ভাসমান নৌকার হাটে ক্রেতা আশানুরূপ নেই
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:১৭:১৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুলাই ২০২৪ ৪৫ বার পড়া হয়েছে
বরিশালের শতবর্ষের পুরানো ভাসমান নৌকার হাটগুলোতে এবার ক্রেতা সমাগম হবে বলে আশাবাদী বিক্রেতারা। তবে কারিগর সংকট ছাড়াও লোহা ও কাঠসহ সব নির্মান সামগ্রীর মূল্য বেড়ে যাওয়ায় নৌকার দাম না বাড়ায় কাঙ্খিত এই শিল্পে মুনাফা মিলছে না বলে দাবী বিক্রেতাদের।
বরিশালের বানরীপাড়া, নেসারাবাদ এবং আটঘর-কুড়িয়ানার ঐতিহ্যবাহী নৌকা শিল্প করোনার প্রভাবে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়লেও গত বছর থেকে তা কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে।
তবে গত বছরে মতো এবারের বর্ষা মৌশুমেও কারিগর সংকটসহ নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে নানা দুঃশ্চিন্তা তাড়া করছে এসব হাটের নৌকার পাইকারদের। পাশাপাশি গত কয়েকটি বছরের মত এবারও ক্রেতা সংকটের বিষয়টিও অনিশ্চয়তা তৈরী করছে। এসব ভাসমান ও মৌসুমী হাটে কারিগরের অভাবে নৌকা তৈরি যেমন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে তেমনি নির্মান সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারনে নৌকার মূল্যবৃদ্ধির ফলে ক্রেতাদের আগ্রহও অনেকটা তলানীতে। তবে এরপরেও এবার বরিশালের ভাসমান নৌকার হাটের বিক্রেতারা যথেষ্ট আশাবাদী। অন্তত গত কয়েকটি বছরের তুলনায় এবার তারা কিছুটা হলেও ভাল সাড়া পাবেন ক্রেতাদের কাছ থেকে বলে আশাবাদী।
প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ নদ-নদী ও ৩০ হাজার কিলোমিটারেরও বেশী খাল-বিল বেষ্টিত বরিশাল অঞ্চল জুড়েই বর্ষা মৌসুমে নৌকার প্রয়োজনীয়তা অন্য যেকোন সময়ের তুলনায় অনেক বেশী। বিশেষ করে বর্র্ষার এসময়ে কৃষকরা ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা নিয়েই রোপা আমনের চারা-বীজ সহ নানা কৃষি উপকরন নিয়ে আধা নিমজ্জিত ফসলের জমিতে যায়। এছাড়াও বর্ষার পানিতে প্লাবিত এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে যেতেও অনেক এলাকায় এখনো নৌকাই একমাত্র বাহন। সামনে আউশ ধান কর্তন ছাড়াও আটঘর-কুড়িয়ানার পানি বেষ্টিত বাগান থেকে পেয়ারা, আমড়া ও সব্জিসহ অন্যান্য ফসল সংগ্রহ এবং বাজারজাত করতেও নৌকার কোন বিকল্প নেই এখনো। এই অঞ্চলে কচুরিপানার ভাসমান ধাপের ওপর তৈরী বিভিন্ন শাক-সবজী ও নানা ধরনের বীজতলা থেকেও উৎপাদিত পণ্য সংগ্রহ সহ তা বাজারজাত করনেও নৌকাই একমাত্র বাহন। ভিমরুলীতে গত অর্ধ শতাব্দীকাল ধরে নৌকার ওপরই পেয়ারার ভাসমান হাট বসছে। যা দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতি বছর বর্র্ষা মৌসুমে বিপুল সংখ্যক পর্যটক আসছেন।
তবে বিচিত্র ও বৈরী আবহাওয়াও বরিশালের নৌকা শিল্পে নানা বিরূপ প্রভাব ফেলছে। গত বছরের মত এবছরের শুরু থেকেও বরিশালে বৃষ্টিপাতের ব্যাপক ঘাটতির পরে আষাঢ়ে বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টিপাতের পরিমান স্বাভাবিকের নিচে। এবার বছরের প্রথম ৪ মাসই বরিশালে বৃষ্টিপাতের ব্যপক ঘাটতির পরে ঘূর্ণিঝড় রিমালে ভর করে মে মাসে স্বাভাবিক ২৬০ মিলিমিটারের স্থলে ৩৮৮ মিলি বৃষ্টি হয়। যা ছিল স্বাভাবিকের প্রায় ৫০ ভাগ বেশী। অথচ গত এপ্রিলে বরিশালে বৃষ্টির পরিমান ছিল স্বাভাবিকের ৮৬% এবং মার্চ ৩০% কম। এমনকি ভরা বর্ষার জুন মাসেও বরিশালে বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল স্বাভাবিকের ৬০ভাগ কম। তবে চলতি মাসে স্বাভাবিক ৫১৯ মিলিমিটারের স্থালে ৪২০ থেকে ৫৭০ মিলি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
আষাঢ়ের শেষভাগে এসে বরিশালে কমবেশী বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে বরিশালের নদী-নালা এবং খালবিল গুলো ইতোমধ্যে পানিতে টৈ-টুম্বুর হয়ে গেছে। এতে নৌকা নির্ভর এলাকায় চাহিদা থাকলেও আর্থিক সংকট সহ মূল্য বৃদ্ধির কারনেও এবার এখনো কাঙ্খিত ক্রেতার দেখা নেই। করোনাকালীন সংকট কিছুটা কাটিয়ে উঠলেও পূর্বের সেই সাচ্ছন্দ নেই বরিশালের ভাসমান নৌকার হাটে।
একশ বছরের পুরানো আটঘর হাটে এবারো ক্রেতা কম। ফলে বেপারীরা আগের মত নৌকা আনতে সাহস পাচ্ছেন না বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন। তাদের দাবী কাঠসহ নৌকা তৈরির উপকরনের দাম বাড়লেও বাড়েনি নৌকার দাম। অপরদিকে ক্রেতা কম থাকায় চাহিদাও করোনা পূর্বকালীন পর্যায়ে নেই। ফলে এ শিল্পের সংগে জড়িতরা কিছুটা বিপাকেই আছেন।
অন্যদিকে, ক্রেতার বলছেন, নৌকার দাম আগের কয়েকটি বছরের তুলনায় এবারো অনেক বেশি। তবে বিক্রেতাদের দাবী কাঠ ও লোহা সহ সব উপকরনের মূল্যবৃদ্ধির সাথে কারিগরদের মজুরীও প্রায় দ্বিগুন বেড়েছে গত কয়েক বছরে। কিন্তু সে তুলনায় নৌকার দাম বাড়েনি। ফলে তাদের পূঁজি তুলে আনাই কঠিন হয়ে পড়ছে।