ঢাকা ০৫:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভাসমান বীজতলা-ই ভরসা কৃষিযোদ্ধাদের

শাহ জালাল, বরিশাল
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৪১:৩০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪ ৪৭ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে আসন্ন প্রায় রবি মৌশুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে ১৬ লক্ষাধিক টন শীতকালীন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে প্রস্তুতি শুরু করেছেন কৃষি যোদ্ধারা। এরমধ্যে বরিশালের বেশ কিছু এলাকায় শীতকালীন সবজি আবাদের লক্ষ্যে ভাসমান বীজতলা তৈরী সম্পন্ন হয়েছে।

নদ-নদী ও অসংখ্য খাল বেষ্টিত বরিশাল কৃষি অঞ্চল দেশের অন্য এলাকার তুলনায় কিছুটা নিচু হওয়ার পাশাপাশি এখান থেকে মৌসুমী বায়ু কিছুটা দেরিতে বিদায়ের কারণে বর্ষাও কিছুটা বিলম্বিত হয়ে থাকে। ফলে শীতকালীন সবজি আবাদের সময় পেরিয়ে গেলেও অনেক জমিতে পানি আটকে থাকায় আবাদ বিলম্বিত হয়।

ফলে গত কয়েক দশক ধরে নাজিরপুর বানারীপাড়া, উজিরপুর ও স্বরূপকাঠিসহ কয়েকটি এলকার বিল অঞ্চলে ভাসমান ঢিপ পদ্ধতিতে সবজিসহ নানা ধরনের বীজের আবাদ হচ্ছে। ফলে এসব বীজতলা থেকে বর্ষা বিদায়ের সাথেই শীতকালীন সবজির চারা উত্তোলন করে রোপন সম্ভব হওয়ায় অপেক্ষাকৃত কম সময়ে সবজির আবাদ ও উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। ফলে জমিতে আর্দ্রতা বিরাজ করার সাথে শীতকালীন সবজিসহ বিভিন্ন রবি ফসলের আবাদ সহজতর হচ্ছে। এছাড়াও রয়েছে ভাসমান সবজি চাষ।

কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএইর মতে বিশ্বের শতাধিক দেশে বর্তমানে বাংলাদেশের যে কৃষি পণ্য রপ্তানী হচ্ছে, সেখানে বরিশাল অঞ্চলের সবজিও রয়েছে। এরমধ্যে শীতকালীন সবজিই অন্যতম প্রাধান কৃষিপণ্য। আগামীতে এ বাজার আরো সম্প্রসারনের লক্ষ্যে সরকার দেশে সবজির আবাদে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে বলেও জানিয়েছে ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল।

আসন্ন রবি মৌসুমেও বরিশাল কৃষি অঞ্চলে অন্তত ১৪ লাখ হেক্টরে শীতকালীন সবজি সহ বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদের সম্ভাবনা রয়েছে। এরমধ্যে শুধু ৪ লক্ষাধিক হেক্টরে বোরো ধান আবাদের মাধ্যমে প্রায় ১৬ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে। তবে অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা হওয়ায় এখানো বরিশাল অঞ্চলের জমিতে আমন ধান থোর পর্যায়ে রয়েছে। এ অঞ্চলে আমনের কর্তন শুরু হতে আরো অন্তত ৩০-৪৫ দিন বাকি রয়েছে।

তবে বরিশাল অঞ্চলের কৃষিযোদ্ধারা এখন ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন শীতকালীন সবজি আবাদে। আসন্ন রবি মৌসুমে কৃষি মন্ত্রণালয় দেশের প্রায় ১০ লাখ হেক্টর জমিতে আবাদের মাধ্যমে প্রায় সোয়া ২ কোটি টন শীতকালীন সবজি উৎপাদন লক্ষ্য অর্জনে কাজ করেছে। এরমধ্যে শুধু বরিশাল কৃষি অঞ্চলেই প্রায় ৭৮ হাজার ৭৯৫ হেক্টরে ১৬ লাখ ৮ হাজার ৫৫ টন শীতকালীন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করছেন কৃষি যোদ্ধারা। এরমধ্যে অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে লালশাক ও পালং শাকের কিছু আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। সিম, পটল, ফুলকপি, বাঁধা কপি, শালগম, গাজর, মুলা সহ বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজির আবাদ শুরু হবে চলতি মাসের শেষভাগে। তবে এর বাইরে লাউ সহ বেশ কিছু সবজি এখন ১২ মাসই আবাদ ও উৎপাদন হচ্ছে।

কৃষকরা বর্ষা বিদায়ের সাথে দ্রুততম সময়ে শীতকালীন সবজি আবাদের মাধ্যমে তা বাজারজাত করে ভাল মুনাফা ঘরে তুলতে জমি তৈরী সম্পন্ন করে ভাসমান সবজি বীজতলা থেকে চারা সংগ্রহ করে রোপনের চেষ্টা করছেন। এ অঞ্চলে শীতকালীন সবজির আবাদ বিলম্বিত হওয়ায় এখনো দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবজি বরিশাল অঞ্চলের বাজারে আসছে। ফলে পরিবহন ব্যয় জনিত কারনে দামও অনেক চড়া। এবার ভাদ্রের পূর্ণিমা ও আশ্বিনের অমাবস্যার ব্যাপক বর্ষণে বরিশাল অঞ্চলের গ্রীষ্মকালীন সবজির অন্তত ৮০ ভাগই বিনষ্ট হয়েছে। ফলে সরবরাহ ঘাটতিতে বরিশালের বাজারে এখন ১শ টাকা কেজির নিচে কোন সবজি মিলছে না। চরম দুর্ভোগে সাধারন পরিবারগুলো।

কৃষকরা আশা করছেন আগামী ৩০-৪৫ দিনের মধ্যে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সবজি বরিশাল অঞ্চলের বাজারে আসতে শুরু করলে বাজার দরে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, দেশে গত বছর প্রায় ২ কোটি টনের মত শীতকালীন সবজি উৎপাদন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুল থাকলে চলতি অর্থ বছরে তা প্রায় ২.১০ কোটি টনের কাছে পৌঁছতে পারে। ফলে অভ্যন্তরীন বাজারের পূর্ণ চাহিদা মিটিয়েও বিদেশে রপ্তানী বাজার আরো সম্প্রসারিত হবে।

এদিকে, গবেষণা কার্যক্রমের মাধ্যমে অন্যসব ফসলের মত বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজিরও উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে আমাদের কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ‘বারী’। ফলে কম জমিতে অধিক সবজি উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। এতেকরে কৃষকগণ লাভবান হবার পাশাপাশি দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানী বাজার সম্প্রসারনেরও সুযোগ ঘটছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ভাসমান বীজতলা-ই ভরসা কৃষিযোদ্ধাদের

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৪১:৩০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে আসন্ন প্রায় রবি মৌশুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে ১৬ লক্ষাধিক টন শীতকালীন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে প্রস্তুতি শুরু করেছেন কৃষি যোদ্ধারা। এরমধ্যে বরিশালের বেশ কিছু এলাকায় শীতকালীন সবজি আবাদের লক্ষ্যে ভাসমান বীজতলা তৈরী সম্পন্ন হয়েছে।

নদ-নদী ও অসংখ্য খাল বেষ্টিত বরিশাল কৃষি অঞ্চল দেশের অন্য এলাকার তুলনায় কিছুটা নিচু হওয়ার পাশাপাশি এখান থেকে মৌসুমী বায়ু কিছুটা দেরিতে বিদায়ের কারণে বর্ষাও কিছুটা বিলম্বিত হয়ে থাকে। ফলে শীতকালীন সবজি আবাদের সময় পেরিয়ে গেলেও অনেক জমিতে পানি আটকে থাকায় আবাদ বিলম্বিত হয়।

ফলে গত কয়েক দশক ধরে নাজিরপুর বানারীপাড়া, উজিরপুর ও স্বরূপকাঠিসহ কয়েকটি এলকার বিল অঞ্চলে ভাসমান ঢিপ পদ্ধতিতে সবজিসহ নানা ধরনের বীজের আবাদ হচ্ছে। ফলে এসব বীজতলা থেকে বর্ষা বিদায়ের সাথেই শীতকালীন সবজির চারা উত্তোলন করে রোপন সম্ভব হওয়ায় অপেক্ষাকৃত কম সময়ে সবজির আবাদ ও উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। ফলে জমিতে আর্দ্রতা বিরাজ করার সাথে শীতকালীন সবজিসহ বিভিন্ন রবি ফসলের আবাদ সহজতর হচ্ছে। এছাড়াও রয়েছে ভাসমান সবজি চাষ।

কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএইর মতে বিশ্বের শতাধিক দেশে বর্তমানে বাংলাদেশের যে কৃষি পণ্য রপ্তানী হচ্ছে, সেখানে বরিশাল অঞ্চলের সবজিও রয়েছে। এরমধ্যে শীতকালীন সবজিই অন্যতম প্রাধান কৃষিপণ্য। আগামীতে এ বাজার আরো সম্প্রসারনের লক্ষ্যে সরকার দেশে সবজির আবাদে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে বলেও জানিয়েছে ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল।

আসন্ন রবি মৌসুমেও বরিশাল কৃষি অঞ্চলে অন্তত ১৪ লাখ হেক্টরে শীতকালীন সবজি সহ বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদের সম্ভাবনা রয়েছে। এরমধ্যে শুধু ৪ লক্ষাধিক হেক্টরে বোরো ধান আবাদের মাধ্যমে প্রায় ১৬ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে। তবে অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা হওয়ায় এখানো বরিশাল অঞ্চলের জমিতে আমন ধান থোর পর্যায়ে রয়েছে। এ অঞ্চলে আমনের কর্তন শুরু হতে আরো অন্তত ৩০-৪৫ দিন বাকি রয়েছে।

তবে বরিশাল অঞ্চলের কৃষিযোদ্ধারা এখন ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন শীতকালীন সবজি আবাদে। আসন্ন রবি মৌসুমে কৃষি মন্ত্রণালয় দেশের প্রায় ১০ লাখ হেক্টর জমিতে আবাদের মাধ্যমে প্রায় সোয়া ২ কোটি টন শীতকালীন সবজি উৎপাদন লক্ষ্য অর্জনে কাজ করেছে। এরমধ্যে শুধু বরিশাল কৃষি অঞ্চলেই প্রায় ৭৮ হাজার ৭৯৫ হেক্টরে ১৬ লাখ ৮ হাজার ৫৫ টন শীতকালীন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করছেন কৃষি যোদ্ধারা। এরমধ্যে অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে লালশাক ও পালং শাকের কিছু আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। সিম, পটল, ফুলকপি, বাঁধা কপি, শালগম, গাজর, মুলা সহ বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজির আবাদ শুরু হবে চলতি মাসের শেষভাগে। তবে এর বাইরে লাউ সহ বেশ কিছু সবজি এখন ১২ মাসই আবাদ ও উৎপাদন হচ্ছে।

কৃষকরা বর্ষা বিদায়ের সাথে দ্রুততম সময়ে শীতকালীন সবজি আবাদের মাধ্যমে তা বাজারজাত করে ভাল মুনাফা ঘরে তুলতে জমি তৈরী সম্পন্ন করে ভাসমান সবজি বীজতলা থেকে চারা সংগ্রহ করে রোপনের চেষ্টা করছেন। এ অঞ্চলে শীতকালীন সবজির আবাদ বিলম্বিত হওয়ায় এখনো দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবজি বরিশাল অঞ্চলের বাজারে আসছে। ফলে পরিবহন ব্যয় জনিত কারনে দামও অনেক চড়া। এবার ভাদ্রের পূর্ণিমা ও আশ্বিনের অমাবস্যার ব্যাপক বর্ষণে বরিশাল অঞ্চলের গ্রীষ্মকালীন সবজির অন্তত ৮০ ভাগই বিনষ্ট হয়েছে। ফলে সরবরাহ ঘাটতিতে বরিশালের বাজারে এখন ১শ টাকা কেজির নিচে কোন সবজি মিলছে না। চরম দুর্ভোগে সাধারন পরিবারগুলো।

কৃষকরা আশা করছেন আগামী ৩০-৪৫ দিনের মধ্যে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সবজি বরিশাল অঞ্চলের বাজারে আসতে শুরু করলে বাজার দরে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, দেশে গত বছর প্রায় ২ কোটি টনের মত শীতকালীন সবজি উৎপাদন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুল থাকলে চলতি অর্থ বছরে তা প্রায় ২.১০ কোটি টনের কাছে পৌঁছতে পারে। ফলে অভ্যন্তরীন বাজারের পূর্ণ চাহিদা মিটিয়েও বিদেশে রপ্তানী বাজার আরো সম্প্রসারিত হবে।

এদিকে, গবেষণা কার্যক্রমের মাধ্যমে অন্যসব ফসলের মত বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজিরও উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে আমাদের কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ‘বারী’। ফলে কম জমিতে অধিক সবজি উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। এতেকরে কৃষকগণ লাভবান হবার পাশাপাশি দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানী বাজার সম্প্রসারনেরও সুযোগ ঘটছে।