ঢাকা ০৫:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
পাবনায় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র বিস্ফোরণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িচালক নিহত হবিগঞ্জে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা সহ তিন মাদক কারবারী গ্রেফতার গোবিন্দগঞ্জে শিক্ষককে মামলায় জরানোর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন ‘ফ্যাসিবাদের দোসরদের চিহ্নিত করা হবে’ ঢাকায় অটোরিকশা বন্ধ ঘোষণায় আন্দোলনে চালকরা ঢাকা ও সিটি কলেজ সংঘর্ষ, রণক্ষেত্রে সায়েন্সল্যাব রাজনৈতিক দলের বিচারে সুপারিশ করতে পারবে ট্রাইব্যুনাল ‘আ’ লীগ রাজনীতি করতে পারবে কি না তা জনগণ নির্ধারণ করবে’ আয়নাঘরের কারিগর ২২ কর্মকর্তার পাসপোর্ট বাতিলের নির্দেশ সুশীল সমাজের তোপের মুখে রাজশাহী পাসপোর্ট অফিসের ডিডি রোজী খন্দকার

আবেদ আলীকে রক্ষায় মরিয়া ‘আবেদ ক্যাডাররা’

বাংলা টাইমস ডেস্ক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৯:০৭:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০২৪ ৫৯ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি


২০১০ সালে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের সাথে আবেদ আলীর সম্পৃক্ততা পেয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা । এরইমধ্যে আবেদ আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । তিনি স্বীকার করেছিলেন । প্রশ্নফাঁসে কারা জড়িত । অন্যান্য প্রশ্নপত্র কীভাবে ফাঁস করা হয়, সেই তথ্য তিনি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে দিয়েছেন ।

এ ঘটনায় আবেদ আলীসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয় । তখন বিষয়টি পিএসসির তৎকালীন চেয়ারম্যানকে অবহিত করা হয় । সে সময় আবেদ আলী পিএসসির চেয়ারম্যানের কাছে অঙ্গীকার করেন, কখনো প্রশ্নফাঁস করবেন না । তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী ওই সময়ের চেয়ারম্যান পিএসসির আবেদ আলীসহ যে কয়জন কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন তাদের চাকরিচ্যুত করেন ।

প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় ২০১১ সালে শেরে বাংলা নগর থানায় আবেদ আলীসহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় । ওই মামলায় বিজি প্রেসেরওদু’জন কর্মকর্তা আসামি ছিলেন । ২০১৪ সালে বিচার কার্যক্রম শুরু হলে তখন মাত্রদু’জন সাক্ষীর জবানবন্দির গ্রহণ করা হয় । বর্তমান মামলাটি বিচারাধীন ।

কিন্তু চাকরিচ্যুত হলেও আবেদ আলী প্রশ্নফাঁসের কাজটি পুরাদমে শুরু করেন । প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে কয়েকশ’ কোটি টাকার মালিক হয়ে যান । তার সাথে রয়েছে বড় একটি গ্রুপ । ওই সময় ভর্তি পরীক্ষার এ প্রশ্নগুলো বিজিপ্রেসের যারা টাইপ করতো, সেখানে ছিলো আবেদ আলীর লোক । তারা প্রশ্নগুলো মুখস্থ করে ফেলতো । তারা সবাই মিলে প্রশ্নফাঁস করতো । তারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে পাঠাতো । সেই কোচিং সেন্টারগুলোও শনাক্ত করে গোয়েন্দা সংস্থা । তবে এর পেছনে নেপথ্যের শক্তি এতো শক্তিশালী ছিলো যে, তাদের কিছুই করা যায়নি ।

ওই সময়ে বিজি প্রেসের একজন উপ- পরিচালকও প্রশ্নফাঁসের হোতা ছিলেন । তার সাথে সম্পর্ক আবেদ আলীর । তার দেয়া ফাঁস হওয়া প্রশ্নে যারা বিসিএস ক্যাডার ও নন- ক্যাডার হয়েছেন, তাদের অনেকেই ‘ আবেদ ক্যাডার ’ হিসেবে ডাকছেন । আর এই আবেদ ক্যাডাররা আবেদ আলীকে রক্ষা করতে মরিয়া । তারা আবেদ আলী রক্ষা কমিটির মতো কাজ করছে । এমন তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে । কারণ আবেদ আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে, কারা কারা প্রশ্নফাঁসে উত্তীর্ণ হয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছে, তাদের নাম বলে দেবে । এই আশংকা করছেন অনেকে । সব বিসিএস ক্যাডারে আবেদ আলীর লোক রয়েছে । তারা বিভিন্নভাবে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । এরমধ্যে বিভিন্ন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সাথে আবেদ আলীর ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে । যা নিয়ে অনেকে বিব্রত বোধ করছেন ।

এদিকে, আবেদ আলীর প্রশ্নে যারা প্রশাসনে ঢুকেছে তারা দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় লিপ্ত । তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনারও কাজ চলছে । পিএসসির সাবেক মেম্বার মাহফুজুর রহমান প্রশ্নপত্র ফাঁসের মূল হোতা । মক্কেল যোগাড় করেছেন নিজের গাড়ির চালক আবেদ আলীকে দিয়ে ।

এদিকে, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের( বিসিএস) ক্যাডার, নন- ক্যাডার পরীক্ষাসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস করত বড় চক্র একটি চক্র । ঢাকাসহ সারাদেশে রয়েছে এই চক্রের বিস্তার । প্রশ্নফাঁস হয়েছে মেডিক্যাল ও নার্সিংয়েরও । পিএসসির সাবেক গাড়ি চালক সৈয়দ আবেদ আলীর সাথে প্রশ্নফাঁসে জড়িত চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারীকে ১০ কোটি টাকার চেকসহ মঙ্গলবার( ৯ জুলাই) আটক করে আইন- শৃঙ্খলা বাহিনী । তার দেয়া তথ্যানুযায়ী প্রশ্নফাঁস চক্রের আরো ৮ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে ।

সৈয়দ আবেদ আলী জড়িত ছিলেন নগদ লেনদেন ও চাকরি প্রার্থী সংগ্রহের কাজে । পিএসসির সাবেক মেম্বার মাহফুজুর রহমান ছিলেন গাড়ি চালক আবেদ আলীর প্রশ্নফাঁসের গুরু । পিএসসির কোনও নিয়োগ পরীক্ষা এলেই চক্রের সদস্যরা প্রশ্নফাঁস করে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিতো ।

চলতি মাসের ৫ জুলাই অনুষ্ঠিত রেলওয়ের উপ- সহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস করে এই চক্রটি । চক্রের সদস্যরা ওই পরীক্ষার আগের রাতে তাদের চুক্তি অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের বাসায় রেখে ওই প্রশ্নপত্র ও তার উত্তর দিয়ে দেন । তদন্তে এখন পর্যন্ত আরো অনেকের নাম সামনে এসেছে । হাইপ্রোফাইল কিছু নামও রয়েছে । সেসব তথ্য যাচাই- বাছাই চলছে । জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনবে বলে জানিয়েছে সিআইডি ।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

আবেদ আলীকে রক্ষায় মরিয়া ‘আবেদ ক্যাডাররা’

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৯:০৭:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০২৪


২০১০ সালে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের সাথে আবেদ আলীর সম্পৃক্ততা পেয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা । এরইমধ্যে আবেদ আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । তিনি স্বীকার করেছিলেন । প্রশ্নফাঁসে কারা জড়িত । অন্যান্য প্রশ্নপত্র কীভাবে ফাঁস করা হয়, সেই তথ্য তিনি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে দিয়েছেন ।

এ ঘটনায় আবেদ আলীসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয় । তখন বিষয়টি পিএসসির তৎকালীন চেয়ারম্যানকে অবহিত করা হয় । সে সময় আবেদ আলী পিএসসির চেয়ারম্যানের কাছে অঙ্গীকার করেন, কখনো প্রশ্নফাঁস করবেন না । তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী ওই সময়ের চেয়ারম্যান পিএসসির আবেদ আলীসহ যে কয়জন কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন তাদের চাকরিচ্যুত করেন ।

প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় ২০১১ সালে শেরে বাংলা নগর থানায় আবেদ আলীসহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় । ওই মামলায় বিজি প্রেসেরওদু’জন কর্মকর্তা আসামি ছিলেন । ২০১৪ সালে বিচার কার্যক্রম শুরু হলে তখন মাত্রদু’জন সাক্ষীর জবানবন্দির গ্রহণ করা হয় । বর্তমান মামলাটি বিচারাধীন ।

কিন্তু চাকরিচ্যুত হলেও আবেদ আলী প্রশ্নফাঁসের কাজটি পুরাদমে শুরু করেন । প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে কয়েকশ’ কোটি টাকার মালিক হয়ে যান । তার সাথে রয়েছে বড় একটি গ্রুপ । ওই সময় ভর্তি পরীক্ষার এ প্রশ্নগুলো বিজিপ্রেসের যারা টাইপ করতো, সেখানে ছিলো আবেদ আলীর লোক । তারা প্রশ্নগুলো মুখস্থ করে ফেলতো । তারা সবাই মিলে প্রশ্নফাঁস করতো । তারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে পাঠাতো । সেই কোচিং সেন্টারগুলোও শনাক্ত করে গোয়েন্দা সংস্থা । তবে এর পেছনে নেপথ্যের শক্তি এতো শক্তিশালী ছিলো যে, তাদের কিছুই করা যায়নি ।

ওই সময়ে বিজি প্রেসের একজন উপ- পরিচালকও প্রশ্নফাঁসের হোতা ছিলেন । তার সাথে সম্পর্ক আবেদ আলীর । তার দেয়া ফাঁস হওয়া প্রশ্নে যারা বিসিএস ক্যাডার ও নন- ক্যাডার হয়েছেন, তাদের অনেকেই ‘ আবেদ ক্যাডার ’ হিসেবে ডাকছেন । আর এই আবেদ ক্যাডাররা আবেদ আলীকে রক্ষা করতে মরিয়া । তারা আবেদ আলী রক্ষা কমিটির মতো কাজ করছে । এমন তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে । কারণ আবেদ আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে, কারা কারা প্রশ্নফাঁসে উত্তীর্ণ হয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছে, তাদের নাম বলে দেবে । এই আশংকা করছেন অনেকে । সব বিসিএস ক্যাডারে আবেদ আলীর লোক রয়েছে । তারা বিভিন্নভাবে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । এরমধ্যে বিভিন্ন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সাথে আবেদ আলীর ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে । যা নিয়ে অনেকে বিব্রত বোধ করছেন ।

এদিকে, আবেদ আলীর প্রশ্নে যারা প্রশাসনে ঢুকেছে তারা দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় লিপ্ত । তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনারও কাজ চলছে । পিএসসির সাবেক মেম্বার মাহফুজুর রহমান প্রশ্নপত্র ফাঁসের মূল হোতা । মক্কেল যোগাড় করেছেন নিজের গাড়ির চালক আবেদ আলীকে দিয়ে ।

এদিকে, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের( বিসিএস) ক্যাডার, নন- ক্যাডার পরীক্ষাসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস করত বড় চক্র একটি চক্র । ঢাকাসহ সারাদেশে রয়েছে এই চক্রের বিস্তার । প্রশ্নফাঁস হয়েছে মেডিক্যাল ও নার্সিংয়েরও । পিএসসির সাবেক গাড়ি চালক সৈয়দ আবেদ আলীর সাথে প্রশ্নফাঁসে জড়িত চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারীকে ১০ কোটি টাকার চেকসহ মঙ্গলবার( ৯ জুলাই) আটক করে আইন- শৃঙ্খলা বাহিনী । তার দেয়া তথ্যানুযায়ী প্রশ্নফাঁস চক্রের আরো ৮ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে ।

সৈয়দ আবেদ আলী জড়িত ছিলেন নগদ লেনদেন ও চাকরি প্রার্থী সংগ্রহের কাজে । পিএসসির সাবেক মেম্বার মাহফুজুর রহমান ছিলেন গাড়ি চালক আবেদ আলীর প্রশ্নফাঁসের গুরু । পিএসসির কোনও নিয়োগ পরীক্ষা এলেই চক্রের সদস্যরা প্রশ্নফাঁস করে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিতো ।

চলতি মাসের ৫ জুলাই অনুষ্ঠিত রেলওয়ের উপ- সহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস করে এই চক্রটি । চক্রের সদস্যরা ওই পরীক্ষার আগের রাতে তাদের চুক্তি অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের বাসায় রেখে ওই প্রশ্নপত্র ও তার উত্তর দিয়ে দেন । তদন্তে এখন পর্যন্ত আরো অনেকের নাম সামনে এসেছে । হাইপ্রোফাইল কিছু নামও রয়েছে । সেসব তথ্য যাচাই- বাছাই চলছে । জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনবে বলে জানিয়েছে সিআইডি ।