ঢাকা ০৪:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রকল্পের কাজ না করে ১০ লাখ টাকা তুলে নিলেন সাবেক ইউএনও

আবু হানিফ, বাগেরহাট
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৪৪:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জুলাই ২০২৪ ৭৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাগেরহাটের শরণখোলায় প্রকল্পের কাজ না করে হাট বাজার রক্ষণাবেক্ষণ খাতের ১০ লাখ টাকা উত্তোলন করে নিয়ে গেছেন সাবেক ইউএনও মো. জাহিদুল ইসলাম। জুন মাসের বাৎসরিক হিসেব শেষে চেয়ারম্যানরা এ খবর জানতে পেরে হতবাক হয়ে যান। এ ব্যাপারে তদন্ত করে ইউএনও’র কাছ থেকে ওই টাকা ফেরৎ আনার দাবী জানিয়েছেন তারা।

তথ্যানুসন্ধ্যানে জানাগেছে, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের উপজেলার হাট বাজার রক্ষনাবেক্ষন খাতের ২৫ লাখ ৭০ হাজার টাকার কাগজে কলমে চারটি প্রকল্প গ্রহন করেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম। প্রকল্পগুলো হচ্ছে, রায়েন্দা ইউনিয়নের রায়েন্দা বাজারের সবজি মার্কেটে টল শেড নির্মান বাবদ ৯ লাখ টাকা ও টল শেড (ট্রাসের কাজ ) নির্মাণ বাবদ ৬ লাখ ৭০ হাজার টাকার দুইটি প্রকল্প। এছাড়া খোন্তাকাটা ইউনিয়নের খোন্তাকাটা বাজারের ড্রেন নির্মান বাবদ ৫ লাখ টাকা এবং সাউথখালী ইউনিয়নের তাফালবাড়ি বাজারের ড্রেন নির্মান বাবদ ৫ লাখ টাকার পৃথক দুইটি প্রকল্প তৈরী করা হয়।

এরপর ১৫ জানুয়ারী ২০২৪ তারিখের হাট বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হিসেবে ইউএনও জাহিদুল ইসলাম একাই স্বাক্ষর করে রেজুলেশন তৈরী করে ওই প্রকল্প অনুমোদন দেখান। পরে তিনি প্রকল্পের টাকা সুবিধা মতো সময়ে উত্তোলন করেন। এরপর তিনি গত ২ এপ্রিল ২০২৪ তারিখ শরণখোলা থেকে পাবনার সাথিয়া উপজেলায় বদলি হয়ে যান।

এ ব্যাপারে খোন্তাকাটা ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন খান মহিউদ্দিন বলেন, আমার ইউনিয়নে ড্রেন নির্মান প্রকল্পের কথা জানতে পেরে তৎকালিন ইউএনও’র কাছে খোজ খবর নিয়েছিলাম। বিষয়টি জেনে ফেলেছি এ কারনে তিনি আমার ইউনিয়নের প্রকল্পটি পরিবর্তন করে একই তারিখের আরেকটি রেজুলেশন তৈরী করে ধানসাগর ইউনিয়নে অন্য একটি প্রকল্প অনুমোদন দেখিয়েছেন। তবে হাট বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য হিসেবে ওই রেজুলেশনে আমার কোন স্বাক্ষর নেই।

সাউথখালী ইউপি চেয়ারম্যান ইমরান হোসেন রাজিব বলেন, আমার ইউনিয়নের তাফালবাড়ি বাজারে ড্রেন নির্মানের একটি প্রকল্প দেখিয়ে সাবেক ইউএনও মোঃ জাহিদুল ইসলাম ৫ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন বলে জানতে পেরেছি। অথচ এধরনের কোন কাজ আমার ইউনিয়নে হয়নি। এছাড়া হাট বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য হিসেবে আমি এর কিছুই জানিনা।

ধানসাগর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মাইনুল ইসলাম টিপু বলেন, আমার ইউনিয়নের রাজাপুর বাজারের টলশেড মেরামতের নামে দুইটি টল শেডের ঢেউটিন পরিবর্তন করেছে। তাতে সর্বোচ্চ ৫০/৬০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। অথচ ৫ লাখ টাকা উত্তোলন করে নিয়ে গেছেন সাবেক ইউএনও। আমি ওই কমিটির সদস্য হয়ে এর কিছুই জানিনা। তদন্ত করে ইউএনও’র কাছ থেকে ওই টাকা ফেরৎ আনার দাবী জানান তিনি।

রাজাপুর বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম কবির তালুকদার বলেন, দুইটি শেডে ২২মিলি মিটারের মাত্র ১০ বান্ডিল টিন লাগিয়ে তিনি ৫ লাখ টাকা হজম করেছেন। অথচ টলশেড দুটি এখনো জরার্জীর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

ধানসাগর, খোন্তাকাটা ও সাউথখালীর সংশ্লিষ্ট তিন চেয়ারম্যান জানান, উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে কোন প্রকল্প গ্রহন করলে তা উপজেলা প্রকৌশলীর মাধ্যমে প্রাক্কলন তৈরী করতে হয়। এছাড়া ওই খাতের অর্থে গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সব সময় ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হয়ে থাকে। কিন্তু সাবেক ইউএনও মোঃ জাহিদুল ইসলাম টাকা আত্মসাৎ করতে কোনকিছুর তোয়াক্কা করেননি। অনিক এন্টারপ্রাইজ নামের একজন ঠিকাদারের চেক ব্যবহার করে সাউথখালী ও ধানসাগর ইউনিয়নের দুইটি প্রকল্পের ১০ লাখ টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন তিনি।

কিন্তু রায়েন্দা ইউনিয়নের কাজ দুটি বাগেরহাট-৪ আসনের এমপি বদিউজ্জামান সোহাগ উদ্বোধন করায় তিনি ওই প্রকল্পের টাকা নিতে পারেননি। ওই প্রকল্পের টাকা রায়েন্দা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজমল হোসেন মুক্তার কাছে হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়েছেন।

জানতে চাইলে অনিক এন্ট্রারপ্রাইজের প্রোপাইটর মোঃ অনিক হোসেন গাজী বলেন, উপজেলা হাট বাজার রক্ষণাবেক্ষণ খাতের কোন কাজ আমি করি নাই। সাবেক ইউএনও মোঃ জাহিদুল ইসলাম আমার কাছ থেকে শুধু চেক চেয়ে নিয়েছিল। ওই চেক নিয়ে তিনি কি করেছেন তা আমার জানানেই।

এ ব্যাপারে শরণখোলা উপজেলা প্রকৌশলী ও হাট বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব মোঃ ফেরদৌস আলম বলেন, ওই ৪ প্রকল্পের তিনি কোন প্রাক্কলন তৈরী করেননি। এছাড়া কিভাবে ইউএনও টাকা উত্তোলন করেছেন তাও তিনি জানেন না।

বর্তমান শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুদিপ্ত কুমার সিংহ বলেন, আমি এ উপজেলায় সদ্য যোগদান করেছি। বিষয়টি চেয়ারম্যানদের কাছে খোজ খবর নিয়ে পরে বিস্তারিত জানাতে পারবো।

এ ব্যপারে জানতে চাইলে শরণখোলার সাবেক ইউএনও ও বর্তমানে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় ইউএনও হিসেবে কর্মরত মোঃ জাহিদুল ইসলাম দাবী করেন, চেয়ারম্যানদেরসহ কমিটির সবাইকে নিয়ে প্রকল্প অনুমোদন করে আর.এফ.টির (রিকোয়েষ্ট ফর টেন্ডার) মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে ঠিকাদার কাজ না করলে সেটা আমার দেখার বিষয় না। এছাড়া রেজুলেশনে একটু ভুল হওয়ায় দ্বিতীয় রেজুলেশনটি তৈরী করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

প্রকল্পের কাজ না করে ১০ লাখ টাকা তুলে নিলেন সাবেক ইউএনও

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৪৪:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জুলাই ২০২৪

বাগেরহাটের শরণখোলায় প্রকল্পের কাজ না করে হাট বাজার রক্ষণাবেক্ষণ খাতের ১০ লাখ টাকা উত্তোলন করে নিয়ে গেছেন সাবেক ইউএনও মো. জাহিদুল ইসলাম। জুন মাসের বাৎসরিক হিসেব শেষে চেয়ারম্যানরা এ খবর জানতে পেরে হতবাক হয়ে যান। এ ব্যাপারে তদন্ত করে ইউএনও’র কাছ থেকে ওই টাকা ফেরৎ আনার দাবী জানিয়েছেন তারা।

তথ্যানুসন্ধ্যানে জানাগেছে, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের উপজেলার হাট বাজার রক্ষনাবেক্ষন খাতের ২৫ লাখ ৭০ হাজার টাকার কাগজে কলমে চারটি প্রকল্প গ্রহন করেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম। প্রকল্পগুলো হচ্ছে, রায়েন্দা ইউনিয়নের রায়েন্দা বাজারের সবজি মার্কেটে টল শেড নির্মান বাবদ ৯ লাখ টাকা ও টল শেড (ট্রাসের কাজ ) নির্মাণ বাবদ ৬ লাখ ৭০ হাজার টাকার দুইটি প্রকল্প। এছাড়া খোন্তাকাটা ইউনিয়নের খোন্তাকাটা বাজারের ড্রেন নির্মান বাবদ ৫ লাখ টাকা এবং সাউথখালী ইউনিয়নের তাফালবাড়ি বাজারের ড্রেন নির্মান বাবদ ৫ লাখ টাকার পৃথক দুইটি প্রকল্প তৈরী করা হয়।

এরপর ১৫ জানুয়ারী ২০২৪ তারিখের হাট বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হিসেবে ইউএনও জাহিদুল ইসলাম একাই স্বাক্ষর করে রেজুলেশন তৈরী করে ওই প্রকল্প অনুমোদন দেখান। পরে তিনি প্রকল্পের টাকা সুবিধা মতো সময়ে উত্তোলন করেন। এরপর তিনি গত ২ এপ্রিল ২০২৪ তারিখ শরণখোলা থেকে পাবনার সাথিয়া উপজেলায় বদলি হয়ে যান।

এ ব্যাপারে খোন্তাকাটা ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন খান মহিউদ্দিন বলেন, আমার ইউনিয়নে ড্রেন নির্মান প্রকল্পের কথা জানতে পেরে তৎকালিন ইউএনও’র কাছে খোজ খবর নিয়েছিলাম। বিষয়টি জেনে ফেলেছি এ কারনে তিনি আমার ইউনিয়নের প্রকল্পটি পরিবর্তন করে একই তারিখের আরেকটি রেজুলেশন তৈরী করে ধানসাগর ইউনিয়নে অন্য একটি প্রকল্প অনুমোদন দেখিয়েছেন। তবে হাট বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য হিসেবে ওই রেজুলেশনে আমার কোন স্বাক্ষর নেই।

সাউথখালী ইউপি চেয়ারম্যান ইমরান হোসেন রাজিব বলেন, আমার ইউনিয়নের তাফালবাড়ি বাজারে ড্রেন নির্মানের একটি প্রকল্প দেখিয়ে সাবেক ইউএনও মোঃ জাহিদুল ইসলাম ৫ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন বলে জানতে পেরেছি। অথচ এধরনের কোন কাজ আমার ইউনিয়নে হয়নি। এছাড়া হাট বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য হিসেবে আমি এর কিছুই জানিনা।

ধানসাগর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মাইনুল ইসলাম টিপু বলেন, আমার ইউনিয়নের রাজাপুর বাজারের টলশেড মেরামতের নামে দুইটি টল শেডের ঢেউটিন পরিবর্তন করেছে। তাতে সর্বোচ্চ ৫০/৬০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। অথচ ৫ লাখ টাকা উত্তোলন করে নিয়ে গেছেন সাবেক ইউএনও। আমি ওই কমিটির সদস্য হয়ে এর কিছুই জানিনা। তদন্ত করে ইউএনও’র কাছ থেকে ওই টাকা ফেরৎ আনার দাবী জানান তিনি।

রাজাপুর বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম কবির তালুকদার বলেন, দুইটি শেডে ২২মিলি মিটারের মাত্র ১০ বান্ডিল টিন লাগিয়ে তিনি ৫ লাখ টাকা হজম করেছেন। অথচ টলশেড দুটি এখনো জরার্জীর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

ধানসাগর, খোন্তাকাটা ও সাউথখালীর সংশ্লিষ্ট তিন চেয়ারম্যান জানান, উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে কোন প্রকল্প গ্রহন করলে তা উপজেলা প্রকৌশলীর মাধ্যমে প্রাক্কলন তৈরী করতে হয়। এছাড়া ওই খাতের অর্থে গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সব সময় ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হয়ে থাকে। কিন্তু সাবেক ইউএনও মোঃ জাহিদুল ইসলাম টাকা আত্মসাৎ করতে কোনকিছুর তোয়াক্কা করেননি। অনিক এন্টারপ্রাইজ নামের একজন ঠিকাদারের চেক ব্যবহার করে সাউথখালী ও ধানসাগর ইউনিয়নের দুইটি প্রকল্পের ১০ লাখ টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন তিনি।

কিন্তু রায়েন্দা ইউনিয়নের কাজ দুটি বাগেরহাট-৪ আসনের এমপি বদিউজ্জামান সোহাগ উদ্বোধন করায় তিনি ওই প্রকল্পের টাকা নিতে পারেননি। ওই প্রকল্পের টাকা রায়েন্দা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজমল হোসেন মুক্তার কাছে হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়েছেন।

জানতে চাইলে অনিক এন্ট্রারপ্রাইজের প্রোপাইটর মোঃ অনিক হোসেন গাজী বলেন, উপজেলা হাট বাজার রক্ষণাবেক্ষণ খাতের কোন কাজ আমি করি নাই। সাবেক ইউএনও মোঃ জাহিদুল ইসলাম আমার কাছ থেকে শুধু চেক চেয়ে নিয়েছিল। ওই চেক নিয়ে তিনি কি করেছেন তা আমার জানানেই।

এ ব্যাপারে শরণখোলা উপজেলা প্রকৌশলী ও হাট বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব মোঃ ফেরদৌস আলম বলেন, ওই ৪ প্রকল্পের তিনি কোন প্রাক্কলন তৈরী করেননি। এছাড়া কিভাবে ইউএনও টাকা উত্তোলন করেছেন তাও তিনি জানেন না।

বর্তমান শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুদিপ্ত কুমার সিংহ বলেন, আমি এ উপজেলায় সদ্য যোগদান করেছি। বিষয়টি চেয়ারম্যানদের কাছে খোজ খবর নিয়ে পরে বিস্তারিত জানাতে পারবো।

এ ব্যপারে জানতে চাইলে শরণখোলার সাবেক ইউএনও ও বর্তমানে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় ইউএনও হিসেবে কর্মরত মোঃ জাহিদুল ইসলাম দাবী করেন, চেয়ারম্যানদেরসহ কমিটির সবাইকে নিয়ে প্রকল্প অনুমোদন করে আর.এফ.টির (রিকোয়েষ্ট ফর টেন্ডার) মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে ঠিকাদার কাজ না করলে সেটা আমার দেখার বিষয় না। এছাড়া রেজুলেশনে একটু ভুল হওয়ায় দ্বিতীয় রেজুলেশনটি তৈরী করা হয়েছে বলে তিনি জানান।