কৃষি বিভাগের উদাসীনতায় বারি উদ্ভাবিত কাঁঠাল চাষ হচ্ছে না
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৭:১০:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুলাই ২০২৪ ১১৩ বার পড়া হয়েছে
মানব দেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয় আমিষ এবং ভিটামিন ‘এ’ সহ শর্করা যোগানদানকারী প্রাচীনতম ফল কাঁঠালের উৎপাদন বরিশালে প্রায় এক লাখ টন। তবে ‘বারি’ উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের আবাদ হলে তা দ্বিগুন বৃদ্ধি সম্ভব বলে মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীরা জানিয়েছেন।
আর এ লক্ষ্যে পৌছতে ‘বারী’ উদ্বাবিত উচ্চ ফলনশীল কাঁঠাল বীজ ও চাড়া উৎপাদকদের কাছে পৌঁছানোর কোন বিকল্প নেই। তবে বিষয়টি নিয়ে ‘কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই’র তেমন কোন বিশেষ কার্যক্রম নেই।
বরিশাল অঞ্চলে ডিএই’র হর্টিকালচার কয়েকটি নার্সারি থেকে সীমিত কিছু কাঁঠাল চাড়া বিক্রী হলেও মাঠ পর্যায়ের কৃষকসহ বাগানকারীদের কাছে সে খবর খুব একটা জানা নেই। পাশাপাশি সরকারী এসব নার্সারীতে প্রতিটি কাঁঠাল চারার দাম ২০০ টাকা হওয়ায় তা কিনতে অনেক কৃষক আগ্রহী নয়।
কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের মতে, বরিশাল কৃষি অঞ্চলে গত বছর বরিশালে প্রায় ৮ হাজার হেক্টরে এক লাখ টনের কাছাকাছি কাঁঠাল উৎপাদন হয়েছে।
চলতি ফল মৌসুমে অবশ্য উৎপাদনের হিসেবটি মৌসুমের শেষে মিলবে বলে ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হয়েছে। তবে সঠিক সার ও বালাই ব্যবস্থাপনাসহ পরিচর্যার অভাবে বরিশাল অঞ্চলে এখনো কাঁঠালের গড় উৎপাদন হেক্টর প্রতি ১৫ টনেরও কম। অথচ তা অন্তত ২৫ টনে উন্নীত করা সম্ভব। তবে সারা দেশের মতো বরিশাল অঞ্চলেও কাঁঠালের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যপক সুযোগ রয়েছে বলে কৃষিবীদরা মনে করেন।
ডিএই’র হিসেবে গত বছর দেশে প্রায় ৬০ হাজার হেক্টরে ২০ লাখ টনের কাছে কাঁঠাল উৎপাদন হয়েছে। কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে, কাঁঠালের মতো এতো বেশী পুষ্টি উপাদানের যোগান আর কোন ফলে পাওয়া যায় না। কাঁঠাল শুধু পাকা ফল হিসেবেই নয়, কাঁচা অবস্থায় তরকারী হিসেবেও খাওয়া যায়। এমনকি কাঁঠালের বীজ থেকে ময়দা ও অন্যান্য খাবার তৈরীও সম্ভব। দামের দিক বিবেচনা করলে আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠাল এখনো অত্যন্ত সুলভ একটি ফল। তবে উৎপাদকের কাছ থেকে তিন হাত ঘুরে ভোক্তার কাছে পৌঁছতে এই ফলের দামও কয়কগুন বাড়ে যাওয়ায় নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে পক্ষে অনেক সময়ই কাঁঠাল কেনা সম্ভব হচ্ছে না।
দেশে উৎপাদিত কাঁঠালকে শাঁসের বুনট অনুযায়ী কৃষি বিজ্ঞানীরা তিনভাগে ভাগ করেছেন। যেমন- খাজা, আদরসা বা দুরসা এবং গালা। অনাদিকাল থেকে বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র এবং পার্শ্ববর্তী ভারতের বেশ কিছু স্থানে কাঁঠা লের আবাদ ও উৎপাদন হয়ে আসছে। দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে প্রচুর ভিটামিন, শর্করা ও আমিষ সমৃদ্ধ কাঁঠাল অত্যন্ত জনপ্রিয় ফল। এ ফল স্বাস্থ্যের জন্য যথেষ্ট উপকারী।
বারি উদ্ভাবিত কাঁঠাল বরিশালসহ দেশের সর্বত্রই আবাদযোগ্য বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। তবে অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে কাঁঠালের নিরাপদ উৎপাদন ভাল বলে মনে করছেন কৃষিবিদরা। এসব উচ্চ ফলনশীল ও উন্নত জাতের কাঁঠালের ফলন হেক্টরপ্রতি ৩৫-৫৮ টন বলে জানা গেছে। হলুদ বর্ণের সুগন্ধযুক্ত রসালো, নরম ও দুরসা প্রকৃতির এসব ফলের গাছ প্রতি ফলন ৫৫টি থেকে ১২৫টি পর্যন্ত।
চলতি মৌশুমেও বরিশাল সহ দেশের বিভিন্নস্থানে প্রচুর কাঁঠাল উৎপন্ন হয়েছে। অপেক্ষাকৃত উঁচুস্থানে নিয়মিত সার ও সেচ প্রদান সহ পরিচর্যা করতে পারলে কাঁঠালের অত্যন্ত ভাল ফলন সম্ভব। বারি’র বিজ্ঞানীদের মতে ১ মিটার গভীর এবং এক মিটার করে দৈর্ঘ ও প্রস্থের গর্ত করে ২৫Ñ৩০কেজি কম্পোষ্ট সার, ৪শ থেকে ৫শ গ্রাম টিএসপি এবং ২৪০Ñ২৬০ গ্রাম এমওপি সার মিশিয়ে গর্ত বুজিয়ে ১৫ দিন পরে মাঝখানে চারা রোপন করে চারদিকের মাটি ভালভাবে বসিয়ে চেপে দিয়ে খুটি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। প্রতিবছর নির্ধারিত ও পরিমিত সার প্রয়োগ ছাড়াও ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত পনের দিন অন্তর গাছের গোড়ায় তৈরি বেসিনে সেচ প্রদান করলে কাঁঠাল গাছের সুস্বাস্থ্য সহ ভাল ফলন মেলে বলে বিজ্ঞানীগণ জানিয়েছেন।
অনাদীকাল থেকে বরিশাল অঞ্চলের গ্রামে গঞ্জের মানুষের কাছেও কাঁঠাল একটি আদর্শ ফল ছাড়াও উপার্জনের অন্যতম উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এ বছর বরিশালে কঁঠালের ভাল মুচি বা ফুল আসলেও বৃষ্টির অভাবে অনেক ফলই অপরিপক্ক অবস্থায় ঝড়ে গেছে। ফলে এবার ফলন কিছুটা ব্যহত হওয়ায় গৃহস্থরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অপরদিকে ভোক্তাদেরও গত বছরের চেয়ে বেশী দামেই কাঁঠাল কিনতে হচ্ছে। আকার ভেদে এবার কাঁঠাল ১শ থেকে ৪শ টাকায়ও বিক্রী হচ্ছে।
বরিশাল-ফরিদপুর-ঢাকা জাতীয় মহাসড়কের বিভিন্নস্থানে রাস্তার দুধারে এবারো গাছে গাছে প্রচুর কাঁঠাল যাত্রীদের চোখ জুড়াচ্ছে। মহাসড়কটির পুকুরিয়া থেকে বিশ্ব জাকের মঞ্জিল হয়ে সদরপুর এবং মালিগ্রাম ও তালমা মোড় পর্যন্ত রাস্তার দুধারে শত শত গাছে হাজার হাজার কাঁঠাল প্রতিদিন কৌতুহলী মানুষের চোখ জুড়াচ্ছে।
তবে বরিশাল অঞ্চলে এখনো পরিপূর্ণ বানিজ্যিক ভিত্তিতে কাঁঠালের আবাদ শুরু হয়নি। এমনকি এ অঞ্চলে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই’র পক্ষ থেকেও ‘বারি’ উদ্ভাবিত উন্নতজাতের কাঁঠাল চাড়া মাঠ পর্যায়ে সরবরাহে খুব বেশী তৎপরতাও লক্ষ্যণীয় নয়। তবে সরকারী এ প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, আমরা চেষ্টা করছি যতটা সম্ভব আবাদকারীদের কাছে উন্নমানের কাঁঠাল সহ সব ধরনের ফলের চাড়া পৌছে দিতে।