ঢাকা ০৯:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জয়পুরহাটে সরিষা ফুল থেকে ৩০ টন মধু উৎপাদনের আশা

জয়পুরহাট প্রতিনিধি
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৬:০৪:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫ ১০ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জয়পুরহাটে ব্যাপকভাবে সরিষা ফুল থেকে মধু উৎপাদন হচ্ছে। তরুণ উদ্যোক্তারা এর মাধ্যমে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় দেড় হাজার মৌ বক্স স্থাপন করা হয়েছে। এই মৌচাষ থেকে প্রতি সপ্তাহে মধু সংগ্রহ করছেন মৌয়ালিরা। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি মধু বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন কোম্পানি এখানকার মধু সরবরাহ করছে। চলতি মৌসুমে ৩০ টন মধু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

জেলা সদর সহ বিভিন্ন গ্রামে এখন সরিষা ফুলের সমারোহ দেখা যাচ্ছে। সদর উপজেলার পুরানাপৈল, দস্তপুর, শালগ্রাম, হালট্টি, আক্কেলপুরের জামালগঞ্জসহ ১০টি গ্রামে মৌয়ালিরা মৌমাছির বাক্স স্থাপন করেছেন। এসব মৌয়ালিরা বিসিক থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মৌচাষ শুরু করেছেন। আগে অন্যান্য জেলা থেকে মৌয়ালিরা জয়পুরহাটে মধু সংগ্রহ করতে আসতেন। কিন্তু এখন জেলার অনেক তরুণ উদ্যোক্তা নিজেরাই মৌচাষ করছেন। একেকটি খামারে ৫০ থেকে ৩০০টি পর্যন্ত বাক্স রয়েছে। মৌমাছিরা সরিষা ফুল থেকে মধু আহরণ করছে। এর ফলে সরিষার ফলনও বেড়েছে। এখানকার মধুর গুণগত মান ভালো হওয়ায় ক্রেতারা আগ্রহী হয়ে কিনতে আসছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন কোম্পানিও এখানকার মধু কিনছে। মৌয়ালিরা এসব থেকে ভালো আয় করছেন।

শালগ্রাম এলাকার মৌচাষি সাদা মিয়া গাইবান্ধা থেকে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ৪টি টিম নিয়ে এখানে মধু সংগ্রহ করতে এসেছি। আমার খামারে ১০০টি বাক্স রয়েছে। এতে প্রায় ৪০ মণের মতো মধু উৎপাদন হবে।’ তিনি আরও জানান, তিনি এসব মধু অনলাইনে বিক্রি করেন এবং বিভিন্ন লোকজনও মধু কিনে নিয়ে যান। রংপুর থেকে আসা মৌচাষি সজিব হোসেন বলেন, ‘এখানে প্রতিবছর সরিষা ফুল থাকে। এ জন্য আমরা এখানে মধু সংগ্রহ করতে আসি। সরিষাখেতের পাশেই বক্স স্থাপন করা হয়। মৌমাছিরা সারা দিন ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করেন।’ তিনি আরও জানান, একটি বাক্সে প্রায় ৮ হাজার মৌমাছি থাকে। এর মধ্যে একটি থাকে রানী মৌমাছি।

দস্তপুর গ্রামের চাষি রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘আগে অন্য জেলা থেকে মৌয়ালিরা এখানে মধু চাষ করত। কিন্তু এখন জেলার অনেকেই এই চাষ করছেন। আমার খামারে ২১৭টি বাক্স রয়েছে। প্রতি বক্স থেকে এক সপ্তাহ পরপর ৩ থেকে ৪ কেজি মধু সংগ্রহ করা যায়।’ 

ফজলে রাব্বী নামের এক ক্রেতা শালগ্রামে মধু কিনতে এসে জানান, ‘এখানে প্রাকৃতিক পরিবেশে উৎপাদিত মধু চাষ হয়। তিনি ১ কেজি মধু কিনেছেন। একইভাবে, শ্যামপুর গ্রামের দিপক কুমার মণ্ডল বলেন, ‘সরিষা ফুল থেকে যে মধু উৎপাদিত হয়, সেটা খাঁটি। প্রতিবছর এখান থেকে মধু কিনি। এবার ১ কেজি মধু ৪০০ টাকায় কিনেছি।’

এ বিষয়ে জয়পুরহাট বিসিকের উপব্যবস্থাপক লিটন চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘ফুল ও ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে মৌমাছি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মৌমাছি থেকে মধু ছাড়াও রয়েল জেলি পাওয়া যায়। তা মানবদেহের জন্য উপকারী। এ বছর ১৫ জন মৌচাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। মধু উৎপাদন শিল্পের উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ, নিবন্ধন, ঋণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

জয়পুরহাটে সরিষা ফুল থেকে ৩০ টন মধু উৎপাদনের আশা

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৬:০৪:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫

জয়পুরহাটে ব্যাপকভাবে সরিষা ফুল থেকে মধু উৎপাদন হচ্ছে। তরুণ উদ্যোক্তারা এর মাধ্যমে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় দেড় হাজার মৌ বক্স স্থাপন করা হয়েছে। এই মৌচাষ থেকে প্রতি সপ্তাহে মধু সংগ্রহ করছেন মৌয়ালিরা। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি মধু বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন কোম্পানি এখানকার মধু সরবরাহ করছে। চলতি মৌসুমে ৩০ টন মধু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

জেলা সদর সহ বিভিন্ন গ্রামে এখন সরিষা ফুলের সমারোহ দেখা যাচ্ছে। সদর উপজেলার পুরানাপৈল, দস্তপুর, শালগ্রাম, হালট্টি, আক্কেলপুরের জামালগঞ্জসহ ১০টি গ্রামে মৌয়ালিরা মৌমাছির বাক্স স্থাপন করেছেন। এসব মৌয়ালিরা বিসিক থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মৌচাষ শুরু করেছেন। আগে অন্যান্য জেলা থেকে মৌয়ালিরা জয়পুরহাটে মধু সংগ্রহ করতে আসতেন। কিন্তু এখন জেলার অনেক তরুণ উদ্যোক্তা নিজেরাই মৌচাষ করছেন। একেকটি খামারে ৫০ থেকে ৩০০টি পর্যন্ত বাক্স রয়েছে। মৌমাছিরা সরিষা ফুল থেকে মধু আহরণ করছে। এর ফলে সরিষার ফলনও বেড়েছে। এখানকার মধুর গুণগত মান ভালো হওয়ায় ক্রেতারা আগ্রহী হয়ে কিনতে আসছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন কোম্পানিও এখানকার মধু কিনছে। মৌয়ালিরা এসব থেকে ভালো আয় করছেন।

শালগ্রাম এলাকার মৌচাষি সাদা মিয়া গাইবান্ধা থেকে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ৪টি টিম নিয়ে এখানে মধু সংগ্রহ করতে এসেছি। আমার খামারে ১০০টি বাক্স রয়েছে। এতে প্রায় ৪০ মণের মতো মধু উৎপাদন হবে।’ তিনি আরও জানান, তিনি এসব মধু অনলাইনে বিক্রি করেন এবং বিভিন্ন লোকজনও মধু কিনে নিয়ে যান। রংপুর থেকে আসা মৌচাষি সজিব হোসেন বলেন, ‘এখানে প্রতিবছর সরিষা ফুল থাকে। এ জন্য আমরা এখানে মধু সংগ্রহ করতে আসি। সরিষাখেতের পাশেই বক্স স্থাপন করা হয়। মৌমাছিরা সারা দিন ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করেন।’ তিনি আরও জানান, একটি বাক্সে প্রায় ৮ হাজার মৌমাছি থাকে। এর মধ্যে একটি থাকে রানী মৌমাছি।

দস্তপুর গ্রামের চাষি রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘আগে অন্য জেলা থেকে মৌয়ালিরা এখানে মধু চাষ করত। কিন্তু এখন জেলার অনেকেই এই চাষ করছেন। আমার খামারে ২১৭টি বাক্স রয়েছে। প্রতি বক্স থেকে এক সপ্তাহ পরপর ৩ থেকে ৪ কেজি মধু সংগ্রহ করা যায়।’ 

ফজলে রাব্বী নামের এক ক্রেতা শালগ্রামে মধু কিনতে এসে জানান, ‘এখানে প্রাকৃতিক পরিবেশে উৎপাদিত মধু চাষ হয়। তিনি ১ কেজি মধু কিনেছেন। একইভাবে, শ্যামপুর গ্রামের দিপক কুমার মণ্ডল বলেন, ‘সরিষা ফুল থেকে যে মধু উৎপাদিত হয়, সেটা খাঁটি। প্রতিবছর এখান থেকে মধু কিনি। এবার ১ কেজি মধু ৪০০ টাকায় কিনেছি।’

এ বিষয়ে জয়পুরহাট বিসিকের উপব্যবস্থাপক লিটন চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘ফুল ও ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে মৌমাছি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মৌমাছি থেকে মধু ছাড়াও রয়েল জেলি পাওয়া যায়। তা মানবদেহের জন্য উপকারী। এ বছর ১৫ জন মৌচাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। মধু উৎপাদন শিল্পের উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ, নিবন্ধন, ঋণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।’