ঢাকা ০৬:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভরা মৌসুমে রংপুরে কাঁচা মরিচের কেজি ৫০০ টাকা

রংপুর প্রতিনিধি
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৫:৪৩:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০২৪ ৬৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সবজির ভান্ডার বলে খ্যাত রংপুরে এবার ভরা মৌসুমে মাত্র দুই দিনের ব্যাবধানে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫শ টাকা কেজি দরে। উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ পাইকারী আড়ত সিটি বাজারের ৮ থেকে ১০ জন আড়তদারের সিন্ডিকেট চক্র কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ দুই দিন আগেও ২০০ টাকা কেঁজি দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে।

একইভাবে সব ধরনের সবজি কেজি প্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকা বেশী দরে বিক্রি হচ্ছে। আকস্মিক সবজি আর কাঁচা মরিচের দাম বৃদ্ধির ফলে নিম্নবিত্ত , মধ্যবিত্ত সহ সব শ্রেণীর মানুষের নাভিম্বাস উঠেছে। স্বল্প আয়োর মানুষ বিশেষ করে দীনমজুর শ্রমিক সহ সাধারন মানুষ সবজি কেনাই দুঃসাদ্য হয়ে পড়েছে।

সরেজমিন বিভাগীয় নগরী রংপুরের সর্ববৃহৎ পাইকারী সব্জি মোকাম সিটি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, কাঁচা মরিচ প্রতি কেঁজি ৫শ টাকা কেঁজি দর হাকাচ্ছে দোকানদাররা। দাম আকস্মিক ভাবে বৃদ্ধির কারন জানতে চাইলে খুচরা বিক্রেতা বলছেন আমদানী নাকি কম হওয়ায় দাম বেড়ে গেছে।

খুচরা ব্যাবসায়ী সালাম জানালেন, ২/৩ দিন আগেও আমরা ২শ টাকা কেঁজি দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি করেছি শুক্রবার (৪ অক্টোবর) হঠাৎ করে দাম কেঁজি প্রতি ৩শ টাকা বৃদ্ধির কারন নাকি আড়তদাররাই বলতে পারবে।

একই কথা জানালেন খুচরা সব্জি ব্যবসায়ী মমতাজ , মালেক সহ অন্যান্যরা। তারা বললেন তারা কেঁজিতে সর্ব্বচ্য ৩০ টাকা মুনাফা করেন। আড়তে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের বেশী দামে কিনে এনে বিক্রি করতে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে আড়তদার মোহাম্মদ আলী জানান, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় তাদের বেশী দামে কিনে আনতে হচ্ছে ফলে দাম বেড়েছে। তাই বলে কেঁজি প্রতি ৩শ টাকা দাম বৃদ্ধির কোন সদুত্তোর তার কাছে নেই।

একই কথা বললেন আড়তদার সাবলু মিয়া। তিনি বললেন, রংপুরে এবার ব্যাপক ভিত্তিতে কাঁচা মরিচের চাষ হয়েছে ফলনও বাম্পার হয়েছে কিন্তু সাম্প্রতায়িক বৃষ্টি সহ সহ বিরুপ আবহাওয়ায় অনেক ক্ষেত নষ্ট হয়েছে বলেই নাকি দাম বেড়েছে।

তবে নাম প্রকাশে অনিশ্চুক দুজন খুচরা ব্যবসায়ী বললেন, আড়ত গুলোতে প্রচুর পরিমানে কাঁচা মরিচ মজুত করে রাখা হয়েছে। আর এ ব্যাপার কাঁচা মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে ফলে কাঁচা মরিচের ২/৩ দিনের ব্যবধানে কেঁজি প্রতি ৩শ টাকা বৃদ্ধি পাবার কোন কারন বা অজুহাত থাকতে পারেনা। তারা প্রশাসনের বাজারের উপর নজরদারি বিশেষ করে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের কোন পদক্ষেপ গ্রহন না করায় এভাবে দাম বেড়েছে।

এদিকে, শুক্রবার বাজার করতে আসা নগরীর মুন্সিপাড়া এলাকার চাকুরীজিবী আজমল হোসেন তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন আমরা সাধারন মানুষ হাতে গোনা কিছু অসাধু ব্যাবসায়ীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি। তিনদিন আগে আমি ২শ টাকা কেঁজি দরে আধা কেজি কাঁচা মরিচ কিনেছি অথচ শুক্রবার বাজারে এসে দেখছি একলাফে কেঁজি প্রতি ৩শ টাকা বেড়েছে এটা কি মগের মুল্লক নাকি। এর কি কোন প্রতিকার নেই আমরা কি সাধারন মানুষ জিম্মি থাকবো?।

একই কথা বললেন সরকারী কর্মচারী আলফা ইয়াসমিন। তিনি বললেন, কাঁচা মরিচ তো বিদেশ থেকে আমদানী করতে হয়না রংপুরেই ব্যাপক ভাবে কাঁচা মরিচের চাষ হয় কোন অবস্থাতেই এত দাম বাড়তে পারেনা।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আলমগীর হোসেন জানান, এবার রংপুরে কাঁচা মরিচ চাষ করা হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে । হেক্টর প্রতি কাঁচা মরিচের ফলন হয়েছে ১০ থেকে ১২ টন , ফলে চাহিদার চেয়ে এবার বেশী মরিচের ফলন হয়েছে বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন । মৌসুমের প্রথম দিকে প্রতি কেজি কাচা মরিচ এবার চাষীরা বিক্রি করেছে ৮০ থেকে ১শ টাকায় । কিছু অসাধু আড়তদার ব্যাবসায়ী সিন্ডিকেট করে কাঁচামরিচের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেবার পায়তারা শুরু করেছে বলে তিনি মনে করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

ভরা মৌসুমে রংপুরে কাঁচা মরিচের কেজি ৫০০ টাকা

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৫:৪৩:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০২৪

সবজির ভান্ডার বলে খ্যাত রংপুরে এবার ভরা মৌসুমে মাত্র দুই দিনের ব্যাবধানে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫শ টাকা কেজি দরে। উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ পাইকারী আড়ত সিটি বাজারের ৮ থেকে ১০ জন আড়তদারের সিন্ডিকেট চক্র কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ দুই দিন আগেও ২০০ টাকা কেঁজি দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে।

একইভাবে সব ধরনের সবজি কেজি প্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকা বেশী দরে বিক্রি হচ্ছে। আকস্মিক সবজি আর কাঁচা মরিচের দাম বৃদ্ধির ফলে নিম্নবিত্ত , মধ্যবিত্ত সহ সব শ্রেণীর মানুষের নাভিম্বাস উঠেছে। স্বল্প আয়োর মানুষ বিশেষ করে দীনমজুর শ্রমিক সহ সাধারন মানুষ সবজি কেনাই দুঃসাদ্য হয়ে পড়েছে।

সরেজমিন বিভাগীয় নগরী রংপুরের সর্ববৃহৎ পাইকারী সব্জি মোকাম সিটি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, কাঁচা মরিচ প্রতি কেঁজি ৫শ টাকা কেঁজি দর হাকাচ্ছে দোকানদাররা। দাম আকস্মিক ভাবে বৃদ্ধির কারন জানতে চাইলে খুচরা বিক্রেতা বলছেন আমদানী নাকি কম হওয়ায় দাম বেড়ে গেছে।

খুচরা ব্যাবসায়ী সালাম জানালেন, ২/৩ দিন আগেও আমরা ২শ টাকা কেঁজি দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি করেছি শুক্রবার (৪ অক্টোবর) হঠাৎ করে দাম কেঁজি প্রতি ৩শ টাকা বৃদ্ধির কারন নাকি আড়তদাররাই বলতে পারবে।

একই কথা জানালেন খুচরা সব্জি ব্যবসায়ী মমতাজ , মালেক সহ অন্যান্যরা। তারা বললেন তারা কেঁজিতে সর্ব্বচ্য ৩০ টাকা মুনাফা করেন। আড়তে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের বেশী দামে কিনে এনে বিক্রি করতে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে আড়তদার মোহাম্মদ আলী জানান, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় তাদের বেশী দামে কিনে আনতে হচ্ছে ফলে দাম বেড়েছে। তাই বলে কেঁজি প্রতি ৩শ টাকা দাম বৃদ্ধির কোন সদুত্তোর তার কাছে নেই।

একই কথা বললেন আড়তদার সাবলু মিয়া। তিনি বললেন, রংপুরে এবার ব্যাপক ভিত্তিতে কাঁচা মরিচের চাষ হয়েছে ফলনও বাম্পার হয়েছে কিন্তু সাম্প্রতায়িক বৃষ্টি সহ সহ বিরুপ আবহাওয়ায় অনেক ক্ষেত নষ্ট হয়েছে বলেই নাকি দাম বেড়েছে।

তবে নাম প্রকাশে অনিশ্চুক দুজন খুচরা ব্যবসায়ী বললেন, আড়ত গুলোতে প্রচুর পরিমানে কাঁচা মরিচ মজুত করে রাখা হয়েছে। আর এ ব্যাপার কাঁচা মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে ফলে কাঁচা মরিচের ২/৩ দিনের ব্যবধানে কেঁজি প্রতি ৩শ টাকা বৃদ্ধি পাবার কোন কারন বা অজুহাত থাকতে পারেনা। তারা প্রশাসনের বাজারের উপর নজরদারি বিশেষ করে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের কোন পদক্ষেপ গ্রহন না করায় এভাবে দাম বেড়েছে।

এদিকে, শুক্রবার বাজার করতে আসা নগরীর মুন্সিপাড়া এলাকার চাকুরীজিবী আজমল হোসেন তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন আমরা সাধারন মানুষ হাতে গোনা কিছু অসাধু ব্যাবসায়ীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি। তিনদিন আগে আমি ২শ টাকা কেঁজি দরে আধা কেজি কাঁচা মরিচ কিনেছি অথচ শুক্রবার বাজারে এসে দেখছি একলাফে কেঁজি প্রতি ৩শ টাকা বেড়েছে এটা কি মগের মুল্লক নাকি। এর কি কোন প্রতিকার নেই আমরা কি সাধারন মানুষ জিম্মি থাকবো?।

একই কথা বললেন সরকারী কর্মচারী আলফা ইয়াসমিন। তিনি বললেন, কাঁচা মরিচ তো বিদেশ থেকে আমদানী করতে হয়না রংপুরেই ব্যাপক ভাবে কাঁচা মরিচের চাষ হয় কোন অবস্থাতেই এত দাম বাড়তে পারেনা।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আলমগীর হোসেন জানান, এবার রংপুরে কাঁচা মরিচ চাষ করা হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে । হেক্টর প্রতি কাঁচা মরিচের ফলন হয়েছে ১০ থেকে ১২ টন , ফলে চাহিদার চেয়ে এবার বেশী মরিচের ফলন হয়েছে বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন । মৌসুমের প্রথম দিকে প্রতি কেজি কাচা মরিচ এবার চাষীরা বিক্রি করেছে ৮০ থেকে ১শ টাকায় । কিছু অসাধু আড়তদার ব্যাবসায়ী সিন্ডিকেট করে কাঁচামরিচের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেবার পায়তারা শুরু করেছে বলে তিনি মনে করেন।