ঢাকা ০৫:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউনিসেফের প্রতিবেদন

জলবায়ু সংকটে ৩.৩ কোটি শিশুর পড়াশোনোয় বিঘ্ন

বাংলা টাইমস ডেস্ক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:০০:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫ ১৪ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

চরম আবহাওয়ার কারণে গত বছর বাংলাদেশের প্রায় ৩.৩ কোটি শিশুর পড়াশোনো বিঘ্নিত হয়েছে। জাতিসংঘেরর শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।  

‘লার্নিং ইন্টারাপটেড: গ্লোবাল স্ন্যাপশট অব ক্লাইমেট-রিলেটেড স্কুল ডিসরাপশন ইন ২০২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, তাপপ্রবাহ, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও খরার মতো বৈরী আবহাওয়ার কারণে বিশ্বের ৭৭টি দেশের অন্তত ২৪ কোটি ৭০ লাখ শিশুর শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়েছে। আর এসব ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল দক্ষিণ এশিয়া।

গত বছরের এপ্রিল-মে মাসে তাপপ্রবাহের কারণে শিশুরা পানিশূন্যতা এবং হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি তৈরি হয়। তাই দেশের স্কুলগুলো দুই সপ্তাহ বন্ধ রাখা হয়। এছাড়াও ঘূর্ণিঝড় রিমাল ও জুন মাসে ভয়াবহ বন্যার কারণে দেশের বিভিন্ন জেলায় একাধিকবার স্কুল বন্ধ রাখা হয়। এতে শিক্ষা কার্যক্রম আরও বিঘ্নিত হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশজুড়ে ১.৮৪ কোটি মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাদের মধ্যে শিশুই ৭০ লাখ। বন্যার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সিলেট। তীব্র বন্যায় জেলাটিতে বিপুল সংখ্যক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ছয় লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে।

ইউনিসেফের অনুমিত হিসাব অনুযায়ী, গত বছর জলবায়ুজনিত কারণে সিলেট অঞ্চলে শিশুরা সব মিলিয়ে আট সপ্তাহ পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আর খুলনা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে বঞ্চিত হয়েছে ছয় সপ্তাহ।

ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, ‘জলবায়ু সংকটের ফলে চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলো বাংলাদেশে শিশুদের পড়াশোনার ওপর প্রভাব ফেলছে এবং তাদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে।’

তিনি বলেন, চরম তাপমাত্রা ও অন্যান্য জলবায়ুজনিত দুর্যোগে কেবল স্কুলেরই ক্ষতি হয় না, বরং এতে শিক্ষার্থীদের স্মৃতিশক্তি, মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব পড়ে। দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকার ফলে শিশুদের ঝরে পড়ার ঝুঁকি বাড়ে। পাশাপাশি পরিবারের অর্থনৈতিক চাপের কারণে কিশোরী মেয়েদের বাল্যবিয়ের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বাল্যবিয়ে হওয়া শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

ইউনিসেফ চিলড্রেন’স ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স অনুযায়ী, জলবায়ু ও পরিবেশগত ঝুঁকির কারণে বাংলাদেশের শিশুরা ইতিমধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের তালিকায় রয়েছে। এসব দুর্যোগের ফলে দেশের ‘শিক্ষাগত দারিদ্র্য’ আরও বাড়ে, যেখানে প্রতি দুই শিশুর মধ্যে একটি শিশু যে শ্রেণিতে পড়ার কথা, সেই শ্রেণিতে পড়তে পারে না এবং প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর দুই-তৃতীয়াংশ শিশু মৌলিক গণনাটুকুও করতে পারে না।

প্রতিবেদনে এও বলা হয়েছে, স্কুল ও শিক্ষাব্যবস্থা এসব প্রতিকূলতা থেকে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় ততটা সক্ষম নয়। এছাড়াও শিক্ষায় জলবায়ুকেন্দ্রিক আর্থিক বিনিয়োগও লক্ষণীয়ভাবে কম।

প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়ন প্রতিষ্ঠান, দাতা সংস্থা, বেসরকারি খাত ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি নীতি ও পরিকল্পনায় শিশুদের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

ইউনিসেফের প্রতিবেদন

জলবায়ু সংকটে ৩.৩ কোটি শিশুর পড়াশোনোয় বিঘ্ন

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:০০:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫

চরম আবহাওয়ার কারণে গত বছর বাংলাদেশের প্রায় ৩.৩ কোটি শিশুর পড়াশোনো বিঘ্নিত হয়েছে। জাতিসংঘেরর শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।  

‘লার্নিং ইন্টারাপটেড: গ্লোবাল স্ন্যাপশট অব ক্লাইমেট-রিলেটেড স্কুল ডিসরাপশন ইন ২০২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, তাপপ্রবাহ, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও খরার মতো বৈরী আবহাওয়ার কারণে বিশ্বের ৭৭টি দেশের অন্তত ২৪ কোটি ৭০ লাখ শিশুর শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়েছে। আর এসব ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল দক্ষিণ এশিয়া।

গত বছরের এপ্রিল-মে মাসে তাপপ্রবাহের কারণে শিশুরা পানিশূন্যতা এবং হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি তৈরি হয়। তাই দেশের স্কুলগুলো দুই সপ্তাহ বন্ধ রাখা হয়। এছাড়াও ঘূর্ণিঝড় রিমাল ও জুন মাসে ভয়াবহ বন্যার কারণে দেশের বিভিন্ন জেলায় একাধিকবার স্কুল বন্ধ রাখা হয়। এতে শিক্ষা কার্যক্রম আরও বিঘ্নিত হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশজুড়ে ১.৮৪ কোটি মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাদের মধ্যে শিশুই ৭০ লাখ। বন্যার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সিলেট। তীব্র বন্যায় জেলাটিতে বিপুল সংখ্যক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ছয় লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে।

ইউনিসেফের অনুমিত হিসাব অনুযায়ী, গত বছর জলবায়ুজনিত কারণে সিলেট অঞ্চলে শিশুরা সব মিলিয়ে আট সপ্তাহ পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আর খুলনা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে বঞ্চিত হয়েছে ছয় সপ্তাহ।

ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, ‘জলবায়ু সংকটের ফলে চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলো বাংলাদেশে শিশুদের পড়াশোনার ওপর প্রভাব ফেলছে এবং তাদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে।’

তিনি বলেন, চরম তাপমাত্রা ও অন্যান্য জলবায়ুজনিত দুর্যোগে কেবল স্কুলেরই ক্ষতি হয় না, বরং এতে শিক্ষার্থীদের স্মৃতিশক্তি, মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব পড়ে। দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকার ফলে শিশুদের ঝরে পড়ার ঝুঁকি বাড়ে। পাশাপাশি পরিবারের অর্থনৈতিক চাপের কারণে কিশোরী মেয়েদের বাল্যবিয়ের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বাল্যবিয়ে হওয়া শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

ইউনিসেফ চিলড্রেন’স ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স অনুযায়ী, জলবায়ু ও পরিবেশগত ঝুঁকির কারণে বাংলাদেশের শিশুরা ইতিমধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের তালিকায় রয়েছে। এসব দুর্যোগের ফলে দেশের ‘শিক্ষাগত দারিদ্র্য’ আরও বাড়ে, যেখানে প্রতি দুই শিশুর মধ্যে একটি শিশু যে শ্রেণিতে পড়ার কথা, সেই শ্রেণিতে পড়তে পারে না এবং প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর দুই-তৃতীয়াংশ শিশু মৌলিক গণনাটুকুও করতে পারে না।

প্রতিবেদনে এও বলা হয়েছে, স্কুল ও শিক্ষাব্যবস্থা এসব প্রতিকূলতা থেকে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় ততটা সক্ষম নয়। এছাড়াও শিক্ষায় জলবায়ুকেন্দ্রিক আর্থিক বিনিয়োগও লক্ষণীয়ভাবে কম।

প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়ন প্রতিষ্ঠান, দাতা সংস্থা, বেসরকারি খাত ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি নীতি ও পরিকল্পনায় শিশুদের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ।