দিন বদলের গল্প মমরেজ আলীর
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:৫৪:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৭৬ বার পড়া হয়েছে
মধ্যবিত্ত পরিবারের চার ভাইয়ের মধ্যে মমরেজ আলী সেজো। উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর পড়ালেখা ছেড়ে পাড়ি জমান সৌদি আরবে তিনি। সেখান থেকে ৭ বছরে বেশ পয়সা রোজগার করে দেশে ফেরেন। কর্মক্ষেত্র চলমান রাখতে কিছু দিনের মধ্যে বাড়িতে পোল্টি খামার করেন। এর পাশাপাশি কালীগঞ্জ শহরে মাছ ও পোল্টি ফিডের ব্যবসা শুরু করেন। কিন্ত এতে আশানুরুপ লাভ ছিল না। বাধ্য হয়ে নেমে পড়েন মাছ চাষে।
এরপরের গল্প তার দিন বদলের। কেননা মাছচাষে মাত্র কয়েক বছরে খরচ বাদে প্রায় কোটি টাকা লাভ আসে তার। বর্তমানে তিনি মাছের খামার আরও বাড়িয়েছেন। এছাড়াও লিচু, ড্রাগন ও এ্যাভোকাডো চাষে সফল হয়েছেন। বর্তমানে তিনি বেশ পয়সার মালিক। আর এ সম্ভব হয়েছে তার কঠোর পরিশ্রম ও দূরদর্শিতার কারনে। এখন তিনি এ এলাকার উদ্যোক্তাদের মধ্যে সফল এবং সবচেয়ে বেশি আলোচিত। সে কারনে তার উৎপাদনশীল কর্মকান্ড এখন বেকার যুবকদের জন্য চরম উৎসাহ যোগাচ্ছে। মমরেজ আলী ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের নিয়ামতপুর ইউনিয়নের বলরামপুর গ্রামের শওকত আলীর ছেলে।
তার স্ত্রী নিম্পা খাতুন স্থানীয় এম্ ইউ কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক। ছেলে তানভীর আহম্মেদ সাউথ ইষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র। আর মেয়ে মুসকানের বয়স মাত্র সাড়ে ৪ বছর।
সরেজমিনে দেখা যায়, মমরেজ আলী কৃষি শ্রমিকদের সাথে বলরামপুর গ্রামের মাঠের এ্যাভোকাডোর বাগানে কাজ করছেন। তার পাশেই দেখা যায় মালটা ও ড্রাগন বাগান। যেখানে শ্রমিকেরা ড্রাগন তুলে বাজারজাতকরনের জন্য প্রস্তত করছেন। ওই মাঠের একটু দুরে গ্রাম ঘেষে রযেছে লিচু বাগান। এছাড়াও বিভিন্ন গ্রামের বেশ কয়েকটি বিশাল জলাশয়ে মাছ চাষ রয়েছে তার। সেখানেও মাছ পরিচর্যায় শ্রমিকেরা কাজ করছেন।
কৃষি উদ্যোক্তা মমরেজ আলী জানান, তিনি নিতান্তই একটি কৃষি পরিবারের সন্তান। বেশ কিছুদিন বিদেশে গিয়ে পয়সা রোজগার করেছেন। কিন্ত সেখানে তিনি যে কাজ করতেন সে কাজ নিজের দেশেও করার যথেষ্ঠ সুযোগ রয়েছে। তাই তিনি বাড়িতে এসে উৎপাদনশীল কাজে লেগে যান। প্রথমে তিনি শহরে পোল্টি ও মাছের খাবারের দোকান দেন। এ সুবাদে মাছ চাষী অনেকের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরী হয়। নিজের কোন পুকুর বা জলাশয় না থাকলেও তাদের পরামর্শে পুকুর বা জলাশয় লিজ নিয়ে শুরু করেন মাছচাষ। এতে লাভ সন্তোষজনক হওয়ায় পুকুর বাড়াতে থাকেন। বর্তমানে ৩০০ বিঘা জলাকারের মাছচাষ রয়েছে তার।
এই উদ্যোক্তা আরও বলেন,তার পাশেই দেখা যায় ১৮ বিঘা জমির ড্রাগন বাগান। যেখানে শ্রমিকেরা ড্রাগন তুলে বাজারজাতকরনের জন্য প্রস্তত করছেন। ২ বিঘা মালটা, ৪ বিঘা জমিতে লিচু বাগান ছাড়াও বিভিন্ন গ্রামের ৩’শ বিঘা জলাকারের মাছ চাষ রয়েছে তার। এগুলো দেখভাল করাসহ ক্ষেত পরিচর্যার জন্য মোট ৪২ জন শ্রমিক সারাবছর কাজ করে।
তিনি বলেন, বিদেশ গিয়ে এতোদিন থাকলে কোন রকমের ঝামেলা ছাড়ায় বেশ রোজগার করতে পারতেন। কিন্ত দেশে ফিরে উৎপাদনমুখী কাজেও তার চেয়ে কম লাভ হয়নি। আর সবচেয়ে বড় কথা একদিকে নিজে লাভবান হচ্ছেন। অন্যদিকে সারাবছর তার সাথে থাকা ৪২ জনের পরিবার ভালোভাবে চলতে পারছে। উদ্যোক্তা মমরেজ আলী আরও বলেন, উৎপাদমুখী কোন কাজই ছোট নয়। কর্মবিহীন জীবনে মানুষ নিরানন্দ ও উদাসীনতায় ভোগে। অন্যদিকে উৎপাদনমুখী কিছু উৎপাদন করতে পারলে নিজের মধ্যেও ভালো অনুভব হয়।
মমরেজ আলী আরও জানান, এদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে প্রতিবছর পর্যাপ্ত শ্রমশক্তি রপ্তানী করা হয়। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই কারিগরি জ্ঞানহীন। যে কারনে তারা বেতনও কম পান। তবে বিদেশে তাদের কঠোর পরিশ্রম করা লাগে। সেখানেও কোন ফসলী ক্ষেত কলকারখানায় কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে টাকা রোজগার করতে হয়। তাছাড়াও দেশের কর্মক্ষম বেকার জনগোষ্টির বেশিরভাগেরই বিদেশে যাওয়ার পর্যাপ্ত অর্থ নেই। তিনি বলেন,যে পরিশ্রম বিদেশে গিয়ে করতে হয় এবং যারা বেকার বসে থাকে তারাও যদি উৎপাদনশীল কিছু করতে অনুরুপ পরিশ্রম করে তাহলে নিজের দেশে থেকেই নিজের কর্মসংস্থান তৈরী করা সম্ভব। এখান থেকেও দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারে।
বলরামপুর গ্রামের বাসিন্দা গোলাম রসুল জানান, তাদের গ্রামের মমরেজ আলী অত্যন্ত ধৈয্যশীল ও কঠোর পরিশ্রমী একজন মানুষ। তিনি মাছ ও দেশী বিদেশী বিভিন্ন ফলচাষ করে চরম সফলতা পেয়েছেন। গ্রামের অনেক বেকার যুবক এখন তাকে অনুসরন করছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা মাহাবুব আলম রনি জানান, এ উপজেলায় যারা কৃষিকে সমৃদ্ধশালী করছেন তাদের মধ্যে মমরেজ একজন। বিশেষ করে এ উপজেলাতে মাছচাষে তিনিই সেরা। তাছাড়াও লিচু, মালটা, ড্রাগন ও সর্বশেষ মুল্যবান এ্যাভোকাডোর বাগান করেছেন।
কৃষিবিদ রনি আরো জানান, তিনি নিজে তার কর্মকান্ডগুলো দেখেছেন। ঠিকমত পরামর্শও প্রদান করে চলেছেন।