ঢাকা ০৮:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টাঙ্গাইলে অশ্লীল নৃত্যের অভিযোগে মেলা বন্ধ

মোঃ মশিউর রহমান, টাঙ্গাইল
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৯:১১:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫ ২৪ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

টাঙ্গাইলের সখীপুরে ৭৬ বছরের পুরনো ফাইলা পাগলার মেলা বন্ধ ঘোষণা করেছে যৌথ বাহিনী। রবিবার (১২ জানুয়ারি) বিকালে উপজেলার দাড়িয়াপুর ইউনিয়নের দাড়িয়াপুরে অবস্থিত ফাইলা পাগলার মাজার প্রাঙ্গণে উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও থানা পুলিশ অভিযান শেষে মেলা বন্ধের এ ঘোষণা দেন।

অভিযানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল রনী, সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন এ টি এম ফজলে রাব্বি প্রিন্স, সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। জানা গেছে, ১৯৪৯ সালে উপজেলার দাড়িয়াপুর গ্রামে প্রথম ফাইলা পাগলার মেলা শুরু হয়।

প্রতিবছরের হিজরি রজব মাসের প্রথম দিন থেকে মেলা শুরু হয়ে মাসব্যাপী চলে এর কার্যক্রম। পূর্ণিমার রাতে হয় বড়মেলা। তবে মানতকারী, ভক্ত-দর্শনার্থীদের আনাগোনা থাকে সারা মাস। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের হাজার হাজার লোক ব্যান্ডপার্টিসহ মানত করা মোরগ, খাসি, গরুসহ নানা পণ্যসামগ্রী নিয়ে হাজির হয়। মাজারের চারপাশের প্রায় এক কিলোমিটার দূর পর্যন্ত লোকজন মোরগ, গরু-খাসি জবাই করে মানত পূরণ করে। এদিকে, মাজারঘেঁষেই পাগল ভক্তদের বসার আস্তানা। সেখানে প্রকাশ্যে গাঁজা সেবন করা হয়। এই সুযোগে দূরদূরান্ত থেকে আসা ভক্ত ও যুবকরা অনেকটা প্রকাশ্যেই মাদক সেবন করে। এ ছাড়া মেলাকে কেন্দ্র করে প্রতিরাতে অশ্লীল নৃত্যের আয়োজন করা হয় বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।

বিষয়টি নিয়ে সচেতন নাগরিক সমাজ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দেয়। পরে রবিবার বিকালে যৌথ বাহিনী মেলা বন্ধে অভিযান চালায়। এ সময় ব্যবসায়ী ও মেলায় আগত দর্শনার্থীদের মেলাস্থল ত্যাগ করতে ১৫ মিনিট সময় বেঁধে দেওয়া হয়। পরে দোকানপাট সরিয়ে নিতে ব্যবসায়ীদের দুই ঘণ্টা সময় দেয় যৌথ বাহিনী। পরে মেলায় আসা লোকজন দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। এ সময় মেলায় বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে আসা ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। পরে তারা মালামাল সরাতে দুই দিন সময় চান। এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল রনী বলেন, ‘মেলার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ ছিল। আমরা অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতাও পেয়েছি। এ কারণে মেলাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে মাজার কমিটির সভাপতি কবির হাসান অভিযোগ করে বলেন, ‘একটি মহল মেলাটি বন্ধ করার জন্য পাঁয়তারা করছে। মাজারের পাশ থেকে পাগল ভক্তদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবুও মেলাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মেলাটি বন্ধ করায় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে ফাইলা পাগলার মাজারে পরপর দুটি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে মাজারের খাদেমসহ আট জন নিহত হন। আহত হন কমপক্ষে ১৫ জন। এ হামলার পর কয়েক বছর মেলায় লোকজন কম হচ্ছিল। ধীরে ধীরে সেই ভয় কেটে যাওয়ার পর থেকে লোকজন মেলায় বেশি আসছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

টাঙ্গাইলে অশ্লীল নৃত্যের অভিযোগে মেলা বন্ধ

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৯:১১:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫

টাঙ্গাইলের সখীপুরে ৭৬ বছরের পুরনো ফাইলা পাগলার মেলা বন্ধ ঘোষণা করেছে যৌথ বাহিনী। রবিবার (১২ জানুয়ারি) বিকালে উপজেলার দাড়িয়াপুর ইউনিয়নের দাড়িয়াপুরে অবস্থিত ফাইলা পাগলার মাজার প্রাঙ্গণে উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও থানা পুলিশ অভিযান শেষে মেলা বন্ধের এ ঘোষণা দেন।

অভিযানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল রনী, সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন এ টি এম ফজলে রাব্বি প্রিন্স, সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। জানা গেছে, ১৯৪৯ সালে উপজেলার দাড়িয়াপুর গ্রামে প্রথম ফাইলা পাগলার মেলা শুরু হয়।

প্রতিবছরের হিজরি রজব মাসের প্রথম দিন থেকে মেলা শুরু হয়ে মাসব্যাপী চলে এর কার্যক্রম। পূর্ণিমার রাতে হয় বড়মেলা। তবে মানতকারী, ভক্ত-দর্শনার্থীদের আনাগোনা থাকে সারা মাস। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের হাজার হাজার লোক ব্যান্ডপার্টিসহ মানত করা মোরগ, খাসি, গরুসহ নানা পণ্যসামগ্রী নিয়ে হাজির হয়। মাজারের চারপাশের প্রায় এক কিলোমিটার দূর পর্যন্ত লোকজন মোরগ, গরু-খাসি জবাই করে মানত পূরণ করে। এদিকে, মাজারঘেঁষেই পাগল ভক্তদের বসার আস্তানা। সেখানে প্রকাশ্যে গাঁজা সেবন করা হয়। এই সুযোগে দূরদূরান্ত থেকে আসা ভক্ত ও যুবকরা অনেকটা প্রকাশ্যেই মাদক সেবন করে। এ ছাড়া মেলাকে কেন্দ্র করে প্রতিরাতে অশ্লীল নৃত্যের আয়োজন করা হয় বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।

বিষয়টি নিয়ে সচেতন নাগরিক সমাজ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দেয়। পরে রবিবার বিকালে যৌথ বাহিনী মেলা বন্ধে অভিযান চালায়। এ সময় ব্যবসায়ী ও মেলায় আগত দর্শনার্থীদের মেলাস্থল ত্যাগ করতে ১৫ মিনিট সময় বেঁধে দেওয়া হয়। পরে দোকানপাট সরিয়ে নিতে ব্যবসায়ীদের দুই ঘণ্টা সময় দেয় যৌথ বাহিনী। পরে মেলায় আসা লোকজন দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। এ সময় মেলায় বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে আসা ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। পরে তারা মালামাল সরাতে দুই দিন সময় চান। এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল রনী বলেন, ‘মেলার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ ছিল। আমরা অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতাও পেয়েছি। এ কারণে মেলাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে মাজার কমিটির সভাপতি কবির হাসান অভিযোগ করে বলেন, ‘একটি মহল মেলাটি বন্ধ করার জন্য পাঁয়তারা করছে। মাজারের পাশ থেকে পাগল ভক্তদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবুও মেলাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মেলাটি বন্ধ করায় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে ফাইলা পাগলার মাজারে পরপর দুটি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে মাজারের খাদেমসহ আট জন নিহত হন। আহত হন কমপক্ষে ১৫ জন। এ হামলার পর কয়েক বছর মেলায় লোকজন কম হচ্ছিল। ধীরে ধীরে সেই ভয় কেটে যাওয়ার পর থেকে লোকজন মেলায় বেশি আসছে।