক ও বর্তমানে রংপুরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুরুজ সরকারের শাস্তি দাবি করে সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ করা হয়। বিগত ১৩ মে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর ঢাকার খিলক্ষেতের বাসিন্দা মো. মাহফুজুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি ওই লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় ২৪টি কাগজ দাখিল করেছেন তিনি।

অভিযোগে বলা হয়েছে, মো. মাহফুজুল ইসলাম টাঙ্গাইলের ১ নম্বর যুগ্ম দায়রা জজ আদালতের দায়রা মামলা নম্বর ২৪৯/২০২১-এর বিবাদী/আসামি/আপিলকারী। জনৈক হাসমত আলী বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ৩ মার্চ টাঙ্গাইলের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৮৮১ সালের এনআই অ্যাক্টের ১৩৮ ধারায় ২০ লাখ টাকার একটি সিআর মামলা (নম্বর ২৮/২০২০) করেন। পরে ২০২০ সালের ১০ নভেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পান তিনি।

মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হলে দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়, যার নম্বর ২৪৯/২০২১। মামলাটি বিচার ও নিষ্পত্তির জন্য টাঙ্গাইলের ১ নম্বর যুগ্ম দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। ২০২১ সালের ২৬ জানুয়ারি অভিযোগকারী মো. মাহফুজুল ইসলাম আদালতে হাজির হয়ে পূর্ব শর্তে জামিন লাভ করেন এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ২৬৫(গ) ধারা অনুযায়ী মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন জানান। তবে আদালত তার আবেদন নামঞ্জুর করে তার বিরুদ্ধে ১৮৮১ সালের এনআই অ্যাক্টের ১৩৮ ধারায় চার্জ গঠন করেন এবং সাক্ষীর জন্য ২০২১ সালের ৭ এপ্রিল দিন ধার্য করেন।

কিন্তু মহামারি করোনার কারণে ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ একই বছরের ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ১১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে। একই তারিখে একই ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করেন টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, ফলে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকে।

সুপ্রিম কোর্ট থেকে ২০২১ সালের ১৯ জুন এক আদেশে একই বছরের ২০ জুন তারিখ থেকে অধস্তন দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত এবং ট্রাইব্যুনালগুলোয় শারীরিক উপস্থিতিতে স্বাভাবিক বিচার কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেন। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত হয়ে টাঙ্গাইল জেলা আইনজীবী সমিতির কয়েকজন আইনজীবী মৃত্যুবরণ করায় ২০ জুন শোকসভা অনুষ্ঠিত হয় এবং আদালতের কার্যক্রম স্থগিত থাকে। পরে ২০ জুন টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ২২ জুন ভোর ৬টা থেকে ২৮ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত টাঙ্গাইল পৌরসভা ও এলেঙ্গা পৌরসভা পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেন। এর প্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ২২ জুন থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকে।

এরপর ২০২১ সালের ১২ আগস্ট তার (মো. মাহফুজুল ইসলাম) নিযুক্তীয় আইনজীবী মামলার তারিখ সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখতে পান আদালতের কজলিস্টে উক্ত মামলা ২০২০ সালের ২১ জুন (প্রকৃতপক্ষে হবে ২০২১ সালের ২১ জুন) তারিখ নির্ধারণ আছে এবং ওই তারিখে আদালত আসামির জামিন বাতিল করে পলাতক দেখিয়ে তার ও তার নিয়োজিত আইনজীবীর অনুপস্থিতিতে শুধু বাদীর জবানবন্দি নেন। এ ছাড়া আসামিপক্ষকে জেরা করার সুযোগ না দিয়ে, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় পরীক্ষা না করে এবং যুক্তিতর্কের জন্য তারিখ ধার্য না করেই ২০২১ সালের ৩০ জুন মামলায় একতরফাভাবে রায় ও আদেশ দেন। রায়ে আসামিকে এক বছরের সাজা ও ২১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১৭ আগস্ট তিনি (মো. মাহফুজুল ইসলাম) টাঙ্গাইল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর টাঙ্গাইলের ১ নম্বর যুগ্ম দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. সুরুজ সরকার কর্তৃক দায়রা মামলা নম্বর ২৪৯/২০২১-এর বিভ্রান্তিমূলক তারিখ নির্ধারণ ও অবৈধ রায় ও আদেশ প্রদানের বিপরীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু আইনজীবী সমিতি কোনও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়নি।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, টাঙ্গাইলের ১ নম্বর যুগ্ম দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. সুরুজ সরকার কর্তৃক দায়রা মামলা নম্বর ২৪৯/২০২১-এর বিভ্রান্তিমূলক তারিখ নির্ধারণ ও অবৈধ রায় ও আদেশের প্রেক্ষিতে তার ৮ মাস পাঁচ দিন কারাগারে থাকতে হয়েছে। এতে তার লাখ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। পাশপাশি শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হয়েছে, যা পুষিয়ে নেওয়া কখনোই সম্ভব নয়।

অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টকে মাহফুজুল বলেন, খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি টাঙ্গাইলের তৎকালীন ১ নম্বর যুগ্ম দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. সুরুজ সরকার বর্তমানে রংপুরে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত আছেন। আমি তার উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি।

বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার বলেন, আদালত হচ্ছে মানুষের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল। বিচারকদের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে কাজ করা উচিত। উক্ত মামলার কাগজপত্র দেখে যে কেউ বুঝতে পারবেন বিচারক ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। করোনা মহামারীকালে যখন সবকিছুই বন্ধ ছিল তখন একদিন সাক্ষী নিয়ে তড়িঘড়ি করে রায় প্রদান যুক্তিসঙ্গত নয়।

এ বিষয়ে মাহফুজুল ইসলাম বলেন,‌ আমার অভিযোগই সত্য প্রমাণিত হলো। আমি বিচারক সুরুজ সরকারের শাস্তি দাবি করছি ও রাষ্ট্রের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।