ঢাকা ১০:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
মন্ত্রীত্ব ফির পেতে পারেন টিউলিপ!   পলাশবাড়ী উপজেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সভা অনুষ্ঠিত হয় নিত্যপণ্যের বাড়তি ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে গাইবান্ধায় বিক্ষোভ সমাবেশ গাইবান্ধা প্রিপেইড মিটারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত ফুটপাত দখলমুক্ত করতে যশোরে এসপির অভিযান টাঙ্গাইলের চরাঞ্চলে মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের সম্মাননা ও ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প  টাঙ্গাইলে প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার রেজাউল হক খানকে বিদায় সংবর্ধনা সংসদের মেয়াদ চার বছর, দু’বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয় চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছাত্রদল নেতাকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা

পাবনায় অপহরণ করে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি যুবদল নেতার, গুলিবিদ্ধ- ১

পাবনা প্রতিনিধি 
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:৩২:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫ ২১ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

পাবনায় শর্টগান ঠেকিয়ে অপহরণ করে মুক্তিপণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে এক যুবদল নেতার বিরুদ্ধে। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) রাত ১১টার দিকে পাবনা সদরের চরতারাপুর ইউনিয়নের শুকচর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। 

ঘটনার শিকার সোহাগ ইসলাম (২৫) নামে ওই যুবক পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে অনার্স শেষ করে ঢাকায় চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। 

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সোহাগের চাচাতো ভাই গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অপহরণের ৫ ঘণ্টা পর রাত ৪টার দিকে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ। 

অপহৃত সোহাগ চরতারাপুর ইউনিয়নের শুকচর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য তোফাজ্জল হোসেন তোফাই মেম্বারের ছেলে।  তিনি  আর গুলিবিদ্ধ রফিকুল ইসলাম অন্তু একই গ্রামের মোফাজ্জল প্রামানিকের ছেলে। তিনিও সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে পড়াশোনা করেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শুকচর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য তোফাজ্জল হোসেন তোফাই  দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। 

ঢাকায় চিকিৎসার জন্য জমি বিক্রি করে বাড়িতে টাকা রেখেছিলেন। দু-একদিনের মধ্যে ঢাকায় নেওয়ার কথা ছিল। গতকাল রাত ১১টার পর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তার ছেলে সোহাগ। 

এ সময় সন্ত্রাসীরা এসে প্রথমে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে শরীরে শর্টগান ঠেকিয়ে তাকে বাড়ি থেকে জোরপূর্বক অপহরণ করেন ইউনিয়ন যুবদলের প্রচার সম্পাদক কুতুব উদ্দিন, বিএনপি নেতা পরিচয় দেওয়া মুতাহার হোসেন মোতাই ও রেজাউল করিম। 

তাদের বাধা দিতে গেলে সোহাগের চাচাতো ভাই রফিকুল ইসলাম অন্তুকে মোতাহার হোসেন মোতাই প্রথমে শর্টগান দিয়ে আঘাত করেন। পরে গুলি করেন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে তার মাথায় একটি গুলি রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। 

এরপর রাত ৪টার দিকে পুলিশ চরতারাপুরে অভিযানে গেলে সোহাগকে ফেলে পালিয়ে যান অপহরণকারীরা। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চরতারাপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক এক নেতা বলেন, বিএনপির বড় বড় নেতা ও প্রশাসন রাত ৩টার দিকে আমাকে ফোন দিয়ে বিষয়টি অবগত করেন এবং উদ্ধারে কাজ করতে বলেন। 

এরপর কুতুব ও মুতাইকে ফোন দিয়ে বলি যে তাকে দ্রুত পরিবারের কাছে ফেরত দিয়ে আসো। তাছাড়া সমস্যা হবে কিন্তু।  এরপর মোবাইলের ওপার থেকে বলে যে ১০ লাখ টাকা নিয়ে আসতে বলো তারপর ছেড়ে দিচ্ছি। 

তিনি অভিযোগ করেন, এলাকায় তারা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। নামে বেনামে সবার থেকে চাঁদা ধরছে। ফসল ও গরু চুরি থেকে শুরু করে নানা অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। এসব হাইব্রিডদের জন্য বিএনপির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। 

ভুক্তভোগী সোহাগ ইসলাম বলেন,  গতকাল রাত ১১টার দিকে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এমন সময় এলাকার কুতুব কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে এসে আমাকে অপহরণ করে। পরে রাত ৪টার দিকে প্রশাসনের চাপের মুখে আমাকে ছেড়ে দেয়। 

গুলিবিদ্ধ রফিকুল ইসলাম অন্তুর মা মোছা. মায়া খাতুন বলেন, ১০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিল। দেওয়া হয়নি এজন্য আমার ভাসুরের ছেলে সোহাগকে অপহরণ করে। আমার ছেলে এগিয়ে গেলে শর্টগান দিয়ে প্রথমে আঘাত করে। পরে গুলি করে। 

এখনো গুলি মাথার ভেতরে আছে। ডাক্তার অপারেশন করে বের করার কথা বলেছেন। আমরা প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে সুজানগর পৌর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব জসিম বিশ্বাসকে ফোন পাওয়া যায়নি। তবে সুজানগর উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব শেখ আব্দুর রউফ বলেন, সে (কুতুব) ৫ আগস্টের আগে আমার সঙ্গে চলত ও রাজনীতি করত। এরপর এখন তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই।

পাবনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম বলেন, অপহরণের ঘটনা জানতে পেরে আমরা রাতে ওই এলাকায় অভিযানে যাই। পরে চাপের মুখে তাকে ফেরত দেয়। তবে অভিযুক্তদের আটক করা সম্ভব হয়নি। থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একজনের মাথায় গুলির ঘটনা পুলিশ তদন্ত করছে। 

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

পাবনায় অপহরণ করে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি যুবদল নেতার, গুলিবিদ্ধ- ১

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:৩২:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫

পাবনায় শর্টগান ঠেকিয়ে অপহরণ করে মুক্তিপণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে এক যুবদল নেতার বিরুদ্ধে। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) রাত ১১টার দিকে পাবনা সদরের চরতারাপুর ইউনিয়নের শুকচর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। 

ঘটনার শিকার সোহাগ ইসলাম (২৫) নামে ওই যুবক পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে অনার্স শেষ করে ঢাকায় চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। 

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সোহাগের চাচাতো ভাই গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অপহরণের ৫ ঘণ্টা পর রাত ৪টার দিকে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ। 

অপহৃত সোহাগ চরতারাপুর ইউনিয়নের শুকচর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য তোফাজ্জল হোসেন তোফাই মেম্বারের ছেলে।  তিনি  আর গুলিবিদ্ধ রফিকুল ইসলাম অন্তু একই গ্রামের মোফাজ্জল প্রামানিকের ছেলে। তিনিও সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে পড়াশোনা করেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শুকচর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য তোফাজ্জল হোসেন তোফাই  দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। 

ঢাকায় চিকিৎসার জন্য জমি বিক্রি করে বাড়িতে টাকা রেখেছিলেন। দু-একদিনের মধ্যে ঢাকায় নেওয়ার কথা ছিল। গতকাল রাত ১১টার পর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তার ছেলে সোহাগ। 

এ সময় সন্ত্রাসীরা এসে প্রথমে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে শরীরে শর্টগান ঠেকিয়ে তাকে বাড়ি থেকে জোরপূর্বক অপহরণ করেন ইউনিয়ন যুবদলের প্রচার সম্পাদক কুতুব উদ্দিন, বিএনপি নেতা পরিচয় দেওয়া মুতাহার হোসেন মোতাই ও রেজাউল করিম। 

তাদের বাধা দিতে গেলে সোহাগের চাচাতো ভাই রফিকুল ইসলাম অন্তুকে মোতাহার হোসেন মোতাই প্রথমে শর্টগান দিয়ে আঘাত করেন। পরে গুলি করেন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে তার মাথায় একটি গুলি রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। 

এরপর রাত ৪টার দিকে পুলিশ চরতারাপুরে অভিযানে গেলে সোহাগকে ফেলে পালিয়ে যান অপহরণকারীরা। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চরতারাপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক এক নেতা বলেন, বিএনপির বড় বড় নেতা ও প্রশাসন রাত ৩টার দিকে আমাকে ফোন দিয়ে বিষয়টি অবগত করেন এবং উদ্ধারে কাজ করতে বলেন। 

এরপর কুতুব ও মুতাইকে ফোন দিয়ে বলি যে তাকে দ্রুত পরিবারের কাছে ফেরত দিয়ে আসো। তাছাড়া সমস্যা হবে কিন্তু।  এরপর মোবাইলের ওপার থেকে বলে যে ১০ লাখ টাকা নিয়ে আসতে বলো তারপর ছেড়ে দিচ্ছি। 

তিনি অভিযোগ করেন, এলাকায় তারা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। নামে বেনামে সবার থেকে চাঁদা ধরছে। ফসল ও গরু চুরি থেকে শুরু করে নানা অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। এসব হাইব্রিডদের জন্য বিএনপির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। 

ভুক্তভোগী সোহাগ ইসলাম বলেন,  গতকাল রাত ১১টার দিকে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এমন সময় এলাকার কুতুব কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে এসে আমাকে অপহরণ করে। পরে রাত ৪টার দিকে প্রশাসনের চাপের মুখে আমাকে ছেড়ে দেয়। 

গুলিবিদ্ধ রফিকুল ইসলাম অন্তুর মা মোছা. মায়া খাতুন বলেন, ১০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিল। দেওয়া হয়নি এজন্য আমার ভাসুরের ছেলে সোহাগকে অপহরণ করে। আমার ছেলে এগিয়ে গেলে শর্টগান দিয়ে প্রথমে আঘাত করে। পরে গুলি করে। 

এখনো গুলি মাথার ভেতরে আছে। ডাক্তার অপারেশন করে বের করার কথা বলেছেন। আমরা প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে সুজানগর পৌর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব জসিম বিশ্বাসকে ফোন পাওয়া যায়নি। তবে সুজানগর উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব শেখ আব্দুর রউফ বলেন, সে (কুতুব) ৫ আগস্টের আগে আমার সঙ্গে চলত ও রাজনীতি করত। এরপর এখন তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই।

পাবনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম বলেন, অপহরণের ঘটনা জানতে পেরে আমরা রাতে ওই এলাকায় অভিযানে যাই। পরে চাপের মুখে তাকে ফেরত দেয়। তবে অভিযুক্তদের আটক করা সম্ভব হয়নি। থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একজনের মাথায় গুলির ঘটনা পুলিশ তদন্ত করছে।