বিষ প্রয়োগে ৬ বিঘা জমির ধান নষ্ট
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:০৭:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ মে ২০২৪ ১০৪ বার পড়া হয়েছে
এক সপ্তাহ গেলেই ধান কাটা যেতো। ৬ বিঘা জমিতে বোরো ধানের দাম হতো প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। সেই জমিতে কীটনাশক বিষ প্রয়োগ করে প্রায় ৬ বিঘা জমির ধান নষ্টের অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ফুলবাড়ী থানায় অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী কৃষক সোহানুর রহমান।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার বেতদিঘী ইউনিয়নের হরগোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক মো. সোহানুর রহমান সোহানের পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত ২ একর ৮১ শতক জমিতে আদিয়ারসহ বোরো (৯০ জিরা) ধান রোপণ করেন। রোপণকৃত ধান যখন কাটার সময় হয়ে এসেছে তখন তার সৎ ভাই নাহিদ জামান লিমন ও তার সহযোগীরা রাতের আঁধারে কিটনাশক বিষ স্প্রে করে সম্প‚র্ণ ধান মেরে ফেলেছে। এতে তার ও তার আদিয়ারের প্রায় ৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা ক্ষতি সাধন করা হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগকারী কৃষক সোহানুর রহমান জানান, গত ২৪ এপ্রিল বিবাদীরা রাতের অন্ধকারে আমার ২ একর ৮১ শতাংশ জমিতে লাগানো (৯০ জিরা) ধান কিটনাশক বিষ প্রয়োগ করে নষ্ট করেছে। ইতঃপ‚র্বেও অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বিষ প্রয়োগ করে এই ফসলের বীজতলা নষ্ট করেছিল। অনেক কষ্টে বীজতলা জোগাড় করে জমি লাগাই।কিন্তু সেই জমির ধানগুলো কয়েকদিন গেলেই কেটে ঘরে তুলতাম। কিন্তু বিষ প্রয়োগে ধানগুলো নষ্ট করার কারণে আমার প্রায় ৪ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়ে গেলো। তিনি আরও বলেন, জাল দলিল তৈরি করে আমার সৎ ভাই আমার ভাগের জমি নিজের বলে দাবি করেন। সেই জাল দলিল বাতিলের মামলা করলে আদালত কর্তৃক জাল দলিল প্রমাণিত হয়। এরপর থেকে সে তার মামাদের সাথে নিয়ে আমার ক্ষতি করে আসছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে সমাধান করার কথা থাকলেও সমধান না হওয়ায় থানায় অভিযোগ দায় করতে কিছু দিন দেরি হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সোহানুর রহমানের ২ একর ৮১ শতক জমির সম্প‚র্ণ ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এই অবস্থায় ধান কেটে ঘরে তুললে শ্রমিক মজুরি উঠানো সম্ভব নয়। এ বিষয়ে একই এলাকার কৃষক ফারুক হোসেন,ফয়সাল হোসেন,আমিনুল ইসলাম, শাহিনুর রহমানের সাথে কথা বললে তারা জানান, এর আগেও শত্রুতাবশত বীজতলা নষ্ট করা হয়েছিল, এখন ৬ বিঘা জমির ধান নষ্ট করা কোনটাই উচিত নয়। আমরা চাই উভয়ের মাঝে একটা সমঝোতা আসুক, যাতে আমাদের এলাকার সম্মান অক্ষুণœু থাকে।
বিবাদী মো. নাহিদ জামান লিমন বলেন,আমি ঢাকায় থাকি ,চাকুরী করি। আমি কেমন করে জমিতে কীটনাশক বিষ প্রয়োগ করে ফসল নষ্ট করতে যাব? ওদের সাথে আমার এমন কোনো গÐগোল নেই।এখন শুনতেছি জমিতে নাকি বিষ প্রয়োগ করে ধান নষ্ট করা হয়েছে।মামারা এমন করছে, এমন প্রশ্নের জবাবে লিমন বলেন, মামারা কেন করবে? আমার কেউই এসব ঝামেলার মধ্যে নেই। ভালো করে খবর নেন আসলে কে করেছে ওই কাজ।
ওই ওয়ার্ডের মেম্বার একরামুল হক বলেন, এ ধরনের বিষ প্রয়োগের বিষয়টি নিয়ে গত সোমবার (২৯ এপ্রিল) গ্রামে বসে সমঝোতার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল কিন্তু বাদী পক্ষরা সময় নিয়েছিল।সে মোতাবেক তার সৎ ভাই লিমনকেও ঢাকা থেকেও আনছিলাম।
বেতদিঘী ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শাহ মো আব্দুল কুদ্দুস জানান, আমি বিষয়টা ভাল করে জানিনা।তবে মেম্বার বলেছিল গত সোমবার (২৯ এপ্রিল) গ্রামে একটি বৈঠক আছে,পরে স্থগিত হয়েছে। ভালো করে না জানা থাকলে কী বলার আছে।
ফুলবাড়ী থানার আফিসার ইনজার্চ মো. মোস্তাফিজার রহমান বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। খুব শীঘ্রই অপরাধীদের সনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর মো. আল কামাহ তমাল বলেন, অভিযোগের বিষয়ে কৃষি অফিসার ও ওসি সাহেবের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার বলেন,আমাদের লোক গিয়েছিল, আপাত দৃষ্টিতে মনে হয়েছে কোন রাসায়নিক পদার্থ মাত্রাতিরিক্ত দেয়ার কারণে ধানগুলো মরে গেছে।
তবে তারা যদি ফৌজদারী মামলা করেন,তখন নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বলা যাবে কি প্রয়োগ করে ফসল মেরে ফেলা হয়েছে।