ঢাকা ০১:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যশোরে হিন্দু বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট

শহিদুল ইসলাম দইচ, যশোর
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৯:১১:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ অগাস্ট ২০২৪ ৮৭ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

যশোরে অর্ধশত হিন্দু বাড়িতে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট এবং ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেল থেকে মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সকাল পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে। এ সব ঘটনার পর ভয়ে অনেকেই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী ও বাড়ির মালিকেরা জানান, সোমবার বিকেলে কয়েক শ লোক বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া বাজারের অন্তত ২৫টি দোকানে চামলা চালায়। এর মধ্যে ২০টি হিন্দুদের দোকান। তারা এ সময় দোকন ভাংচুর এবং দোকানে থাকা সব মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। সন্ধ্যায় তারা সংঘটিত হয়ে বাজারের পাশে অবস্থিত বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের(ইউপি) চেয়ারম্যান বাবলু কুমার সাহার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। এরপর রাতে ১০ থেকে ১২ জন রামদা ও দেশি অস্ত্র নিয়ে নারিকেলবাড়িয়া গ্রামের লিটন কুন্ডুর বাড়ির ঘরের গ্রিল কেটে ঘরে ঢোকে। তারা অস্ত্রের মুখে বাড়ির লোকজনদের জিম্মি করে তিন ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার এবং নগদ দুই হাজার ৭০০ টাকা নিয়ে যান।

মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সকালে একদল লোক একই গ্রামের শিমুল সাহার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। এ সময় তারা বাড়ির লোকজনের নিকট এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এরপর তাঁরা নারিকেলবাড়িয়া বাজারে এসে হিন্দুদের অন্তত তিনটি দোকান ভাংচুর করে।

নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের(ইউপি) চেয়ারম্যান বাবলু কুমার সাহা বলেন, হামলাকারিরা নারিকেলবাড়িয়া বাজারে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে এবং প্রতিষ্ঠানে থাকা মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় বাজারের অন্তত ২৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর ও মালামাল লুট করা হয়। সন্ধ্যায় আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়।

সোমবার রাতে উপজেলার শালবরাট গ্রামের হিন্দুপাড়ায় হামলা চালায় ১০ থেকে ১২ জনের একটি দল। এই পাড়ায় ৬৫টি হিন্দু পরিবার বসবাস করে। মুখে কালো কাপড় বাঁধা এবং হাতে রামদা হাতে তাঁরা পাঁচ থেকে ছয়টি বাড়িতে যায়।

পাড়ার লোকজন জানান, ভয়ে রাতে পাড়ার সবাই পাশের বাগানে কোনোরকমে রাতটুকু পার করেন। মঙ্গলবার সকালে পুরুষেরা পাড়া ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন।

সোমবার সন্ধ্যা থেকে ভোররাত পর্যন্ত বাঘারপাড়া উপজেলার ধলগ্রাম ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের ২০ থেকে ২৫টি হিন্দু বাড়িতে চার দফা হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।

সোমবার ধলগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের(ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান সুভাষ দেবনাথ অভিরামের মানিকদোয়া গ্রামের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে একদল লোক। এ সময় তারা গোয়াল থেকে দুটি গরু নিয়ে যায়। এরপর রাতে একদল লোক আন্ধারকোটা গ্রামের দিপংকর বিশ্বাসের বাড়িতে চারদফা হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। এরপর তারা বাড়ি থেকে চারটি গরু, ২৫টি হাঁস, ১৫টি মুরগি, ৪০টি হাঁসের ডিম, দুই বস্তা চাল এবং একটি বৈদ্যুতিক মোটর নিয়ে যায়।

দিপংকর বিশ্বাস বলেন, খবর পেয়ে হামলার কিছুক্ষণ আগে স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে অন্যত্র চলে এসেছি। বাড়িতে বৃদ্ধ মা-বাবা আছেন। খুব ভয়ে আছি।

সোমবার রাতে উপজেলার নতুনগ্রামের স্বপন কুন্ডু, শেখর ঢালী, বল্লামুখ গ্রামের অরবিন্দু স্বর্ণাকার, অমল স্বর্ণাকার এবং মোহন্ত কুন্ডুর বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর, স্বর্ণালংকার ও মালামাল লুটপাট করা করা হয়। এ ছাড়া, সোমবার গভীর রাতে একদল লোক উপজেলার সুলতাননগর গ্রামের ঋষিপল্লির কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও মালামাল লুট করে।

সোমবার রাতে মনিরামপুর উপজেলার আম্রঝুটা গ্রামের দিলিপ সিংহের বাড়িতে হামলা চালায় একদল লোক। এ সময় তারা দিলিপ সিংহের দোতলা বাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় একদল লোক উপজেলার খাটুয়াডাঙ্গা বাজারে দিলিপ সিংহের দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাংচুর এবং দোকানে থাকা মালামাল নিয়ে যায়

একইদিন বিকেলে একদল লোক অভয়নগর উপজেলার পায়রা ইউনিয়ন পরিষদের(ইউপি) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বারান্দী গ্রামের মনিশংকর রায়ের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর এবং নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে।

এরপর সন্ধ্যায় হামলাকারিরা পায়রা ইউনিয়ন পরিষদের(ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান বারান্দী গ্রামের বিষ্ণুপদ দত্তর বাড়ি ভাংচুর করে এবং বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তারা বারান্দী গ্রামের রবিন বিশ্বাস, যুধিষ্টির বিশ্বাস এবং মহেন বৈরাগীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে।

সোমবার সন্ধ্যায় একদল লোক অভয়নগর উপজেলার ধোপাদী গ্রামের ব্যবসায়ী কৃষ্ণ দত্তের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে এবং স্বর্ণালংকার ও মালামাল লুট করে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

যশোরে হিন্দু বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৯:১১:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ অগাস্ট ২০২৪

যশোরে অর্ধশত হিন্দু বাড়িতে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট এবং ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেল থেকে মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সকাল পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে। এ সব ঘটনার পর ভয়ে অনেকেই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী ও বাড়ির মালিকেরা জানান, সোমবার বিকেলে কয়েক শ লোক বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া বাজারের অন্তত ২৫টি দোকানে চামলা চালায়। এর মধ্যে ২০টি হিন্দুদের দোকান। তারা এ সময় দোকন ভাংচুর এবং দোকানে থাকা সব মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। সন্ধ্যায় তারা সংঘটিত হয়ে বাজারের পাশে অবস্থিত বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের(ইউপি) চেয়ারম্যান বাবলু কুমার সাহার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। এরপর রাতে ১০ থেকে ১২ জন রামদা ও দেশি অস্ত্র নিয়ে নারিকেলবাড়িয়া গ্রামের লিটন কুন্ডুর বাড়ির ঘরের গ্রিল কেটে ঘরে ঢোকে। তারা অস্ত্রের মুখে বাড়ির লোকজনদের জিম্মি করে তিন ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার এবং নগদ দুই হাজার ৭০০ টাকা নিয়ে যান।

মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সকালে একদল লোক একই গ্রামের শিমুল সাহার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। এ সময় তারা বাড়ির লোকজনের নিকট এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এরপর তাঁরা নারিকেলবাড়িয়া বাজারে এসে হিন্দুদের অন্তত তিনটি দোকান ভাংচুর করে।

নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের(ইউপি) চেয়ারম্যান বাবলু কুমার সাহা বলেন, হামলাকারিরা নারিকেলবাড়িয়া বাজারে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে এবং প্রতিষ্ঠানে থাকা মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় বাজারের অন্তত ২৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর ও মালামাল লুট করা হয়। সন্ধ্যায় আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়।

সোমবার রাতে উপজেলার শালবরাট গ্রামের হিন্দুপাড়ায় হামলা চালায় ১০ থেকে ১২ জনের একটি দল। এই পাড়ায় ৬৫টি হিন্দু পরিবার বসবাস করে। মুখে কালো কাপড় বাঁধা এবং হাতে রামদা হাতে তাঁরা পাঁচ থেকে ছয়টি বাড়িতে যায়।

পাড়ার লোকজন জানান, ভয়ে রাতে পাড়ার সবাই পাশের বাগানে কোনোরকমে রাতটুকু পার করেন। মঙ্গলবার সকালে পুরুষেরা পাড়া ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন।

সোমবার সন্ধ্যা থেকে ভোররাত পর্যন্ত বাঘারপাড়া উপজেলার ধলগ্রাম ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের ২০ থেকে ২৫টি হিন্দু বাড়িতে চার দফা হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।

সোমবার ধলগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের(ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান সুভাষ দেবনাথ অভিরামের মানিকদোয়া গ্রামের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে একদল লোক। এ সময় তারা গোয়াল থেকে দুটি গরু নিয়ে যায়। এরপর রাতে একদল লোক আন্ধারকোটা গ্রামের দিপংকর বিশ্বাসের বাড়িতে চারদফা হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। এরপর তারা বাড়ি থেকে চারটি গরু, ২৫টি হাঁস, ১৫টি মুরগি, ৪০টি হাঁসের ডিম, দুই বস্তা চাল এবং একটি বৈদ্যুতিক মোটর নিয়ে যায়।

দিপংকর বিশ্বাস বলেন, খবর পেয়ে হামলার কিছুক্ষণ আগে স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে অন্যত্র চলে এসেছি। বাড়িতে বৃদ্ধ মা-বাবা আছেন। খুব ভয়ে আছি।

সোমবার রাতে উপজেলার নতুনগ্রামের স্বপন কুন্ডু, শেখর ঢালী, বল্লামুখ গ্রামের অরবিন্দু স্বর্ণাকার, অমল স্বর্ণাকার এবং মোহন্ত কুন্ডুর বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর, স্বর্ণালংকার ও মালামাল লুটপাট করা করা হয়। এ ছাড়া, সোমবার গভীর রাতে একদল লোক উপজেলার সুলতাননগর গ্রামের ঋষিপল্লির কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও মালামাল লুট করে।

সোমবার রাতে মনিরামপুর উপজেলার আম্রঝুটা গ্রামের দিলিপ সিংহের বাড়িতে হামলা চালায় একদল লোক। এ সময় তারা দিলিপ সিংহের দোতলা বাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় একদল লোক উপজেলার খাটুয়াডাঙ্গা বাজারে দিলিপ সিংহের দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাংচুর এবং দোকানে থাকা মালামাল নিয়ে যায়

একইদিন বিকেলে একদল লোক অভয়নগর উপজেলার পায়রা ইউনিয়ন পরিষদের(ইউপি) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বারান্দী গ্রামের মনিশংকর রায়ের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর এবং নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে।

এরপর সন্ধ্যায় হামলাকারিরা পায়রা ইউনিয়ন পরিষদের(ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান বারান্দী গ্রামের বিষ্ণুপদ দত্তর বাড়ি ভাংচুর করে এবং বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তারা বারান্দী গ্রামের রবিন বিশ্বাস, যুধিষ্টির বিশ্বাস এবং মহেন বৈরাগীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে।

সোমবার সন্ধ্যায় একদল লোক অভয়নগর উপজেলার ধোপাদী গ্রামের ব্যবসায়ী কৃষ্ণ দত্তের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে এবং স্বর্ণালংকার ও মালামাল লুট করে।