ঢাকা ১২:৫৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছোট হয়ে আসছে কবরস্থানের জায়গা, জনমনে অসন্তোষ

আজিজুল হক সরকার, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর)
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৫:৫১:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৪ ৪৫ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌরসভার একমাত্র কানাহার কবরস্থানটি ক্রমান্বয়ে পুকুরে গ্রাস করছে। কানাহার পুুকুর পাড়ে ‘কানাহার কবরস্থান’ পৌরসভার আন্ডারে। অপরদিকে পুকুরটি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের হয়ে মাছ চাষ করায় কবরস্থান ভেঙে বাপ-দাদার স্মৃতি বিজড়িত কবরগুলো বিলীন হতে বসেছে।

জানা গেছে, নয় একর ৪৩ শতাংশ জায়গা নিয়ে কানাহার পুকুর এবং দুই একর ৯০ শতাংশ জায়গা নিয়ে কানাহার কবরস্থানটি উল্লেখ থাকলেও কবরস্থানটি প্রকৃতপক্ষে পুরো পুকুরের চারপাড় জুড়েই কবরস্থান। আনুমানিক ১৫ একরেরও বেশি জায়গা হবে। এখানে মাছ চাষের জন্য ফুলবাড়ীর সবচেয়ে বড় পুকুর হিসেবে খ্যাত ‘কানাহারপুকুর’। যার থেকে বছরে লাখলাখ টাকা আয় হয়।

পশ্চিম গৌরীপাড়া ও পূর্বগৌরীপাড়া, বুন্দিপাড়া, স্বজনপুকুর, নিমতলা, রেলঘুমটি, ডাঙ্গা, বারোঘরিয়া, কাঁটাবাড়ী, ফুলবাড়ী বাজার, নিমতলামোড়সহ ফুলবাড়ী পৌর শহরের অধিকাংশ মানুষের মৃত্যুর পর কবর দেয়ার একমাত্র কবর স্থান এটিই।

একদিকে কবরস্থানের পাড় ভেঙে যাচ্ছে, অপরদিকে ট্রাক-ট্রলার পরিষ্কার করার স্থান করেছে। তার সাথে অবাধে চলছে গরু-ছাগল-হাঁস পালনের চেষ্টা। সবমিলে কবরস্থানের যে পবিত্রতা তা আজ প্রশ্নের সম্মুখীন।

পুকুরটি ক-তফশীলভুক্ত ভিপি সম্পত্তি হওয়ায় উপজেলা প্রশাসন পুকুরটি ৪ দশকেরও বেশি সময় ধরে ফুলবাড়ী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে মাছ চাষ করতে দিয়ে আসছেন। এদিকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ পুকুরটি সাব কন্ট্রাক্ট এর মাধ্যমে ১৭ লাখ টাকায় ৩ বছরের জন্য জনৈক মাছচাষিকে দিয়ে মোটা অংকের টাকা তুলছেন। এ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা সংসদের মাধ্যমেও কানাহার পুকুর অথবা কবরস্থানের কোন প্রকার সংস্কার কাজ লক্ষ্য করা যায়নি। বরং সাব কন্ট্রাক্ট নেয়া মালিক পুকুরে লিটার ব্যবহার করায় কবরস্থানে আগত ব্যক্তিরা ওযু-গোসল অথবা কবর দেয়ার পর হাত-পা ধোয়ার কাজও করতে পারছেন না।

স্থানীয় কলেজ শিক্ষক খায়রুল আনাম আবেশ,আতিয়ার রহমান, এ্যাডভোকেট আবুহেনা ,সাখাওয়াত কাজি, আলাউদ্দীন মিস্ত্রী,আমানুর রশিদ অঞ্জন অভিযোগ করে বলেন, ৪০বছর পর মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থা স্বচ্ছল হয়েছে।এখন কেনো মুক্তিযোদ্ধাদের পুকুর দিতে হবে? পুকুরের লাখলাখ টাকায় কবরস্থান সংস্কার করা যেত। পুকুরের মাছ বৃদ্ধির জন্য শুষ্ক মৌসুমেও পুকুরে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি ভরে রাখেন। বড় পুকুর হওয়ায় পানির ঢেউয়ে কবরস্থানে ধাক্কা লেগে কবরসহ পাড় ভেঙে ফেলছে। এপর্যন্ত প্রায় দু’শতাধিক কবর পুকুরের পেটে চেলে গেছে। আর কতখানি ভাঙলে নজরে আসবে কর্তৃপক্ষের? যে বিষয়টি অনেককে ভাবায়, আমার বাপ-দাদার কবরের পাশে আমার কবর দেওয়ার জায়গাটা অবশেষে থাকবে তো ?

সাবেক ডিপুটি কমান্ডার মো.এছার উদ্দীন বলেন, জিয়ার আমলে কানাহার পুকুরটি মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে বরাদ্দ দেন উপজেলা প্রশাসন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জনৈক ব্যক্তিকে লিজ দিয়ে সেই টাকা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের সামনের দু’শতক জমি ক্রয় করে রাস্তা করি,খাজনা দেই,কারো সমস্যায় এ টাকা খরচ হয়।

সদ্য বিদায়ী পৌর মেয়র মাহমুদ আলম লিটন বলেন, কানাহার কবরস্থান রক্ষণাবেক্ষণ করবে পৌরসভা আর পুকুর থাকবে অন্য প্রতিষ্ঠানের হাতে, তাতো হয়না। এতে সমন্বয়হীনতায় কাজে বিঘœ সৃষ্টি হয়। ধর্মীয় এই বিষয়টি নিয়ে আমাকে অনেকে অভিযোগ করেছেন। তবে কেন্দ্রীয় কবরস্থানকে পুকুর যে গ্রাস করছে, তা সত্য। নাগরিক সেবা দেয়ার ব্যাপারে আমি জনগণের দাবির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছিলাম।

পৌরসভায় নবনিযুক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার (ভ’মি) মুহাম্মদ জাফর আরিফ চৌধুরী বলেন, সবে দায়িত্ব পেলাম।আগে বিষয়গুলো জেনে নেই,তাহলে আমার জন্য কাজ করা সহজ হবে। তবে মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে পুকুরটি তাঁদের সম্মানার্থে দেয়া হয়েছে, ভিপি সম্পত্তি হওয়ায় লিখে নেয়া বা দেয়া সম্ভব নয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) এবং মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার- এর দায়িত্বপ্রাপ্ত মীর মো. আল কামাহ তমাল বলেন, কানাহার পুকুরটি কবরস্থানকে গ্রাস করছে, দেখেছি। ইতোমধ্যে পৌরসভায় নতুন প্রশাসক এসেছেন, তাঁর সাথে আলোচনা করে গাইডওয়াল দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। সামনে এডিবি বরাদ্দ আসছে এবং বরেন্দ্র, মৎস্য থেকে তালিকা চেয়েছে যেসব পুকুরের পাড় ভেঙে গেছে। কানাহার পুকুরটি সে তালিকায় আছে। ধর্মীয় জনগুরুত্বপূর্ণ কবরস্থানকে বিলীন হতে দেয়া যাবে না।আমি বিষয়টি নিয়ে সবার সাথে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করে কবরস্থানকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করবো।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ছোট হয়ে আসছে কবরস্থানের জায়গা, জনমনে অসন্তোষ

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৫:৫১:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৪

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌরসভার একমাত্র কানাহার কবরস্থানটি ক্রমান্বয়ে পুকুরে গ্রাস করছে। কানাহার পুুকুর পাড়ে ‘কানাহার কবরস্থান’ পৌরসভার আন্ডারে। অপরদিকে পুকুরটি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের হয়ে মাছ চাষ করায় কবরস্থান ভেঙে বাপ-দাদার স্মৃতি বিজড়িত কবরগুলো বিলীন হতে বসেছে।

জানা গেছে, নয় একর ৪৩ শতাংশ জায়গা নিয়ে কানাহার পুকুর এবং দুই একর ৯০ শতাংশ জায়গা নিয়ে কানাহার কবরস্থানটি উল্লেখ থাকলেও কবরস্থানটি প্রকৃতপক্ষে পুরো পুকুরের চারপাড় জুড়েই কবরস্থান। আনুমানিক ১৫ একরেরও বেশি জায়গা হবে। এখানে মাছ চাষের জন্য ফুলবাড়ীর সবচেয়ে বড় পুকুর হিসেবে খ্যাত ‘কানাহারপুকুর’। যার থেকে বছরে লাখলাখ টাকা আয় হয়।

পশ্চিম গৌরীপাড়া ও পূর্বগৌরীপাড়া, বুন্দিপাড়া, স্বজনপুকুর, নিমতলা, রেলঘুমটি, ডাঙ্গা, বারোঘরিয়া, কাঁটাবাড়ী, ফুলবাড়ী বাজার, নিমতলামোড়সহ ফুলবাড়ী পৌর শহরের অধিকাংশ মানুষের মৃত্যুর পর কবর দেয়ার একমাত্র কবর স্থান এটিই।

একদিকে কবরস্থানের পাড় ভেঙে যাচ্ছে, অপরদিকে ট্রাক-ট্রলার পরিষ্কার করার স্থান করেছে। তার সাথে অবাধে চলছে গরু-ছাগল-হাঁস পালনের চেষ্টা। সবমিলে কবরস্থানের যে পবিত্রতা তা আজ প্রশ্নের সম্মুখীন।

পুকুরটি ক-তফশীলভুক্ত ভিপি সম্পত্তি হওয়ায় উপজেলা প্রশাসন পুকুরটি ৪ দশকেরও বেশি সময় ধরে ফুলবাড়ী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে মাছ চাষ করতে দিয়ে আসছেন। এদিকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ পুকুরটি সাব কন্ট্রাক্ট এর মাধ্যমে ১৭ লাখ টাকায় ৩ বছরের জন্য জনৈক মাছচাষিকে দিয়ে মোটা অংকের টাকা তুলছেন। এ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা সংসদের মাধ্যমেও কানাহার পুকুর অথবা কবরস্থানের কোন প্রকার সংস্কার কাজ লক্ষ্য করা যায়নি। বরং সাব কন্ট্রাক্ট নেয়া মালিক পুকুরে লিটার ব্যবহার করায় কবরস্থানে আগত ব্যক্তিরা ওযু-গোসল অথবা কবর দেয়ার পর হাত-পা ধোয়ার কাজও করতে পারছেন না।

স্থানীয় কলেজ শিক্ষক খায়রুল আনাম আবেশ,আতিয়ার রহমান, এ্যাডভোকেট আবুহেনা ,সাখাওয়াত কাজি, আলাউদ্দীন মিস্ত্রী,আমানুর রশিদ অঞ্জন অভিযোগ করে বলেন, ৪০বছর পর মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থা স্বচ্ছল হয়েছে।এখন কেনো মুক্তিযোদ্ধাদের পুকুর দিতে হবে? পুকুরের লাখলাখ টাকায় কবরস্থান সংস্কার করা যেত। পুকুরের মাছ বৃদ্ধির জন্য শুষ্ক মৌসুমেও পুকুরে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি ভরে রাখেন। বড় পুকুর হওয়ায় পানির ঢেউয়ে কবরস্থানে ধাক্কা লেগে কবরসহ পাড় ভেঙে ফেলছে। এপর্যন্ত প্রায় দু’শতাধিক কবর পুকুরের পেটে চেলে গেছে। আর কতখানি ভাঙলে নজরে আসবে কর্তৃপক্ষের? যে বিষয়টি অনেককে ভাবায়, আমার বাপ-দাদার কবরের পাশে আমার কবর দেওয়ার জায়গাটা অবশেষে থাকবে তো ?

সাবেক ডিপুটি কমান্ডার মো.এছার উদ্দীন বলেন, জিয়ার আমলে কানাহার পুকুরটি মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে বরাদ্দ দেন উপজেলা প্রশাসন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জনৈক ব্যক্তিকে লিজ দিয়ে সেই টাকা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের সামনের দু’শতক জমি ক্রয় করে রাস্তা করি,খাজনা দেই,কারো সমস্যায় এ টাকা খরচ হয়।

সদ্য বিদায়ী পৌর মেয়র মাহমুদ আলম লিটন বলেন, কানাহার কবরস্থান রক্ষণাবেক্ষণ করবে পৌরসভা আর পুকুর থাকবে অন্য প্রতিষ্ঠানের হাতে, তাতো হয়না। এতে সমন্বয়হীনতায় কাজে বিঘœ সৃষ্টি হয়। ধর্মীয় এই বিষয়টি নিয়ে আমাকে অনেকে অভিযোগ করেছেন। তবে কেন্দ্রীয় কবরস্থানকে পুকুর যে গ্রাস করছে, তা সত্য। নাগরিক সেবা দেয়ার ব্যাপারে আমি জনগণের দাবির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছিলাম।

পৌরসভায় নবনিযুক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার (ভ’মি) মুহাম্মদ জাফর আরিফ চৌধুরী বলেন, সবে দায়িত্ব পেলাম।আগে বিষয়গুলো জেনে নেই,তাহলে আমার জন্য কাজ করা সহজ হবে। তবে মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে পুকুরটি তাঁদের সম্মানার্থে দেয়া হয়েছে, ভিপি সম্পত্তি হওয়ায় লিখে নেয়া বা দেয়া সম্ভব নয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) এবং মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার- এর দায়িত্বপ্রাপ্ত মীর মো. আল কামাহ তমাল বলেন, কানাহার পুকুরটি কবরস্থানকে গ্রাস করছে, দেখেছি। ইতোমধ্যে পৌরসভায় নতুন প্রশাসক এসেছেন, তাঁর সাথে আলোচনা করে গাইডওয়াল দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। সামনে এডিবি বরাদ্দ আসছে এবং বরেন্দ্র, মৎস্য থেকে তালিকা চেয়েছে যেসব পুকুরের পাড় ভেঙে গেছে। কানাহার পুকুরটি সে তালিকায় আছে। ধর্মীয় জনগুরুত্বপূর্ণ কবরস্থানকে বিলীন হতে দেয়া যাবে না।আমি বিষয়টি নিয়ে সবার সাথে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করে কবরস্থানকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করবো।