নির্ধারিত সময়ের দেড় বছর পার, এখনো হয়নি সেতু,ভোগান্তি
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৪:৪৬:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ মে ২০২৪ ১৪৩ বার পড়া হয়েছে
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার জাংগাল ব্রিজটি সম্পন্ন করার নির্ধারিত সময়ের দেড় বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। এখনো এক তৃতীয়াংশ কাজ বাকি। ঠিকাদার বলছেন ইদের আগেই কাজ শেষ হবে। ২০২৩ সালের ৩১ মে দুপুর সাড়ে ৩টায় ফোনে বাংলা টাইমস প্রতিবেদককে ঠিকাদার বলেছিলেন, আশাকরি ৩/৪ মাসের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে।’ সেখানে তিন বছর ধরে ভোগান্তিতে ১৫ গ্রামের মানুষ, সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং আটপুকুরহাটে যাতায়াতকারী হাজার হাজার জনগণ।
ফুলবাড়ী উপজেলা শহর থেকে ১৩/১৪ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে কাজিহাল ইউনিয়নের চিন্তামন-আটপুকুর সড়কের গুরুত্বপূর্ণ জাংগাল নামক ব্রিজ। প্রতিদিন চলাচল করে ১৫টি গ্রামের মানুষ, ৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং আটপুকুর হাটের জনগণ। ব্রিজটি নতুনভাবে কাজ শুরু করে এক বছরের মধ্যে চলাচলের জন্য চালু হওয়ার কথা ছিলআ। কিন্তু প্রায় ৩ বছরেও কাজ শেষ না হওয়ায় ভোগান্তিতে হাজার হাজার মানুষ।
আরও পড়ুন : গভীর রাতে তুলে নিয়ে শেয়ার কেড়ে নেয় বেনজীর ও নাফিজ, দাবি সিটিজেন টিভির চেয়ারম্যানের
জানা গেছে, ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর ফুলবাড়ী উপজেলার চিন্তামন-আটপুকুর সড়কে জাংগাল নামক স্থানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল ব্যুরো (এলজিইডি) এর রংপুর বিভাগ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প -২ (আর.ডি.আর.আই.আই.পি-২) প্রকল্পের আওতায় দুই কোটি নয় লাখ টাকা ব্যয়ে এপ্রোজ সড়কসহ ২৫ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৫ দশমিক ৫ মিটার প্রস্থ, পিসি গার্ডার ব্রীজটির (সেতু) নির্মাণকাজ শুরু করে যশোরের আইসিএল প্রাইভেট লি. নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।দরপত্র আহবান করা হয়েছিলো ২০২১ সালের ৩ মার্চ। ২০২২ সালের ৮ নভেম্বর নির্মাণকাজ শেষ করে সেতুটি জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু টালবাহানায় কাজের মেয়াদ পেরিয়ে ১৮ মাস হতে চললেও নির্মাণ কাজের অগ্রগতি নেই বললেই চলে। এরমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন যন্ত্রপাতি ফেলে কয়েক দফায় লাপাত্তা হয়ে যায়। বর্তমানে পুনরায় সেতুর কাজ শুরু হলেও কাজের গতি মন্থর বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে সেতুটি নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের ১৮ মাস পেরিয়ে গেছে। এখনও এক তৃতীয়াংশ কাজ বাকি। সামনে বর্ষা মৌসুম। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন উপজেলার ওই এলাকার জলশ্বেরী,কাজিহাল, দাদুল,চাতরাখড়ি, দওলাপাড়া, রুদ্রানী, বাজনাপাড়া, মইচাঁন্দা,রামেশ্বরপুর, মিরপুর,চম্বুক, পারইল, রশিদপুর, আমড়া গ্রামের মানুষ। ৭/৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে কাজিহাল মাদরাসা, দাদুল উচ্চ বিদ্যালয় ও দাদুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রুদ্রানী উচ্চ বিদ্যালয় ও রুদ্রানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এছাড়া চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে উপজেলার সর্ববৃহৎ আটপুকুরহাটসহ আশপাশের কয়েক হাজার গ্রামের মানুষের। সপ্তাহের দু’দিন শনিবার ও মঙ্গলবার হাটের দিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ১৫ থেকে ১৮ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম এই সেতু। হাটে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৩০ থেকে ৫০ টি ধানের গাড়ী ধান আনা নেয়া করতে ওই সেতু পার হতে হয়। কিন্তু নির্মাণকাজে দীর্ঘ সময় কালক্ষেপণ হওয়ার কারণে এলাকার মানুষরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।
চলাচলের জন্য যে বিকল্প রাস্তা করা হয় তা দিয়ে দুই পাশের জমির পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় একসময় দুই পাশের আবাদি জমি তলিয়ে যায়। জমির মালিক সেসময় ফসল বাঁচাতে পানি নিষ্কাশনের জন্য ওই বিকল্প রাস্তাটি কেটে দেয় এলাকাবাসী। এর ফলে দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়।
মহেশপুর গ্রামের বদরুজ্জামান, রুহুল আমীন,ফজলার রহমান জানান, সেতুটির কারণে এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের মালামালবাহী গাড়ী চলাচলে চরম ভোগান্তি। অন্যদিকে ঝুঁকি নিয়ে চলছে ছোট-বড় যানবাহন। বিকল্প দিক দিয়ে ঘুরে যেতে হলে প্রায় ৮-১০ কিলোমিটার রাস্তা বেশি পাড়ি দিতে হয়।
ফুলবাড়ী থেকে যাতায়াত করেন সহকারী অধ্যাপক আজিজা খানম কাজীহাল মাদরাসায়, রফিকুল ইসলাম দাদুল স্কুলে। তারা জানান, আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে সেতুটি নির্মাণ কাজ চলছে। মাঝে ঠিকাদারের লোকজন লাপাত্তা হয়ে যায়। এরপর কাজ বন্ধ হয়ে থাকে দীর্ঘ সময়। বিশেষ করে উপজেলা সদরের সাথে যোগযোগ এবং দ্রুত চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। বর্ষার আগেই সেতু নির্মাণ কাজ শেষ না হলে আবারো আমাদের দুর্ভোগের সীমা থাকবে না।
শিক্ষার্থী এমরান ,সবুজ সাহা,বাদশা বলেন, এই রাস্তা দিয়ে আমাদের প্রতিদিন স্কুল কলেজ যাতায়াত করতে হয়। নির্ধারিত সময়ে সেতুটি নির্মাণ না হওয়ায় গত বর্ষায় অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্র জানায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কয়েক দফা তাগাদা দেয়ার পর সম্প্রতি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছে।
সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের ম্যানেজার জয়নাল আবেদিন জানান, সেতুটি নির্মাণ করতে ২২টি পাইলিং করতে হয়েছে। সেখানে মাটির সমস্যার কারণে পাইলিং করতে সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাই কাজে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে।
কাজিহাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মানিক রতন বলেন, সেতুটি তৈরি করতে এক বছরের কাজ তিন বছর সময় নেওয়ায় প্রায় ২০ হাজার মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলেছে। যোগাযোগের একমাত্র ব্রিজটি যেন গলার কাঁটা হয়ে সবার।
ঠিকাদার রফিকুল ইসলাম প্রধান বলেন, টেস্ট করতে কিছুটা দেরি হয়েছে। গাডারের কাজ হয়েছে। দুই সাইডের ঢালাইয়ের ,ছাদের সাটারিংয়ের কাজ শুরু হবে।
ফুলবাড়ী উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) সফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, ২০১৮ সালের রেটের কাজ। বর্তমানে সবরকম মালামালের দামবৃদ্ধি পেয়েছে তাই কিছুটা সমস্যা হয়েছে। বর্তমানে ব্রিজের ৬৪ ভাগ কাজ হয়েছে। তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জেলায় সময় চেয়ে আবেদন করেছে শনেছি ,তবে কাগজ এখনো হাতে পাইনি। তাগাদা দেয়া হচ্ছে,তবে এত বিলম্ব করার সুযোগ নেই।
দিনাজপুর জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো. মাসুদুর রহমান বাংলা টাইমসকে বলেন, বাড়তি সময় চেয়ে ঠিকাদার আবেদন করেছে। সাশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মো. আল কামাহ তমাল বাংলা টাইমসকে বলেন, খবর নিয়ে জানতে পেরেছি কাজ শুরু করেছে। বিলম্ব হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ সত্য। তবে সার্বক্ষণিক খোঁজ নিয়ে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।