একেকটি মাংসের টুকরার ওজন ১০০ গ্রাম, মেপে দেখেন কসাই জিহাদ!
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০১:২১:২৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ মে ২০২৪ ১৪৬ বার পড়া হয়েছে
ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি হত্যার ঘটনায় কলকাতার নিউটাউনে আবাসনের সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে উদ্ধার হলো মাংসের টুকরো। চার ওজন প্রায় ৪ কেজি। মাংসের গায়ে মাখানো ছিলো হলুদ। পাওয়া গেছে চুলও। তবে এই মাংস এমপি আনারের কিনা তা ফরেনসিক তদন্ত করে দেখা হবে।
মঙ্গলবার (২৮ মে) সকালে পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান (ডিবি) হারুণ আর রশিদ জানিয়েছিলেন যে ফ্ল্যাটে এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারকে হত্যা করা হয়েছে তার সোয়ারেজ লাইন এবং সেপটিক ট্যাংক খুলে দেখা হবে। অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদে তদন্তকারীরা ধারনা করেছে এমপির দেহের টুকরো সেপটিক ট্যাঙ্কে থাকতে পারে। হত্যার তদন্তে নেমে প্রথম দেহাংশ হাতে পেয়েছেন তদন্তকারীরা। তবে ফরেনসিক পরীক্ষায় আগে নিশ্চিত হওয়া যাবে না উদ্ধার হওয়া দেহাংশ কার।।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, এমপি আজিমকে হত্যার পর তার দেহের মাংস ও হাড় আলাদা করে ফেলে কসাই জিহাদ ও তার সাথী সিয়াম। মাংস ও হাড় আলাদা করা হয়। একেকটি মাংসের টুকরা ছিলো ৭০ থেকে ১০০ গ্রাম। পেশায় কশাই মাংস কেটে তার সাথে থাকা ছোট ওজনযন্ত্রে কয়েকটি মাংসের টুকরা ওজন করে দেখে নেয়। আজিমের মাথা আধখানা করে তা টুকরা টুকরা করে দেয়া হয়।
কসাই জিহাদের দাবি, মাথার টুকরা মোস্তাফিজুর ও ফয়জল অন্যান্য টুকরার সাথে আলাদা ট্রলিতে ভরেছিলো। ওই টুকরাগুলো দু’জন বনগাঁ সীমান্তের কাছে যশোর সড়কের উপর ফেলে দেয়। যদিও খালে ডুবুরি দল নামিয়ে তল্লাশি চালিয়ে এখন পর্যন্ত কিছুই পায়নি তদন্তকারীরা। সেই অন্ধকারে প্রথম আশার আলো দেখলেন তদন্তকারীরা। সোয়ারেজ পাইপ ভেঙে, সেপটিক ট্যাঙ্কে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার হলো দেহাংশ।
হত্যার তদন্তে কলকাতায় গিয়ে কলকাতার নিউ টাউনের সেই ফ্ল্যাটে যান গোয়েন্দা প্রধান। যেখানে এমপি আনারকে হত্যা করা হয়েছে।সাথে ছিলো তার নেতৃত্বাধীন তদন্তকারী একটি দল। পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি কর্মকতারাও ছিলেন। কসাই জিহাদকে প্রায় ৪ ঘণ্টা জেরা করেন হারুন।
তদন্তে সিআইডি জানতে পেরেছে, বাল্যবন্ধু আখতারুজ্জামান শাহিনের সাথে সোনার ব্যবসা করতেন এমপি আজিম। ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে আজিমের উপর শাহিনের ক্ষোভ ছিলো বলে তদন্তকারীদের একাংশের অভিমত। মনে করা হচ্ছে, এ কারণেই নিখুঁত ছক কষে কলকাতায় এনে এমপিকে ‘হত্যার’ পরিকল্পনা করে শাহিন। তবে এখনো বহু ধোঁয়াশা রয়েছে দুই দেশের তদন্তকারীদের মনে। এমপির দেহের কোনো টুকরা বা সেই টুকরা করার কাজে ব্যবহৃত ছুরি-কাঁচির হদিস মেলেনি। এই হত্যায় বাংলাদেশ থেকে তিনজন এবং কলকাতা থেকে একজন গ্রেফতার হলেও আরো চারজন অভিযুক্ত শাহিন, সিয়াম, ফয়জল এবং মুস্তাফিজুর এখনো অধরা। তাদের খোঁজ পেতে ইন্টারপোলের সাহায্য নিতে পারে রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশ। তদন্তকারীদের ধারণা, শাহিন আমেরিকায় এবং সিয়াম নেপালে পালিয়েছে। আর বাকি দুই জন বাংলাদেশে থাকতে পারেন।
গোয়েন্দা প্রধান হারুন দাবি করেন, এমপি আজিমকে হত্যা করার জন্য দুই বার পরিকল্পনা করেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেননি চক্রীরা। এরপর তারা আনোয়ারুলকে কলকাতায় এনে হত্যার চক্রান্ত করে।
তিনি বলেন, এমপিকে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনাও ছিলো। কিন্তু বেশি পরিমাণে চেতনানাশক প্রয়োগের ফলে তিনি ‘অর্ধমৃত’ হয়ে পড়ে। তখন তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।
‘সুপারি কিলার’ শিমুল ভুঁইয়াকে খুনের জন্য শাহিন ভাড়া করেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে। শিমুলই আমানুল্লা আমান নামে জাল পাসপোর্ট নিয়ে কলকাতায় গিয়ে ঘাঁটি গেড়েছিলো। শিমুলের বহুমাত্রিক পরিচয়। তিনি মাওবাদী রাজনীতির সাথে জড়িত। সেখান থেকেই ‘খুলনার ত্রাস’ এবং ‘সুপারি কিলার’-এ পরিণত। শিমুল একাধিক হত্যার মামলায় অভিযুক্ত। তবে ১০ বছরেরও বেশি সময় তার হদিস ছিলো না। ২০১৯ নাগাদ নিজের নাম বদলে তিনি আমানুল্লা নামে পাসপোর্ট তৈরি করেন।
গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, শিমুলের এক আত্মীয় ‘প্রভাবশালী’ সরকারি কর্মকর্তা। সরকারি যোগসাজশ কাজে লাগিয়েই তিনি ভুয়া পাসপোর্ট তৈরি করান বলে তদন্তকারীদের সন্দেহ। ওই পাসপোর্ট নিয়ে এমপিকে হত্যার দুই সপ্তাহ আগে কলকাতায় ঢোকেন শিমুল ওরফে আমানুল্লা। খুনের পর ১৫ মে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। পরে কলকাতার তদন্তকারীদের তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। আর তখনই বোঝা যায় আমানুল্লা এবং শিমুল একই ব্যক্তি।