পাখিপ্রেমি বকপাড়া গ্রামের মানষগুলো শোকে মুহ্যমান
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৩:১৭:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ জুন ২০২৪ ১৫৫ বার পড়া হয়েছে
অতিথি পাখি যখন বছর ঘুরে বলিহরপুর গ্রামে আসতে শুরু করে ,তখন গ্রামের মানুষভাবে প্রিয় স্বজনরাই যেন প্রবাস থেকে বাড়ি ফিরে এসছে। তখন ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় পাখির কলতানে মুখর বলিহরপুর গ্রামের মানুষের আনন্দের সীমা থাকেনা।
কিন্তু সেই বাঁশঝাড় দুটি এখন মারা যাওয়ায় মৃত বাঁশের আগায় এখনো পাখিগুলো ভালোবাসার মায়া জড়িয়ে আঁকড়ে পড়ে আছে। পাশের ঝোপঝাড়েও আশ্রয় নিয়েছে অসংখ্য পাখি। গত ছয় মাস আগে বাঁশঝাড় দুটো মারা যায়। কেউ বলছেন পাখিদের মলমূত্রের বিষক্রিয়ায় বাঁশঝাড়দুটো মারা গেছে। আর এ কারণে পাখিপ্রেমি বলিহরপুর গ্রামের মানুষগুলো যেন শোকে মুহ্যমান।
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী -দিনাজপুর মহাসড়কের বারাইহাট রোড সংলগ্ন বলিহরপুর গ্রাম। ফুলবাড়ী থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে বলিহরপুর গ্রামকে এখন বকপাড়া গ্রাম হিসেবেই চেনে অনেকে।
সরজমিনে দেখা যায়, নবীন চন্দ্র রায়ের পুকুরপাড়ের পাখিদের সরব কোলাহলময় সেই বাশঁঝাড়টি ছয় মাস আগে মারা গেছে। মৃত বাশঁঝাড়জুড়ে এক অকৃত্রিম মায়ায় জড়িয়ে আঁকড়ে আছে পাখিগুলো। এরমধ্যে সহস্রাধিক পাখি এসেছে । আরও হাজার হাজার পাখির আগমন ঘটবে। পাখিদের কোলাহলে মুখরিত হয় পুরো এলাকা। কেউ বাসা বাঁধবে,কেউ বাঁধছে, কেউ পুরনো বাসায়, আবার কেউবা সারা বাঁশঝাড় জুড়ে প্রদক্ষিণ করছে। সকালে আহারে বেরিয়ে যায়, সন্ধ্যায় নীড়ে ফেরে। কেউবা ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফুটায়।বংশ বিস্তার করে বিচিত্র এদের জীবন প্রণালী।
কোথা থেকে আসে, আবার কোথায় চলে যায়, কেউ জানে না। চলে আসার সময়ে এলাকাবাসীর আনন্দের উচ্ছ্বাস প্রকাশে বলে ‘তাদের স্বজনরা আবার ফিরেছে আপনালয়ে। ৮/৯ বছর ধরে এই পাখিদের অস্থায়ী বসবাস। বছরের ৫ বৈশাখ পাখিগুলো আসতে শুরু করেছে। ভাদ্র -আশ্বিন মাস জুড়েই থাকবে। দুই থেকে তিন বার বাচ্চা নিয়ে তারা আবার চলে যায়। পাখিদের মধ্যে তিন প্রজাতির বক, ডাহুক,পানকৌড়ি, রাতচোরা রয়েছে।
বাশঁঝাড়ের মালিক নবীন চন্দ্র রায় বলেন, বিচিত্র পাখিদের আগমনে গ্রামবাসী আনন্দে উচ্ছ্বসিত। কত লোক যে আসে দেখতে, এটাই আমার পরিতৃপ্তি। কিন্তু বাঁশ ঝাড় দুটো গত ৬ মাস আগে থেকে মারা যেতে থাকে। এবছর তো বাঁশ ঝাড় দুটো মারা গিয়েও দাঁড়িয়ে আছে, যখন বাঁশ ঝাড়ে পচন ধরে বিলুপ্ত হবে তখন তো আর পাখিরা বসতে পারবেনা।
বাঁশ ঝাড় দুটোর দুপাশে বসবাসকারী দীনেশ চন্দ্র রায় ও সুভাষ চন্দ্র জানান, বৈশাখের শুরু থেকে আসতে শুরু করেছে। আসার ১সপ্তাহ আগে একদল পাখি টহল দিয়ে গেছে, আমরা দেখেছি।
স্থানীয় দোকানি তারা মনি, সাগর চন্দ্র,সুজনচন্দ্র, আকালু, সুজন চন্দ্রের শশুর গনেশ চন্দ্র জানান, পাখিদের তারা অত্যন্ত ভালোবাসেন,তাই দেখে রাখেন। পানি হলে তীব্র গন্ধ ছড়ায়। তাতে কি? ভালোবাসার কাছে তা একেবারে নস্যি! ভরা মৌসুমে এই হাজার হাজার বিচিত্র পাখিদের খাবার দরকার।
শিবনগর ইউপি চেয়ারম্যান ছামেদুল ইসলাম জানান, এসব অতিথি পাখি যাতে এলাকায় নির্বিঘ্নে বিচরণ করতে পারে তার সার্বিক ব্যবস্থা করবেন। প্রয়োজনে খাবার ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকতার্র সাথেও কথা বলে পদক্ষেপ নেবেন।
উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইলাম জানান, বাঁশ ঝাড় দুটো মারা যাওয়ায় সাময়িক পাখিদের অসুবিধা হবে। তবে অবাধ বিচরণের জন্য আমাদের দেখভাল অব্যাহত থাকবে। আমিও পাখিদের খোঁজখবর নিতে বলিহরপুর গ্রামে যাব। পাখিদের অভয়ারণ্য আর যত্নের ব্যাপারে আমাদের দায়িত্ব রয়েছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিল্টন বলেন, অতিথি পাখিরা আমাদের আত্মীয়র মতো। মৃত বাঁশঝাড় দুটো পুনরায় স্থাপনের ব্যবস্থা করা হবে। তাদের খাবারের জন্য ওখানের দুটো পুকুরে মাছ ছাড়া হবে। যাতে পাখিরা খেতে পারে।