নিত্যপণ্যের দামে সাধারণ মানুষ দিশেহারা
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৭:৫৮:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ জুলাই ২০২৪ ৬৪ বার পড়া হয়েছে
রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে আবারও চাল ও সব ধরনের সবজিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ঈদের আগে বিক্রি হওয়া আদা, রসুন সাড়ে কাাঁচামরিচ আলুসহ সব ধরনের সবজির দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে।
অন্যদিকে, সব ধরনের চাল কেঁজি প্রতি ৫ থেকে ৮ টাকা বেড়েছে। এছাড়াও ভোজ্য তেল মসল্লার দামও বেড়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে মধ্যবিত্ত আর নিম্ন আয়ের মানুষ চরম বিপাকে পড়েছে। বাধ্য হয়ে চাহিদার অর্ধেক পণ্য কিনে কোন রকমে জিবীকা নির্বাহ করতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার বা প্রশাসনের নজরদারি না থাকাকে দায়ি করেছে ভোক্তারা।
বিভাগীয় নগরী রংপুরের সিটি বাজার রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ সবজি ও চালের মোকাম। এখান থেকে সব ধরনের সবজি ও চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার পাইকার আর আড়তদাররা কিনে নিয়ে যায়। ঈদের পর থেকে আকস্মিকভাবে সব ধরনের সবজির দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে।
সরেজমিনে শুক্রবার (১২ জুলাই) সিটি পাইকারী চাল ও সবজি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেঁজি আদা ঈদের সময় ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এখন কেজি প্রতি দেড়শ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে সাড়ে ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। রসুনের বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়, কাঁচা মরিচ আড়াইশ টাকা কেজি, আলুর দাম কেজি প্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়াও অন্যান্য সবজির দামও বেড়েছে । ভোজ্য তেল কেজি প্রতি ৫ টাকা বেড়েছে। এ ছাড়াও সব ধরনের মাছের দামও বেড়েছে। সবজি ব্যবসায়ীরা বলছেন খারাপ আবহাওয়া সহ বন্যায় সব্জি ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় সব্জির দাম বেড়েছে।
সবজির পাইকারী আড়তদার আসলাম খান জানান, ঈদের সময় আদা রসুন কাচামরিচের দাম এত বেশী ছিলেনা। ঈদের সময় আদা ৩০০ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি করেছি। কিন্তু এখন চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় আদার দাম অনেক বেড়েছে। একইভাবে রসুনের দামও বেড়েছে।
কাঁচা মরিচের দাম আরও বাড়বে বলে আশংকা প্রকাশ করে বললেন আড়তদার মোসলেম উদ্দিন অবিরাম বৃষ্টিতে মরিচের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। অনেকের ক্ষেতের মরিচ নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে মরিচের দাম আরও বাড়বে বলে আশংকা করছেন তিনি।
আলুর দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা হবার কারন জানতে চাইলে আড়তদার আফতাব মিয়া বললেন, রংপুরের হিমাগারগুলোতে বিপুল পরিমান আলু আছে, কিন্তু ব্যবসায়ীরা হিমাগার থেকে আলু কম উত্তোলন করে বাজারে বিক্রি করছেন। মূলত আলুর বড় বড় পাইকার আর কোল্ড ষ্টোরে রাখা আলু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরী করে রাখায় আলুর বাজার অস্থির হয়ে আছে। তিনি বললেন ২৫ বছর ধরে সবজি ব্যবসা করছেন আলুর এমন উচ্চ মুল্য কখনও তিনি দেখেননি।
আলুর কোল্ডষ্টোরেজ গুলোতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন অভিযান চালালে আলুর দাম ৫০ টাকারও নীচে নেমে আসবে। তিনি আরও জানান রংপুর হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় বৃহতত্তম আলু উৎপাদন কারী জেলা এখানে হিমাগার গুলোতে এখনও যে পরিমান আলু সংরক্ষন করে রাখা আছে তা রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের আগামী সিজন পর্যন্ত আলুর চাহিদা মেটাতে সক্ষম বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে, সিটি বাজারে চালের বাজার ঘুরে ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৮ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ৩৮ টাকা কেজির মোটা চাল ৪৪ টাকা, বিআর ২৮চাল যেখানে ৪৬ টাকা কেজি ছিলো সেই চাল এখন ৫২ টাকা , বিআর ২৯ চাল ৪৭ টাকার স্থলে ৫৪ টাকা , মিনিকেট ৬৫ টাকার স্থলে ৭০ টাকা নাজিরসাল চাল ৭০ টাকার চাল ৭৫ থেকে ৭৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। হঠাৎ করে চালের দাম বৃদ্ধি পাবার কোন কারন দেখছেননা আড়তদার ব্যাবসায়ীরা। তারা বলেন এক মাস আগে বোরো ধান কাটা মাড়াই হয়েছে। কৃষক আর সাধারন গৃহস্থদের ঘরে প্রচুর ধান আছে। কিন্তু হঠাৎ করে ধানের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চালের দাম বেড়েছে।
বড় চালের আড়তদার মোকলেসুর রহমান জানান দিনাজপুর , নাটোর এবং রংপুরের মাহিগজ্ঞ মোকামে লাখ লাখ বস্তা চাল মজুত আছে। তারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার ফলে চালের দাম বেড়েছে। সহসাই দাম কমবে বলে তিনি মনে করেননা।
তবে কয়েকজন চাল ব্যাবসায়ী বলছেন খারাপ আবহাওয়া আর ধানের দাম বৃদ্ধির কারনে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। তবে এদর পাইকারী আড়তদারের কাছে বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে এর থেকে বেশী দামে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষ পত্রের অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার কারনে মধ্য নিম্নবৃত্ত , নিম্নবিত্ত পরিবারসহ সহায় সম্বলহীন পরিবারগুলো চরম বিপাকে পড়েছে। তাদের আয় বাড়েনি অথচ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষ পত্রের দাম বেড়েই চলছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ভোক্তারা বলছেন আমরা চাহিদার ৪ ভাগের তিন ভাগ কিনতাম এখন অর্ধেক কিনছি যা দিয়ে কোনভাবেই পরিবার পরিজন নিয়ে তিন বেলা চলছেনা। বাজারে প্রচুর সামগ্রী থাকলেও দাম কেন কমছেনা তার কোন জবাবদিহিতা নেই। ফলে ভোক্তারা এখন জিম্মি হয়ে পড়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
এদিকে, মাংসের দাম আগের দামে বিক্রি হলেও ডিম এখন ভোক্তাদের নাগালের বাইরে। ডিম এখন প্রতি পিস ১২ টাকা যেটা কখনই এমন দাম ছিলোনা। কেন ডিমের দাম বাড়ছে সেটা ডিম ব্যবসায়ীরাও বলছেননা। তারা বলেন বড় বড় সিন্ডিকেট চক্র এখর ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রন করছে সে কারনে দাম কমছেনা।
এজন্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধির লাগাম ধরার জন্য প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো দরকার বলে ভোক্তাদের দাবি।