বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগ
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার নয়
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৬:৪২:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৫ ২২ বার পড়া হয়েছে
শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নবজাতক ও শিশুরা ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এতে করে হাসপাতালে বাড়ছে রোগী। হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই রোগী বাড়ছে। শনিবার (৪ জানুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে দেখা যায়, হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক নবজাতক ও শিশুকে ভর্তি করা হয়েছে। এসব শিশুর মধ্যে কেউ কেউ কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত।
হাসপাতালের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় বহিরাগত রোগীর সংখ্যা ১৮৭ জন। এর মধ্যে নিউমোনিয়া নিয়ে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন ২৪ জন, ভর্তি হন ৫ জন। এখন পর্যন্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩৩ জন। এর মধ্যে অনেকেই চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। তবে নিউমোনিয়া নিয়ে হাসপাতালে রয়েছেন বর্তমানে ১২ জন। এদিকে গত কয়েক দিনের পারিসংখানে দেখা যায়, নিউমোনিয়া নিয়ে (৩ জানুয়ারি) ৫ জন তার আগের দিন অর্থাৎ ২ তারিখে ২ জন আর ১ তারিখে ৫ জন ভর্তি হন।
এছাড়া ১ জানুয়ারি থেকে বহির্বিভাগে ঠান্ডা নিয়ে ৩২৩ জন, হাঁপানি নিয়ে ২৭ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিয়েছেন ১১০ জন।
লাবণী আরা নামে চার বছরের এক শিশুকে ভর্তি করা হয়েছে। ঢাকার মিরপুরে থাকেন তারা। ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ায় গত দুদিন আগে শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
লাবনীর মা সাহারা বেগম বলেন, কয়েকদিন আগে শীত বেড়ে যাওয়ায় মেয়েটা অসুস্থ হয়ে পড়ে। গত তিনদিন আগে রাতে তার জ্বর আসে। এরপর জ্বর কমে আবার বাড়ছিল। তার সঙ্গে ডায়রিয়া দেখা দেওয়ায় হাসপাতালে আনলে তাকে ভর্তি করা হয়।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শীতে বাতাসের আর্দ্রতা কম এবং ধূলিকণা বেড়ে যাওয়ায় ফ্লু, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস ও ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। ফলে জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস ও শীতকালীন ডায়রিয়ায় শিশু অনেক বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
শিশুদের প্রতি বাড়তি সতর্কতার কথা জানিয়ে এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, শিশুকে সুস্থ রাখতে শীতের কাপড় পরাতে হবে, মাথা ঢেকে রাখতে হবে, মাথায় ঠান্ডা লাগানো যাবে না, বাড়ির বাইরে অহেতুক বাচ্চাদের নিয়ে ঘোরাঘুরি করা যাবে না। শিশুর ঠান্ডা লাগলে, কাঁশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যাবে না।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে কর্তব্যরত একাধিক চিকিৎসক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, শীত বেড়ে যাওয়ায় শিশুদের কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও ভাইরাসজনিত কারণে ডায়রিয়া দেখা দিচ্ছে। এজন্য শীতে শিশুদের বাড়তি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।
একই চিত্র সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালেও। সেখানেও সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, হাঁপানি রোগির সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলছে। সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. শফিউর রহমান বলেন, শীতে সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, হাঁপানি, টনসিলাটাইসিস, ব্রঙ্কিওলাইটিস, সাইনোসাইটিস সমস্যা দেখা দেয়। এবার ডেঙ্গুর পরেই শিশুরা শীতজনিত রোগে বেশি ভুগছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত একাধিক চিকিৎসক বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে শীতকালীন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে শীতজনিত ফ্লু ও আরএস ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকে ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া, রেসেপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন, অ্যাজমাজনিত পালমোনারি প্রবলেম, জ্বর ও ডায়রিয়া নিয়ে আসছেন।