পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁস
তালিকা হচ্ছে সেই বিসিএস ক্যাডারদের
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১০:৩৭:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ জুলাই ২০২৪ ২৩৮ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী প্রশ্নফাঁসকান্ডে তার দুর্নীতির বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। স্বীকারোক্তিতে তিনি বলেন তার হাত ধরে অনেকেই বিসিএস ক্যাডার হয়েছে। সব ক্যাডারেই রয়েছেন তার লোক। তবে আবেদ আলীর হাত ধরে যারা বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন, তাদের তালিকা করছে একটি সংস্থা।
গত ২৪তম ব্যাচে পিএসসির প্রশ্নফাঁস এর ব্যাপকতা বাড়ে। পরে ২৫তম ব্যাচে প্রশ্নফাঁস বিষয়টি ধরা পড়ে। ওই সময় পিএসসির মেম্বার ছিলেন মাহফুজুর রহমান। আর তার ড্রাইভার ছিলেন সৈয়দ আবেদ আলী। তার নেতৃত্বে একটি গ্রুপ থাকতো। তারা কাস্টমার যোগাড় করে দেয়ার দায়িত্বে ছিলো।
ঢাকায় গুলশান এলাকায় একটি ভবনে এবং নীলফামারির কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ‘ভিন্ন জগৎ’ নামক একটি রিসোর্ট ছিলো মাহফুজুর রহমানের। যারা টাকা দিতো, তাদের এই দুই স্থানে রেখে পরীক্ষার একদিন আগে প্রশ্নপত্র দেয়া হতো। সেখানে পড়ালেখার ব্যবস্থা করা হতো। পরদিন পরীক্ষায় তারাই সর্বোচ্চ মার্ক পেতো। এভাবে মাহফুজুর রহমান হাজার হাজার কোটি টাকা কামিয়েছেন।
স্বাস্থ্যের আলোচিত বিতর্কিত মিঠু ঠিকাদারও প্রশ্নফাঁস চক্রের সাথে জড়িত ছিলো। তার উত্থান মূলত এভাবেই। সৈয়দ আবেদ আলীর হাত ধরে যারা বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন, তাদের তালিকা প্রণয়নের কাজ মঙ্গলবার (৯ জুলাই) থেকে শুরু করেছে একটি সংস্থা।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আবেদ আলী জানান, ঢাকায় তার একটি ৬ তলা বাড়ি, ৩টি ফ্ল্যাট ও একটি গাড়ি রয়েছে। গ্রামের বাড়িতে রয়েছে ডুপ্লেক্স ভবন। তবে আবেদ আলীর আরও সম্পদ রয়েছে।
এদিকে, অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ড্রাইভার আবেদ আলী যদি শত শত কোটি টাকার মালিক হয়, তাহলে তিনি পিএসসির সদস্য মাহফুজুর রহমানসহ যেসব কর্মকর্তার গাড়ি চালিয়েছেন, তারা কতো হাজার কোটি টাকার মালিক। তা বোঝার অপেক্ষা রাখে না। মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে ওই সময় মামলা হয়। পরে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। কিন্তু ততোক্ষণে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যান। তার সাথে বিএনপি-জামায়াত জোটের একটি রাজনৈতিক সিন্ডিকেট ছিলো। আর তাদের কতিপয় ক্ষমতাধর নেতা প্রশ্নফাঁসের এই টাকার ভাগ পেতেন। মাহফুজুর রহমান ছিলেন হাওয়া ভবন কানেকটেড। পিএসসিতে আলাদা একটি রুম ছিলাে। এখানে বসে তিনি রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করতেন। দলীয় সংসদ সদস্য মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। এ কারণে তাকে ভয় পেতেন পিএসসির চেয়ারম্যানসহ অনেকে।
এদিকে, আবেদ আলীর সাথে প্রশ্নফাঁসে জড়িত আরো একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীকে ১০ কোটি টাকার চেকসহ মঙ্গলবার (৯ জুলাই) গ্রেপ্তার করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে তিনিও জড়িত। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তার মাধ্যমে বের হবে কোন কোন কর্মকর্তা জড়িত এবং টাকার ভাগ কারা পেত।
মাহফুজুর রহমানের সময় বিএনপি-জামায়াত-শিবিরসহ চার দলীয় জোটের দলীয় নেতাকর্মীরা বেশি ঢুকেছে বিসিএস ক্যাডারে। তবে দলের পরিচয় দিলেও টাকা দেয়া লাগছে প্রত্যককে। শত শত কোটি টাকা একটি ব্যাচ থেকে কামিয়েছে তারা। আবেদ আলী স্বীকারোক্তিতে সব বলে দিয়েছে।
সোমবার (০৮ জুলাই) প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত অভিযোগে রাজধানীর শেওড়াপাড়া থেকে সৈয়দ আবেদ আলী ও তার বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান ওরফে সিয়ামসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান মোহাম্মদ আলী বলেন, প্রশ্নফাঁস ঘটনার সাথে অনেকের নাম আসছে। জড়িত প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করা হবে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, প্রশ্নফাঁস ঘটনার সাথে যারাই জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।