চামড়ার দর পতন, ফেটে যাচ্ছে ভাইরাসে
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৬:২০:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ জুন ২০২৪ ১১২ বার পড়া হয়েছে
খুলনা বিভাগের বৃহৎ চামড়ার মোকাম যশোরের রাজারহাট। এখানে বিক্রেতারা এবার দাম পায়নি, বরং লোকসান দিয়ে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে। আবার এক ধরনের ভাইরাসে চামড়া ফেটে যাচ্ছে। তাই ব্যবসায়ীরা কিনতে আগ্রহী হচ্ছে না। তবে কমদামে সেগুলো কিনছে।
যশোর সদরের ইছালি গ্রামের বিশ্বজিৎ কুমার ১২২ পিচ গরু ও ২০ পিস ছাগলের চামড়া নিয়ে শনিবার (২২ জুন) যশোরের চামড়ার মোকাম রাজরহাটে নিয়ে এসেছিলেন। কাক্সিক্ষত দাম না পেলেও সব চামড়া বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, গত ২০ বছর ধরে এই ব্যবসার সাথে জড়িত, কিন্তু এরকম দরপতন হবে ভাবতেই পারিনি।
সরকার নির্ধারিত ৫০ টাকা ফুট হলেও দাম পাওয়া যাচ্ছে ২৫ টাকা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে চামড়া সংগ্রহ করা, লবণ লাগানো এবং পরিবহন খরচ মিলিয়ে যে চামড়ার দাম প্রতি পিস ৮-৯শ টাকা পড়েছে। অথচ সেই দামেই বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। এতে পৃঁজি বসে যাচ্ছে।
খুলনার পাইকগাছার স্বপন দাস জানান, তিনি ২৪৮ পিস গরুর চামড়া ও ৪৪ পিস ছাগলের চামড়া হাটে এনেছেন। বড় চামড়া বিক্রি করেছেন ৮-৯ শ টাকায়, আর ছাগলের চামড়া প্রতি পিস ২০ টাকা করে। অথ্যাৎ গরুর চামড়া বিক্রি করেছি ২৫ টাকা ফুট হিসেবে। অথচ সরকার নির্ধারণ করেছে ৫০ টাকা ফুট। যেকারণে আমাদের মতো খুচরা ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেনা। লাভের মুখ দেখছেন আড়তদার আর ট্যানারি মালিকরা।
খুলনা বিভাগের সর্ববৃহৎ চামড়ার মোকাম যশোরের রাজারহাট। ঈদের প্রথম হাটবার ছিলো শনিবার (২২ জুন)। যদিও আড়তদাররা বলছেন, ভালোমানের চামড়া সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে। খারাপ চামড়া বিক্রি হচ্ছে কম দামে।
ঈদ পরবর্তী প্রথম হাটে রাজারহাট ছিল ক্রেতা-বিক্রেতায় সরগরম। তবে সেই তুলনায় চামড়ার যোগান ছিল কম। গরু ও ছাগলের প্রায় ৭০ হাজার পিস চামড়ার হাতবদল হয়েছে বলে ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে।
যশোরের ব্যাপারী হাসিবুল হক জানান, হাটে ভালোমানের গরুর চামড়া সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। খারাপ চামড়া কম দামে বিক্রি হয়েছে। কেননা এবার চামড়ায় এক ধরণের ভাইরাস লেগে ফেটে যাচ্ছে। যেকারণে দাম পড়ে গেছে।
কুষ্টিায়ার ট্যানারি মালিকের প্রতিনিধি এহসান রিপন জানান, এক ধরণের ভাইরাসে অন্তত ১৫ শতাংশ চামড়া ফেটে যাচ্ছে। আবার ঠিকমত লবণ না দেয়ায় চামড়া নষ্ট হয়েছে। যেকারণে চামড়ার দাম কমে গেছে। তবে ভালো মানের চামড়া ভালো দাম দেয়া হচ্ছে।
যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল জানান, রাজারহাটে শনিবার (২২ জুন) গড়ে ৭০ হাজার পিচ চামড়া উঠেছে। এরমধ্যে গরুর চামড়া ছিল ৪০ হাজার পিস। যেখানে ৩ কোটি টাকার হাতবদল হয়েছে।
তিনি বলেন, ভালোমানের গরুর চামড়া সরকার নির্ধারিত দামে অথবা কাছাকাছি দামে বিক্রি হয়েছে। খারাপ চামড়ার দাম কমবে এটাই স্বাভাবিক। খুচরা ব্যবসায়ীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কম দামে কিনে অনেক বেশি দাম চেয়ে থাকে। তবে সরকার কাঁচা চামড়া রফতানির উদ্যোগ নিলে এখাত আরও বিকশিত হবে। আবার সরকার খুচরা চামড়া ব্যবসায়ীদের অল্প সুদে ঋণ দেবার ব্যবস্থা করলে চামড়া ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াবে।
হাটের ইজাদারের প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান হাসু জানান, ৪-৫ বছর আগেও রাজারহাটে কোরবানী ঈদের হাটে অন্তত লাখ পিস গরুর ও ৫০ হাজার পিস ছাগলের চামড়া আসত। এখন আসছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার পিস গরু ও ৩৫ হাজার মতো ছাগলের চামড়া।
যশোর বিসিকের উপমহাব্যবস্থাপক ফরিদা ইয়াসমিন জানান, আমরা রাজারহাটে গিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলেছি। কিভাবে চামড়া বিক্রি হচ্ছে সেটি খোঁজখবর নিয়েছি। এদিন চামগার হাট বেশ জমজমাট ছিল।