ঢাকা ১২:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘নাতিনের মুখ দেখতে পারলাম না’

কুমিল্লা প্রতিনিধি
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৯:৪৩:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ১৬ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আমার ছেলের বউ মেয়ের মতো ছিল। আমার নাতিনের মুখ দেখতে পারলাম না। ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার সাতজনই মারা গেল। এটা মেনে নেয়া যায় না। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ গেটে লোকজন রাখলে এমন মৃত্যু হতো না। এতখাগুলো বললেন নিহত শাহিনুরের শ্বশুর ইউসুফ মিয়া।

মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) কুমিল্লার বুড়িচংয়ে রেলগেটে ট্রেনের ধাক্কায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকসহ ৭ যাত্রী নিহত হন তার মধ্যে একজন ছিলেন শাহিনুর। তার স্বামীর নাম মনির হোসেন।

তিনি জানান, ১০ বছরের ছেলে সৈকতকে স্কুলে পাঠিয়ে গাজীপুর বাজারে ডাক্তারের কাছে রওনা হন শাহিনুর। ফিরে এসে দুপুরে সৈকতকে ও স্বামীকে নিয়ে একসঙ্গে ভাত খাওয়ার কথা ছিল। অনাগত সন্তানের চিকিৎসার কথা মাথায় রেখে প্রতি সপ্তাহের মতো গাজীপুর বাজারে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছিলেন শাহিনুর।

তিনি আরও জানান, শাহীনুর আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েই ডাক্তারের কাছে যাচ্ছিল। কথা ছিল দুপুরে একসঙ্গে ভাত খাব।  আমার সব স্বপ্ন ভেঙে গেছে। বাড়ি থেকে একটু দূরে কালিকাপুর লেভেল ক্রসিংয়ে পৌঁছতেই ঘটে দুর্ঘটনা। লেভেল ক্রসিংয়ে উঠতেই ঢাকাগামী বিরতহীন সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায় শাহিনুরদের বহনকারী অটোরিকশাটি। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান শাহিনূরসহ ৭ জন। শাহিনুরের মৃত্যুতে বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।

স্থানীয়দের দাবি, এলাকার লোকজনের যাতায়াতে গুরুত্বপূর্ণ এই রেলগেটে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বারবার গেট নির্মাণের আশ্বাস দিলেও গেল নির্মাণ হয়নি।  এদিকে ঘটনা তদন্তে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর)  সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে উপজেলার বাকশিমূল ইউনিয়নের কালিকাপুর এলাকায় সংঘটিত এ দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে চারজন নারী। ইজিবাইক চালকসহ বাকিরা পুরুষ।

নিহতরা হলো- উপজেলার বাকশিমূল গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে ইজিবাইক চালক সাজু মিয়া (৩৮), মৃত মুনসুর আলীর ছেলে আলী আহমেদ (৮০), মৃত আবদুল খালেকের স্ত্রী লুৎফা বেগম (৫৫), মনির হোসেনের স্ত্রী শাহিনুর আক্তার শানু (৩৫), আলী আশ্রাফের স্ত্রী সফরজান বেগম (৬৫), পাশের খোদাইধুলি গ্রামের প্রয়াত আছমত আলীর ছেলে রফিস মিয়া (৬০) এবং প্রয়াত ফজলু মিয়ার স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগম (৬৫)।

কুমিল্লা রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি) ফাঁড়ির এসআই মোস্তফা কামাল বলেন, ইজিবাইকে করে সবাই বাকশিমূল গ্রাম থেকে পাশের গাজিপুর বাজারে যাচ্ছিলেন। এ সময় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী ‘সুবর্ণ এক্সপ্রেস’ ট্রেনের সামনে হঠাৎ চলে আসায় যাত্রীবাহী ইজিবাইকটি ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে প্রথমে পাঁচজন এবং পরে আরো দুইজনসহ মোট সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত এক ব্যক্তির আশঙ্কাজনক অবস্থায় কুমিল্লা ট্রমা হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

এদিকে, নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহিদা আক্তার বলেন, আমরা সবার খোঁজ-খবর রাখছি।

রেল দুর্ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ে। রেলওয়ের কুমিল্লার ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) লিয়াকত আলী মজুমদার বলেন, ঘটনাটি মর্মান্তিক। দুর্ঘটনার পর পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।

কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে রেলওয়ে কুমিল্লার সিনিয়র নির্বাহী প্রকৌশলীকে। আর বাকি তিন সদস্য হলেন পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের। তাদেরকে দ্রæত সময়ের মধ্যে তদন্ত কাজ শেষ করে দুর্ঘটনার পেছনের কারণ বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপককে জানাতে বলা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

‘নাতিনের মুখ দেখতে পারলাম না’

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৯:৪৩:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

আমার ছেলের বউ মেয়ের মতো ছিল। আমার নাতিনের মুখ দেখতে পারলাম না। ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার সাতজনই মারা গেল। এটা মেনে নেয়া যায় না। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ গেটে লোকজন রাখলে এমন মৃত্যু হতো না। এতখাগুলো বললেন নিহত শাহিনুরের শ্বশুর ইউসুফ মিয়া।

মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) কুমিল্লার বুড়িচংয়ে রেলগেটে ট্রেনের ধাক্কায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকসহ ৭ যাত্রী নিহত হন তার মধ্যে একজন ছিলেন শাহিনুর। তার স্বামীর নাম মনির হোসেন।

তিনি জানান, ১০ বছরের ছেলে সৈকতকে স্কুলে পাঠিয়ে গাজীপুর বাজারে ডাক্তারের কাছে রওনা হন শাহিনুর। ফিরে এসে দুপুরে সৈকতকে ও স্বামীকে নিয়ে একসঙ্গে ভাত খাওয়ার কথা ছিল। অনাগত সন্তানের চিকিৎসার কথা মাথায় রেখে প্রতি সপ্তাহের মতো গাজীপুর বাজারে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছিলেন শাহিনুর।

তিনি আরও জানান, শাহীনুর আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েই ডাক্তারের কাছে যাচ্ছিল। কথা ছিল দুপুরে একসঙ্গে ভাত খাব।  আমার সব স্বপ্ন ভেঙে গেছে। বাড়ি থেকে একটু দূরে কালিকাপুর লেভেল ক্রসিংয়ে পৌঁছতেই ঘটে দুর্ঘটনা। লেভেল ক্রসিংয়ে উঠতেই ঢাকাগামী বিরতহীন সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায় শাহিনুরদের বহনকারী অটোরিকশাটি। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান শাহিনূরসহ ৭ জন। শাহিনুরের মৃত্যুতে বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।

স্থানীয়দের দাবি, এলাকার লোকজনের যাতায়াতে গুরুত্বপূর্ণ এই রেলগেটে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বারবার গেট নির্মাণের আশ্বাস দিলেও গেল নির্মাণ হয়নি।  এদিকে ঘটনা তদন্তে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর)  সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে উপজেলার বাকশিমূল ইউনিয়নের কালিকাপুর এলাকায় সংঘটিত এ দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে চারজন নারী। ইজিবাইক চালকসহ বাকিরা পুরুষ।

নিহতরা হলো- উপজেলার বাকশিমূল গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে ইজিবাইক চালক সাজু মিয়া (৩৮), মৃত মুনসুর আলীর ছেলে আলী আহমেদ (৮০), মৃত আবদুল খালেকের স্ত্রী লুৎফা বেগম (৫৫), মনির হোসেনের স্ত্রী শাহিনুর আক্তার শানু (৩৫), আলী আশ্রাফের স্ত্রী সফরজান বেগম (৬৫), পাশের খোদাইধুলি গ্রামের প্রয়াত আছমত আলীর ছেলে রফিস মিয়া (৬০) এবং প্রয়াত ফজলু মিয়ার স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগম (৬৫)।

কুমিল্লা রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি) ফাঁড়ির এসআই মোস্তফা কামাল বলেন, ইজিবাইকে করে সবাই বাকশিমূল গ্রাম থেকে পাশের গাজিপুর বাজারে যাচ্ছিলেন। এ সময় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী ‘সুবর্ণ এক্সপ্রেস’ ট্রেনের সামনে হঠাৎ চলে আসায় যাত্রীবাহী ইজিবাইকটি ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে প্রথমে পাঁচজন এবং পরে আরো দুইজনসহ মোট সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত এক ব্যক্তির আশঙ্কাজনক অবস্থায় কুমিল্লা ট্রমা হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

এদিকে, নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহিদা আক্তার বলেন, আমরা সবার খোঁজ-খবর রাখছি।

রেল দুর্ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ে। রেলওয়ের কুমিল্লার ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) লিয়াকত আলী মজুমদার বলেন, ঘটনাটি মর্মান্তিক। দুর্ঘটনার পর পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।

কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে রেলওয়ে কুমিল্লার সিনিয়র নির্বাহী প্রকৌশলীকে। আর বাকি তিন সদস্য হলেন পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের। তাদেরকে দ্রæত সময়ের মধ্যে তদন্ত কাজ শেষ করে দুর্ঘটনার পেছনের কারণ বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপককে জানাতে বলা হয়েছে।