আবু সাইদ হত্যা
আসামী পুলিশের ৭ কর্মকর্তা নিখোঁজ
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৮:৪৪:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪ ৪২ বার পড়া হয়েছে
গণঅআন্দোলনের মুখে ৫ আগষ্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যাওয়ার পর থেকে রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশে কর্মরত ৭ উচ্চ পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা ও এক রেজ্ঞ ডিআইজির কোন খোঁজ মিলছে না। তাদের সবার নামে বেরোবি শিক্ষার্থী আই সাইদসহ বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নিহত ৬ হত্যাসহ ৩ থেকে ৫টি করে মামলা রয়েছে। এদের কাউকেই এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
তবে এ ব্যাপারে রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশ কমিশনার কার্য্যালয়ের একজন দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ৫ আগষ্টেরে পর তাদের আর দেখা মেলেনি।
মেট্রোপলিটান পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগষ্ট এর পর রংপুর রেজ্ঞের সাবেক ডিআইজি আব্দুল বাতেন ও রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামানকে বাধ্যতামূলক অবসর দিয়েছে অন্তবর্তী সরকার। কিন্তু ৫ আগষ্টের পর তাদের রংপুরে জনসম্মুখে দেখা মেলেনি।
এ ছাড়া রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশের ডেপুটী কমিশনার আবু মারুফ হোসেন, অতিরিক্ত ডেপুটী কমিশনার উৎপল কুমার পাল , রংপুর কোতয়ালী সার্কেলের সহকারী পুলিশ কমিশনার আরিফুজ্জামান , পশুরাম সার্কেলের সহকারী কমিশনার আল ইমরান হোসেন , রংপুর মেট্রোপলিটান তাজহাট থানার ওসি রবিউল ইসলাম , রোকেয়া বিদ্যালয়ের পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক ইনচার্জ বিভুতি ভুষন রায় এই ৫ পুলিশ কর্মকর্তা ৫ আগষ্টের পর আর রংপুরে তাদের কর্মস্থলে আর দেখা যায়নি। তারা কোথায় আছেন সে সম্পর্কে পুলিশের কোন কর্মকর্তাই জানেননা বলে জানিয়েছিলেন।
এদিকে, গত ১৮ আগষ্ট বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাইদকে পুলিশ গুলি করে হত্যার ঘটনায় তার বড় ভাই রমজান আলী বাদী হয়ে রংপুর মেট্রোপলিটান ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৩০/৩৫ জন উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলায় পুলিশের আইজিপি আব্দুল্লা আল মামুন,রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান , রংপুর রেজ্ঞের সাবেক ডিআইজি আব্দুল বাতেন, ডেপুটী পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন, সহকারী কমিশনার আরিফুজ্জামান ও আল ইমরান, তাজহাট থানার ওসি রবিউল ইসলাম এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বিভুতি ভুষন রায় এজাহার নামীয় আসামী। এদের মধ্যে পুলিশের সাবেক আইজিপি আব্দুল্লা আল মামুন ঢাকায় গ্রেফতার হয়েছেন অন্য একটি মামলায় ।
নিহত আবু সাইদের বড় ভাই রমজান আলী তার দায়ের করা মামলায় অভিযোগ করেন সাবেক আইজিপি আব্দুল্লা আল মামুন সাবেক ডিআইজি আব্দুল বাতেন পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামানের নির্দ্দেশে ডেপুটী পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন এবং তাদের অন্যান্য উর্ধতন কতৃপক্ষের নির্দ্দেশে এবং প্ররোচনা ও উস্কানীতে সহকারী পুলিশ কমিশনার আরিফুজ্জামান ও আল ইমরান হোসেন ও ওসি রবিউল হোসেনের নির্দ্দেশে বেরোবির গেটের সামনে কোন প্রকাল সতর্ক না করে মাত্র ২০/২৫ ফুট দুর থেকে পুলিশ কনষ্টবল সুজন চন্দ্র রায় এএসআই আমীর আলী তাদের শর্টগান দিয়ে নির্মম ও নৃশংস ভাবে গুলি করে হত্যা করেছে।
সাইদ হত্যা মামলা দায়ের হবার পর পরেই সব পুলিশ কর্মকর্তা গা ঢাকা দেয় এরপর তাদের আর কোন সন্ধান মেলেনি। তবে পুলিশ কনষ্টবল সুজন চন্দ্র ও এএস আই আমীর আলী নিজেরা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পন করলে তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে চালান দেয় পিবিআই। আদালতের কাছে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত ৪ দিনের রিমান্ড মজ্ঞুর করেন।
কিন্তু রিমান্ড শেষ হবার আগেই পিবিআই তাদের আসুস্থ বলে আদালতে হাজির করে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করে। এ ঘটনায় বাদী পক্ষের প্রধান আইনজিবী শামীম আল মামুন এ্যাডভোকেট আসামীদের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মুলক জবান বন্দি গ্রহন করার পদক্ষেপ না নিয়ে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করাকে অগ্রহনযোগ্য বলে অভিযোগ করেন।
এদিকে, ৭ পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রংপুরে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই ৬ ছাত্র জনতা নিহত হবার ঘটনায় তাদের বিভিন্ন হত্যা মামলায় আসামী করা হয়। নিখোজ ৭ পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ৫ থেকে ৭টি করে হত্যা মামলা সহ গুলি করে আহত করার বেশ কয়েকটি করে মামলা রয়েছে।
এ ব্যাপারে নিহত আবু সাইদের বড় ভাই রমজান আলী অভিযোগ করেন পুলিশ উর্দতন তোন কর্মকর্তাকেই এখনো গ্রেফতার করা হয়নি। তিনি দ্রুত তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। একই ভাবে নিহত শিক্ষার্থী আব্দুল্লা তাহির , ব্যবসায়ী মিলনের স্বজনরাও হত্যাকান্ডের নির্দ্দেশ দাতা ও গুলি করে হত্যাকারী পুলিশ কর্তাদের দ্রæত গ্রেফতার দাবি করেন।
এ ব্যাপারে রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশের ডিসি হেড কোয়াটার আবু বক্করের সাথে মোবাইল ফোনে বুধবার (৯ অক্টোবর) বিকেলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ৭ পুলিশ কর্মকর্তা মধ্যে ৫ জনকে বাধ্যতামূলক অবসর দিয়েছে সরকার। বাকী ৫ জনকে বিভিন্ন স্থানে পোষ্টিং দিয়েছিলো পুলিশ সদর দপ্তর তবে তারা সেখানে যোগদান করেছে কিনা তা তিনি বলতে পারবেন না বলে জানান।
তবে পুলিশের দায়িত্ব সুত্র জানিয়েছে , আসামীদের মধ্যে ২/৩ ভারতে পালিয়ে গেছে। বাকীরা বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে আছে।