ঢাকা ০৪:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বৈষম্য ছাত্র আন্দোলনে শান্ত জনপদ হয়ে উঠেছিল অশান্ত

আজিজুল বুলু,নীলফামারী
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:৫১:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪ ৩৭ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নীলফামারী একটি শান্ত জনপদ। এখানকার মানুষজন শান্ত প্রকৃতির। তারা কোন রকম ঝামলা-হামলায় জড়াতে চায়না। তবে গত ১৮ জুলাই নীলফামারী শহরে বিভিন্ন স্থানে সরকারি চাকুরীতে কোটা বৈষম্য ছাত্র আন্দোলনে অশান্ত হয়ে উঠেছিল।

আন্দোলনকারীরা সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় হামলা ও ভাংচুর করে। এ সময় আইশৃংঙ্খলাবাহিনী র উপর চড়াও হয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে আইশৃংঙ্খলাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তারাও পাল্টা জবাবে সাউন্ডগান, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। আন্দোলনকারী ও আইশৃংঙ্খলাবাহিনী সাথে দফায়-দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা চলে প্রায় ৪ ঘন্টা ধরে। এ অনাকাঙ্খিত ঘটনায় সাংবাদিক,পুলিশ ও আন্দোলনকারীসহ কমপক্ষে অর্ধশতজন আহত হয়েছে।

আহতরা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়ে ঘরে ফিরেছেন। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার সান্ধ্য আইন জারি করে। সরকার এ আইন প্রয়োগ করার ফলে পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ৫৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ জনপদ এখন শান্ত রয়েছে। তবে কারফিউ চলাকালিন সময় ঘর থেকে বেরিয়ে আসা মানুষজনকে আইনশৃংঙ্খলাবাহিনীর সদস্যেদের কাছে পড়তে হচ্ছে জবাদিহির মুখে।

নীলফামারী শহরের পৌরমার্কেটে একজন রিক্সা চালক রহিমসহ অনেকের সাথে কথা হয়। তারা জানান গত ১৮ জুলাই (বৃস্পতিবার) সকাল ১০ থেকে কোটা বৈষম্য ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে বিভিন্ন বয়সের শত-শত আন্দোলনকারীরা নীলফামারী শহরের গুরুত্বপূর্ন স্থান বড়বাজার ট্রাফিক মোড়, কালিবাড়ী মোড়, পৌরমার্কেট, আনন্দবাবুর পুর, পিটিআই মোড় ,বঙ্গবন্ধু চত্বর , চৌরঙ্গীমোড় ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে জড়ো হতে থাকে।

একই সময় নীলফামারী জেলার ছয়টি উপজেলা শহর ও সৈয়দপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

আইনশৃংঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা আন্দোলনকারীদের ঘরে ফেরার জন্য অনুরোধ জানালেও তারা বলেন কোটা আন্দোলনের দাবী পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরবেন না। তবে এ আন্দোলনে ছাত্রসহ যুক্ত হয়েছিলো নানা বয়সের মানুষজন।এক পর্যয়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ চাপ সৃষ্টি করলে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধে। শুরু উত্তেজনা ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়া। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃংঙ্খলাবাহিনীর সদস্যেরা লাঠিচার্জ ,সাউন্ডগান, টিয়ারশেল ও রবারবুলেট নিক্ষেপে আন্দোলনকারীরাও আইনশৃংঙ্খলাবাহিনীর সদস্যেদের উপর চড়াও হয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে শহর জুড়ে আতঙ্ক ও থমথমে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। আন্দোলনকারী ও আইনশৃংঙ্খলাবাহিনীর সদস্যেদের সাথে সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত দফায়-দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তরে হত্যাকান্ডে ঘটনা ঘটেনি।

সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সান্ধ্য আইন (কারফিউ) জারি করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকে। এখন এ জনপদ শান্ত রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পঙ্কজ ঘোষ সকাল ৬ টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত কারপিউ শিথিলের ঘোষনা করেছেন। এ সময় আফিস-আদালত-ব্যাংক-বীমা-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও রাস্তা-ঘটে ছোট-বড় গণপরিবহন চলাচলছে স্বাভাবিক ভাবে। এরপর ৬ টা থেকে পর থেকে পরদিন সকাল ৬ টা পর্যন্ত কারফিউ চলাকালিন সময় প্রয়োজনের তাগিদে ঘর থেকে বেরিয়ে আসা মানুষজনকে পড়তে হচ্ছে সেনাবাহিনী, বর্ডারগাড ,র‌্যাব, পুলিশ ও আনছারবাহিনীর সদস্যদের জবাদিহির মুখে।

বৈষম্য ছাত্র আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে নীরফামারী সদর থানা পুলিশ ১৬জন ও সৈয়দপুর থানা পুলিশ ৪৩ জনকে গ্রেফতার করেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

বৈষম্য ছাত্র আন্দোলনে শান্ত জনপদ হয়ে উঠেছিল অশান্ত

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:৫১:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪

নীলফামারী একটি শান্ত জনপদ। এখানকার মানুষজন শান্ত প্রকৃতির। তারা কোন রকম ঝামলা-হামলায় জড়াতে চায়না। তবে গত ১৮ জুলাই নীলফামারী শহরে বিভিন্ন স্থানে সরকারি চাকুরীতে কোটা বৈষম্য ছাত্র আন্দোলনে অশান্ত হয়ে উঠেছিল।

আন্দোলনকারীরা সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় হামলা ও ভাংচুর করে। এ সময় আইশৃংঙ্খলাবাহিনী র উপর চড়াও হয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে আইশৃংঙ্খলাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তারাও পাল্টা জবাবে সাউন্ডগান, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। আন্দোলনকারী ও আইশৃংঙ্খলাবাহিনী সাথে দফায়-দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা চলে প্রায় ৪ ঘন্টা ধরে। এ অনাকাঙ্খিত ঘটনায় সাংবাদিক,পুলিশ ও আন্দোলনকারীসহ কমপক্ষে অর্ধশতজন আহত হয়েছে।

আহতরা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়ে ঘরে ফিরেছেন। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার সান্ধ্য আইন জারি করে। সরকার এ আইন প্রয়োগ করার ফলে পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ৫৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ জনপদ এখন শান্ত রয়েছে। তবে কারফিউ চলাকালিন সময় ঘর থেকে বেরিয়ে আসা মানুষজনকে আইনশৃংঙ্খলাবাহিনীর সদস্যেদের কাছে পড়তে হচ্ছে জবাদিহির মুখে।

নীলফামারী শহরের পৌরমার্কেটে একজন রিক্সা চালক রহিমসহ অনেকের সাথে কথা হয়। তারা জানান গত ১৮ জুলাই (বৃস্পতিবার) সকাল ১০ থেকে কোটা বৈষম্য ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে বিভিন্ন বয়সের শত-শত আন্দোলনকারীরা নীলফামারী শহরের গুরুত্বপূর্ন স্থান বড়বাজার ট্রাফিক মোড়, কালিবাড়ী মোড়, পৌরমার্কেট, আনন্দবাবুর পুর, পিটিআই মোড় ,বঙ্গবন্ধু চত্বর , চৌরঙ্গীমোড় ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে জড়ো হতে থাকে।

একই সময় নীলফামারী জেলার ছয়টি উপজেলা শহর ও সৈয়দপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

আইনশৃংঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা আন্দোলনকারীদের ঘরে ফেরার জন্য অনুরোধ জানালেও তারা বলেন কোটা আন্দোলনের দাবী পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরবেন না। তবে এ আন্দোলনে ছাত্রসহ যুক্ত হয়েছিলো নানা বয়সের মানুষজন।এক পর্যয়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ চাপ সৃষ্টি করলে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধে। শুরু উত্তেজনা ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়া। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃংঙ্খলাবাহিনীর সদস্যেরা লাঠিচার্জ ,সাউন্ডগান, টিয়ারশেল ও রবারবুলেট নিক্ষেপে আন্দোলনকারীরাও আইনশৃংঙ্খলাবাহিনীর সদস্যেদের উপর চড়াও হয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে শহর জুড়ে আতঙ্ক ও থমথমে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। আন্দোলনকারী ও আইনশৃংঙ্খলাবাহিনীর সদস্যেদের সাথে সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত দফায়-দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তরে হত্যাকান্ডে ঘটনা ঘটেনি।

সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সান্ধ্য আইন (কারফিউ) জারি করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকে। এখন এ জনপদ শান্ত রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পঙ্কজ ঘোষ সকাল ৬ টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত কারপিউ শিথিলের ঘোষনা করেছেন। এ সময় আফিস-আদালত-ব্যাংক-বীমা-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও রাস্তা-ঘটে ছোট-বড় গণপরিবহন চলাচলছে স্বাভাবিক ভাবে। এরপর ৬ টা থেকে পর থেকে পরদিন সকাল ৬ টা পর্যন্ত কারফিউ চলাকালিন সময় প্রয়োজনের তাগিদে ঘর থেকে বেরিয়ে আসা মানুষজনকে পড়তে হচ্ছে সেনাবাহিনী, বর্ডারগাড ,র‌্যাব, পুলিশ ও আনছারবাহিনীর সদস্যদের জবাদিহির মুখে।

বৈষম্য ছাত্র আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে নীরফামারী সদর থানা পুলিশ ১৬জন ও সৈয়দপুর থানা পুলিশ ৪৩ জনকে গ্রেফতার করেছে।