ঢাকা ০৭:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তিস্তায় নাখোশ! মোদীকে কড়া চিঠি মমতার

বাংলা টাইমস ডেস্ক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:৩৩:১৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জুন ২০২৪ ১১৪ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের পর আপত্তি তোলা হয় তৃণমূলের তরফ থেকে। সোমবার (২৪ জুন) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে ‘ফরাক্কা-গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তি’ নবীকরণ এবং তিস্তার জল ভাগাভাগি নিয়ে দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন।

তিনি লিখেছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ছাড়া তিস্তা এবং ফরাক্কার পানিবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের সাথে কোনো চুক্তিতে আমার তীব্র আপত্তি রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের স্বার্থ নিয়ে কোনো আপস করব না।

চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী আরও লিখেছেন, গঙ্গা এবং তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে হয়তো আপনার কিছু আলোচনা হয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকারের কোনো মতামত না নিয়ে একতরফা আলোচনা গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশের সরকার এবং জনগণের সাথে যে তিনি সুসম্পর্ক রাখতে চান, সেই বার্তা দিয়ে মমতা জানিয়েছেন, ছিটমহল বিনিময়, রেল ও বাস যোগাযোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিবিড় হয়েছে।

কিন্তু, তারপর তার মন্তব্য, কিন্তু পানি অত্যন্ত মূল্যবান। জীবনধারণের রসদ নিয়ে কোনো সমঝোতা করতে আমরা প্রস্তুত না। পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছে পানিবণ্টনের বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বলেও অভিযোগ করেন মমতা।

উল্লেখ্য, গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে ১৯৯৬ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চুক্তি হয়েছিলো। সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২৬ সালে। এ অবস্থায় গত শনিবার নয়াদিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ‘ফরাক্কা-গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি’ নবীকরণের জন্য ‘যৌথ কারিগরি কমিটি’ তৈরি করা হয়। ফলে দু’দেশের মধ্যে পানিবণ্টন চুক্তি নবীকরণের প্রক্রিয়া শুরু হলো।

১৯৯৬-এ যখন ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ৩০ বছরের জন্য গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি হয়েছিলো, তখন শেখ হাসিনার সরকার ছিলো। দিল্লিতে ছিলো এইচডি দেবগৌড়ার যুক্তফ্রণ্ট সরকার। পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু সেই সময় গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তিতে সদর্থক ভূমিকা নিয়েছিলেন। তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার সেই সময় রাজ্যকে প্রয়োজনীয় গুরুত্ব দিলেও মোদীর জমানায় যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে অগ্রাহ্য করে রাজ্যকে পুরো প্রক্রিয়া থেকে দূরে সরিয়ে রাখা। এমনটা অভিযোগ উঠেছে ইতিমধ্যেই।

১৯৯৬ সালের চুক্তি অনুযায়ী, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিদিন ৪০ হাজার কিউসেক করে পানি পায় ভারত। ফরাক্কা ব্যারাজ থেকে ফিডার ক্যানাল হয়ে কলকাতা বন্দরে যায় সেই পানি। অবশিষ্ট পানি মূল ব্যারেজ হয়ে আসে বাংলাদেশে। তবে মার্চ-এপ্রিলে নদীতে পানি কমতে শুরু করলে সমস্যা বাড়ে।

চুক্তি অনুযায়ী, মার্চ মাসে ২০ দিন বাংলাদেশে ৩৫ হাজার কিউসেক করে পানি আসে। পরবর্তী ১০ দিন ভারত পায় একই পরিমাণ পানি। এপ্রিলে উল্টো। ওই মাসে ভারত ২০ দিন পায় ৩৫ হাজার কিউসেক পানি। বাংলাদেশ শেষ ১০ দিন পাবে একই পরিমাণ পানি। বাকি সময় নদীতে যে পানিপ্রবাহ থাকবে, তা সমান ভাবে পাবে দু’দেশ।

প্রায় ৮ বছর আগে ফরাক্কা ব্যারেজ থেকে ঠিক ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে পাংশায় পদ্মা নদীর উপর বাংলাদেশ সরকার বাঁধ নির্মাণ করতে চাইলে আপত্তি তুলেছিলো পশ্চিমবঙ্গ সরকার। দুই দেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত জলঙ্গি এবং মাথাভাঙা নদী এরমধ্যে পদ্মার সাথে সংযোগ হারিয়ে ফেলেছে বলে চিঠিতে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি লিখেছেন, ফলে সুন্দরবনে মিষ্টি পানির প্রবাহ ব্যাহত হয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৮৩ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি অস্থায়ী চুক্তি হয়েছিলো। ২০১১ সালে আর একটি তিস্তা চুক্তির খসড়া তৈরি করে দু’দেশ। যেখানে শুকনো মৌসুমে ভারতের ৩৭.৫ শতাংশ এবং বাংলাদেশের ৪২.৫ শতাংশ পানি পাওয়ার কথা হয়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই চুক্তির বিরোধিতা করেন, পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থহানির যুক্তি দেখিয়ে। যেহেতু ভারতের সংবিধান অনুযায়ী পানির উপর রাজ্যের অধিকার স্বীকৃত, তাই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তি উপেক্ষা করে তিস্তা চুক্তি রূপায়ণ কার্যত সম্ভব নয় কেন্দ্রের পক্ষে। সূত্র : আনন্দবাজার

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

তিস্তায় নাখোশ! মোদীকে কড়া চিঠি মমতার

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:৩৩:১৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জুন ২০২৪

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের পর আপত্তি তোলা হয় তৃণমূলের তরফ থেকে। সোমবার (২৪ জুন) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে ‘ফরাক্কা-গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তি’ নবীকরণ এবং তিস্তার জল ভাগাভাগি নিয়ে দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন।

তিনি লিখেছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ছাড়া তিস্তা এবং ফরাক্কার পানিবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের সাথে কোনো চুক্তিতে আমার তীব্র আপত্তি রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের স্বার্থ নিয়ে কোনো আপস করব না।

চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী আরও লিখেছেন, গঙ্গা এবং তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে হয়তো আপনার কিছু আলোচনা হয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকারের কোনো মতামত না নিয়ে একতরফা আলোচনা গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশের সরকার এবং জনগণের সাথে যে তিনি সুসম্পর্ক রাখতে চান, সেই বার্তা দিয়ে মমতা জানিয়েছেন, ছিটমহল বিনিময়, রেল ও বাস যোগাযোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিবিড় হয়েছে।

কিন্তু, তারপর তার মন্তব্য, কিন্তু পানি অত্যন্ত মূল্যবান। জীবনধারণের রসদ নিয়ে কোনো সমঝোতা করতে আমরা প্রস্তুত না। পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছে পানিবণ্টনের বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বলেও অভিযোগ করেন মমতা।

উল্লেখ্য, গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে ১৯৯৬ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চুক্তি হয়েছিলো। সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২৬ সালে। এ অবস্থায় গত শনিবার নয়াদিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ‘ফরাক্কা-গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি’ নবীকরণের জন্য ‘যৌথ কারিগরি কমিটি’ তৈরি করা হয়। ফলে দু’দেশের মধ্যে পানিবণ্টন চুক্তি নবীকরণের প্রক্রিয়া শুরু হলো।

১৯৯৬-এ যখন ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ৩০ বছরের জন্য গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি হয়েছিলো, তখন শেখ হাসিনার সরকার ছিলো। দিল্লিতে ছিলো এইচডি দেবগৌড়ার যুক্তফ্রণ্ট সরকার। পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু সেই সময় গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তিতে সদর্থক ভূমিকা নিয়েছিলেন। তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার সেই সময় রাজ্যকে প্রয়োজনীয় গুরুত্ব দিলেও মোদীর জমানায় যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে অগ্রাহ্য করে রাজ্যকে পুরো প্রক্রিয়া থেকে দূরে সরিয়ে রাখা। এমনটা অভিযোগ উঠেছে ইতিমধ্যেই।

১৯৯৬ সালের চুক্তি অনুযায়ী, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিদিন ৪০ হাজার কিউসেক করে পানি পায় ভারত। ফরাক্কা ব্যারাজ থেকে ফিডার ক্যানাল হয়ে কলকাতা বন্দরে যায় সেই পানি। অবশিষ্ট পানি মূল ব্যারেজ হয়ে আসে বাংলাদেশে। তবে মার্চ-এপ্রিলে নদীতে পানি কমতে শুরু করলে সমস্যা বাড়ে।

চুক্তি অনুযায়ী, মার্চ মাসে ২০ দিন বাংলাদেশে ৩৫ হাজার কিউসেক করে পানি আসে। পরবর্তী ১০ দিন ভারত পায় একই পরিমাণ পানি। এপ্রিলে উল্টো। ওই মাসে ভারত ২০ দিন পায় ৩৫ হাজার কিউসেক পানি। বাংলাদেশ শেষ ১০ দিন পাবে একই পরিমাণ পানি। বাকি সময় নদীতে যে পানিপ্রবাহ থাকবে, তা সমান ভাবে পাবে দু’দেশ।

প্রায় ৮ বছর আগে ফরাক্কা ব্যারেজ থেকে ঠিক ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে পাংশায় পদ্মা নদীর উপর বাংলাদেশ সরকার বাঁধ নির্মাণ করতে চাইলে আপত্তি তুলেছিলো পশ্চিমবঙ্গ সরকার। দুই দেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত জলঙ্গি এবং মাথাভাঙা নদী এরমধ্যে পদ্মার সাথে সংযোগ হারিয়ে ফেলেছে বলে চিঠিতে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি লিখেছেন, ফলে সুন্দরবনে মিষ্টি পানির প্রবাহ ব্যাহত হয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৮৩ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি অস্থায়ী চুক্তি হয়েছিলো। ২০১১ সালে আর একটি তিস্তা চুক্তির খসড়া তৈরি করে দু’দেশ। যেখানে শুকনো মৌসুমে ভারতের ৩৭.৫ শতাংশ এবং বাংলাদেশের ৪২.৫ শতাংশ পানি পাওয়ার কথা হয়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই চুক্তির বিরোধিতা করেন, পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থহানির যুক্তি দেখিয়ে। যেহেতু ভারতের সংবিধান অনুযায়ী পানির উপর রাজ্যের অধিকার স্বীকৃত, তাই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তি উপেক্ষা করে তিস্তা চুক্তি রূপায়ণ কার্যত সম্ভব নয় কেন্দ্রের পক্ষে। সূত্র : আনন্দবাজার