ঘুম থেকে উঠেই বাবাকে খোঁজে দুই শিশু কন্যা
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:২০:২১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪ ৪৪ বার পড়া হয়েছে
৭ বছর বয়সী আরোহার কাছে তার বাবাই ছিল সব। তার দুরন্তপনার, খেলার সঙ্গী ও সবচেয়ে কাছের বন্ধুও ছিল বাবা। খেলতে খেলতে বাবার হাতের উপরই ঘুমিয়ে পড়তো শিশু আরোহা। কিন্তু আরোহার বাবা মো. আল মামুন আমানত (৪১) আর নেই। পরিবারের সদস্যদের কথাবার্তায় শিশু মন কিছুটা বুঝে উঠতে পারলেও আমানতের দুই বছরের অপর শিশু কন্যা আয়রা মায়ের কাছে প্রতিদিনই জিজ্ঞেস করে, ‘বাবা কই? বাবা কই?’
শিশু দুই কন্যাকে ভীষণ আদর করতেন আমানতও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজ একাউন্টে নামের পাশে লিখেছেন ‘আরোহা-আয়রার বাবা।’
গত ৫ আগস্ট বিকেলে মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচীতে অংশ নিতে নারায়ণগঞ্জ থেকে শাহবাগের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন আমানত। কিন্তু সেদিন আর বাড়ি ফেরেনি সে। নয়দিন অনেক খোঁজাখুজির পর বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে মেলে তার মরদেহ।
স্ত্রী হাসিনা মমতাজ বলেন, সেদিন নিখোঁজ হওয়ার পর আমরা অনেক খোঁজাখোঁজি করেছি, থানায় গিয়েছি। নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকার শাহবাগ পর্যন্ত প্রায় সকল হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ করেছি কিন্তু পাইনি। পরে খালা শাশুড়িকে নিয়ে আবার যখন ঢাকা মেডিকেলের মর্গে যাই তখন সে লাশের কিছু কিছু অংশ দেখে লাশ শনাক্ত করে।
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রথমে চিনতেই পারিনি। আমার স্বামীর মুখসহ শরীর বিভিন্ন অংশ এতদিনে বিকৃত হয়ে গিয়েছিল, চেনা যাচ্ছিল না। খালা শাশুড়ির কাছে আমার স্বামী বড় হয়েছে তাই তিনি শনাক্ত করতে পেরেছিলেন। নাহলে আমরা তার লাশটাও পেতাম না।
শুক্রবার জানাজা শেষে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মুরাদনগরে পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের পাশে দাফন করা হয় আমানতকে।
হাসিনা মমতাজ বলেন, দুই মেয়েকে অনেক ভালোবাসতো। পরিবারে আমরা চারজনই। তাই আমাকে ছোট মেয়ের খেয়াল রাখতে হতো। বড় মেয়ে আরোহা সব সময় তার বাবার কাছে থাকতো। বাবার সাথে খেলা, খাওয়া, পাড়াশোনা, বাবার হাতে মাথা রেখেই ঘুমাতো সে। আরোহার জন্য ওর বাবাই ছিল সব। আরোহা ওর বাবাকে অনেক মিস করে কিন্তু সে এটাও বুঝে ওর বাবা এখন আর নেই। মারা গেছে, তাকে কবর দেয়া হয়েছে। ছোট মেয়ে আয়রা বোঝে না, বারবার জিঞ্জস করে, বাবা কই?
আল মামুন আমানত (৪১) নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের একটি শিল্প কারখানায় কর্মরত ছিলেন। সে নারায়ণগঞ্জ কলেজের ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার স্ত্রী হাসিনা মমতাজ একজন চিকিৎসক। ¯œাতকোত্তর শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দুই বছর শিক্ষানবিশ ছিলেন। ছোট মেয়ে হওয়ার পর স্থানীয় একটি ক্লিনিকে বসা শুরু করেন তিনি।
মমতাজ বলেন, আমানতকে হারিয়ে আমরা একা হয়ে গেছি। এখন কে আমাদের দেখভাল করবে! পরিবার বলতে আমার বাবা আর ছোট বোন ছাড়া আর কেউ নেই। বর্তমানে আমি তাদের সাথেই আছি। কিন্তু এখন আমাকে পরিবারের হাল ধরতে হবে। একাই দুই সন্তানদের মানুষ করতে হবে।
স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে তিনি বলেন, আমি জানি না আমার স্বামীকে কারা মেরেছে। তবে তার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত আর পেটে গুলির চিহ্ন ছিল। আমি আমার সন্তানদের বাবার মৃত্যুর বিচার চাই। আমার স্বামী দেশের জন্য মিছিল করতে গিয়ে মারা গেছে। আমি কোনো ক্ষতিপূরণ, দয়া বা অনুদান চাই না। আমি শিক্ষিত, আমি চাকরি করে আমার পরিবার চালাতে পারবো। তাই সম্ভব হলে আমাকে একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দিলে আমি উপকৃত হবো। যাতে আমি দুই সন্তানকে নিয়ে বাঁচতে পারি।