আবেদ আলীকে রক্ষায় মরিয়া ‘আবেদ ক্যাডাররা’
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৯:০৭:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০২৪ ৫৯ বার পড়া হয়েছে
২০১০ সালে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের সাথে আবেদ আলীর সম্পৃক্ততা পেয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা । এরইমধ্যে আবেদ আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । তিনি স্বীকার করেছিলেন । প্রশ্নফাঁসে কারা জড়িত । অন্যান্য প্রশ্নপত্র কীভাবে ফাঁস করা হয়, সেই তথ্য তিনি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে দিয়েছেন ।
এ ঘটনায় আবেদ আলীসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয় । তখন বিষয়টি পিএসসির তৎকালীন চেয়ারম্যানকে অবহিত করা হয় । সে সময় আবেদ আলী পিএসসির চেয়ারম্যানের কাছে অঙ্গীকার করেন, কখনো প্রশ্নফাঁস করবেন না । তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী ওই সময়ের চেয়ারম্যান পিএসসির আবেদ আলীসহ যে কয়জন কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন তাদের চাকরিচ্যুত করেন ।
প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় ২০১১ সালে শেরে বাংলা নগর থানায় আবেদ আলীসহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় । ওই মামলায় বিজি প্রেসেরওদু’জন কর্মকর্তা আসামি ছিলেন । ২০১৪ সালে বিচার কার্যক্রম শুরু হলে তখন মাত্রদু’জন সাক্ষীর জবানবন্দির গ্রহণ করা হয় । বর্তমান মামলাটি বিচারাধীন ।
কিন্তু চাকরিচ্যুত হলেও আবেদ আলী প্রশ্নফাঁসের কাজটি পুরাদমে শুরু করেন । প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে কয়েকশ’ কোটি টাকার মালিক হয়ে যান । তার সাথে রয়েছে বড় একটি গ্রুপ । ওই সময় ভর্তি পরীক্ষার এ প্রশ্নগুলো বিজিপ্রেসের যারা টাইপ করতো, সেখানে ছিলো আবেদ আলীর লোক । তারা প্রশ্নগুলো মুখস্থ করে ফেলতো । তারা সবাই মিলে প্রশ্নফাঁস করতো । তারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে পাঠাতো । সেই কোচিং সেন্টারগুলোও শনাক্ত করে গোয়েন্দা সংস্থা । তবে এর পেছনে নেপথ্যের শক্তি এতো শক্তিশালী ছিলো যে, তাদের কিছুই করা যায়নি ।
ওই সময়ে বিজি প্রেসের একজন উপ- পরিচালকও প্রশ্নফাঁসের হোতা ছিলেন । তার সাথে সম্পর্ক আবেদ আলীর । তার দেয়া ফাঁস হওয়া প্রশ্নে যারা বিসিএস ক্যাডার ও নন- ক্যাডার হয়েছেন, তাদের অনেকেই ‘ আবেদ ক্যাডার ’ হিসেবে ডাকছেন । আর এই আবেদ ক্যাডাররা আবেদ আলীকে রক্ষা করতে মরিয়া । তারা আবেদ আলী রক্ষা কমিটির মতো কাজ করছে । এমন তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে । কারণ আবেদ আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে, কারা কারা প্রশ্নফাঁসে উত্তীর্ণ হয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছে, তাদের নাম বলে দেবে । এই আশংকা করছেন অনেকে । সব বিসিএস ক্যাডারে আবেদ আলীর লোক রয়েছে । তারা বিভিন্নভাবে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । এরমধ্যে বিভিন্ন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সাথে আবেদ আলীর ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে । যা নিয়ে অনেকে বিব্রত বোধ করছেন ।
এদিকে, আবেদ আলীর প্রশ্নে যারা প্রশাসনে ঢুকেছে তারা দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় লিপ্ত । তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনারও কাজ চলছে । পিএসসির সাবেক মেম্বার মাহফুজুর রহমান প্রশ্নপত্র ফাঁসের মূল হোতা । মক্কেল যোগাড় করেছেন নিজের গাড়ির চালক আবেদ আলীকে দিয়ে ।
এদিকে, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের( বিসিএস) ক্যাডার, নন- ক্যাডার পরীক্ষাসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস করত বড় চক্র একটি চক্র । ঢাকাসহ সারাদেশে রয়েছে এই চক্রের বিস্তার । প্রশ্নফাঁস হয়েছে মেডিক্যাল ও নার্সিংয়েরও । পিএসসির সাবেক গাড়ি চালক সৈয়দ আবেদ আলীর সাথে প্রশ্নফাঁসে জড়িত চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারীকে ১০ কোটি টাকার চেকসহ মঙ্গলবার( ৯ জুলাই) আটক করে আইন- শৃঙ্খলা বাহিনী । তার দেয়া তথ্যানুযায়ী প্রশ্নফাঁস চক্রের আরো ৮ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে ।
সৈয়দ আবেদ আলী জড়িত ছিলেন নগদ লেনদেন ও চাকরি প্রার্থী সংগ্রহের কাজে । পিএসসির সাবেক মেম্বার মাহফুজুর রহমান ছিলেন গাড়ি চালক আবেদ আলীর প্রশ্নফাঁসের গুরু । পিএসসির কোনও নিয়োগ পরীক্ষা এলেই চক্রের সদস্যরা প্রশ্নফাঁস করে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিতো ।
চলতি মাসের ৫ জুলাই অনুষ্ঠিত রেলওয়ের উপ- সহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস করে এই চক্রটি । চক্রের সদস্যরা ওই পরীক্ষার আগের রাতে তাদের চুক্তি অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের বাসায় রেখে ওই প্রশ্নপত্র ও তার উত্তর দিয়ে দেন । তদন্তে এখন পর্যন্ত আরো অনেকের নাম সামনে এসেছে । হাইপ্রোফাইল কিছু নামও রয়েছে । সেসব তথ্য যাচাই- বাছাই চলছে । জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনবে বলে জানিয়েছে সিআইডি ।