অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের পরিচিতি
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১১:৫৬:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ অগাস্ট ২০২৪ ৫০ বার পড়া হয়েছে
শপথ নিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস । এর ফলে ১৬ উপদেষ্টা নিয়ে তার সরকারের যাত্রা শুরু হলো । বৃহস্পতিবার( ৮ আগস্ট) রাত ৯টায় শপথগ্রহণ করে দায়িত্বগ্রহণ করেন তিনি ।
এবার জেনে নিন ১৬ উপদেষ্টার পরিচিতি
১. সালেহ উদ্দিন আহমেদ
বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের নবম গভর্নর ছিলেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ । ড. ফখরুদ্দীন আহমদ দায়িত্ব ত্যাগের পর তিনি ২০০৫ সালের ১ মে গভর্নর হিসাবে দায়িত্ব লাভ করেন । ২০০৯ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এই পদে অধিষ্টিত থাকেন ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শ্রীরামপুর( দরিশ্রীরামপুর) গ্রামে জন্ম ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ’র । তিনি ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯৬৩ সালে এবং ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৬৫ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে যথাক্রমে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন । ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএ অনার্স পাস করেন এবং ১৯৬৯ সালে একই বিষয়ে এমএ পাস করেন । ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির লেকচারার হিসেবে যোগ দেন । তৎকালীন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় প্রশাসনে সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান( সিএসপি) ক্যাডারে যোগ দেন । ১৯৭৮ সালে কানাডার হ্যামিল্টন শহরে অবস্থিত ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন ।
২. ড. আসিফ নজরুল
১৯৬৬ সালের ১২ জানুয়ারি জন্ম আসিফ নজরুলের । তিনি একাধারে লেখক, ঔপন্যাসিক, রাজনীতি- বিশ্লেষক, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও কলামিস্ট । তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে আসিফ নজরুল ১৯৮৬ সালে স্নাতক ও ১৯৮৭ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন । ১৯৯৯ সালে সোয়াস( স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ) ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে তার পিএইচডি সম্পন্ন করেন । পরবর্তীতে জার্মানির বন শহরের ইনভায়রনমেন্টাল ল’ সেন্টার থেকে তিনি পোস্ট ডক্টরেট ফেলোশিপ অর্জন করেন । তিনি স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজে একজন কমনওয়েলথ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পূর্বে ১৯৯১ সালে আসিফ নজরুল একটি বহুল প্রচারিত সাপ্তাহিক পত্রিকা বিচিত্রায় কাজ করতেন । তিনি কিছু সময় বাংলাদেশ সরকারের একজন সরকারি কর্মকর্তা( ম্যাজিস্ট্রেট) হিসেবে কাজ করেন ।
৩. আদিলুর রহমান খান
১৯৫২ সালে ২৩ ডিসেম্বর জন্ম আদিলুর রহমান খানের । একজন মানবাধিকার কর্মী এবং মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের প্রতিষ্ঠাতা । তিনি বাংলাদেশের একজন আইনজীবী এবং সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল । তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন । আদিলুর রহমান এবং সুশীল সমাজের অন্যান্য সদস্যরা ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর মানবাধিকার সংস্থা অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন । তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বাংলাদেশ জামায়াত- ই- ইসলামী সরকার কর্তৃক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নিযুক্ত হয়েছিলেন ।
২০১৩ সালে, হেফাজত- ই- ইসলাম বাংলাদেশ ২০১৩ সালের শাপলা স্কোয়ার বিক্ষোভের সময় নেতা- কর্মীদের অপসারণের অভিযানে নিহতের সংখ্যা সম্পর্কে’ বিভ্রান্তি ছড়ানোর’ জন্য খানের বিরুদ্ধে ঢাকায় একটি মামলা দায়ের করা হয় ।
৪. এ এফ হাসান আরিফ
আইনজীবী এএফ হাসান আরিফ বাংলাদেশের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন । তিনি ১৯৪১ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন । আরিফ সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ কলকাতা থেকে তার মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন । তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং এলএলবি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন ।
হাসান আরিফ অক্টোবর ২০০১ থেকে এপ্রিল ২০০৫ পর্যন্ত বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেলের পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন । তিনি জানুয়ারি ২০০৮ থেকে জানুয়ারি ২০০৯ পর্যন্ত বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা ছিলেন ।
৫. তৌহিদ হোসেন
১৯৫৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জন্ম মো. তৌহিদ হোসেনের । তিনি সাবেক পররাষ্ট্র সচিব । দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার ছিলেন তিনি । এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন । তিনি ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিসে যোগদান করেন ।
৬. সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান
১৯৬৮ সালের ১৫ জানুয়ারি জন্ম সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের । বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ‘ পরিবেশ পুরস্কার’ এবং প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ‘ গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল প্রাইজ’ প্রাপ্ত, এবং ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে টাইম সাময়িকীর ‘ হিরোজ অব এনভায়রনমেন্ট’ খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশি আইনজীবী ও পরিবেশকর্মী ।
৭. মো. নাহিদ ইসলাম
কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম । তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেন । নাহিদের জন্ম ১৯৯৮ সালে ঢাকায় । তার বাবা শিক্ষক । মা গৃহিণী । ছোট এক ভাই রয়েছে তার । তিনি সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন । বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করছেন ।
৮. আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া
কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া । তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেন ।
৯. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল( অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন
১৯৪৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জন্ম এম সাখাওয়াত হোসেনের । তিনি একজন সাবেক নির্বাচন কমিশনার( ২০০৭- ২০১২) । তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল( অবসরপ্রাপ্ত) ।
১০. সুপ্রদীপ চাকমা
সুপ্রদীপ চাকমা সাবেক রাষ্ট্রদূত ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান । সুপ্রদীপ চাকমার জন্ম ১৯৬১ সালে খাগড়াছড়ির কমলছড়িতে । তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন । তিনি সপ্তম বিসিএসে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন । মেক্সিকো ও ভিয়েতনামে রাষ্ট্রদূত ছিলেন সুপ্রদীপ চাকমা । এছাড়া রাবাত, ব্রাসেলস, আঙ্কারা এবং কলম্বোতে বাংলাদেশ মিশনেও তিনি বিভিন্ন পদে কাজ করেছেন ।
১১. ফরিদা আখতার
ফরিদা আখতার একজন লেখক, গবেষক ও আন্দোলনকর্মী । বেসরকারি সংস্থা উবিনীগের( উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণা) নির্বাহী পরিচালক তিনি ।
১২. বিধান রঞ্জন রায়
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ছিলেন তিনি
১৩. আ. ফ. ম খালিদ হাসান
আবুল ফয়েজ মুহাম্মদ খালিদ হোসেন( যিনি ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন নামে সর্বাধিক পরিচিত । ১৯৫৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন । তিনি বাংলাদেশি সুন্নি দেওবন্দি ইসলামী পণ্ডিত । তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক নায়েবে আমীর, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শিক্ষা উপদেষ্টা, মাসিক আত তাওহীদের সম্পাদক, বালাগুশ শরকের সহকারী সম্পাদক এবং আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের কুরআনিক সায়েন্সেস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অতিথি শিক্ষক ।
১৪. নুরজাহান বেগম
তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ।
১৫. শারমিন মুরশিদ
ব্রতী প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ ।
১৬. ফারুক- ই- আজম
তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র সমন্বিত যুদ্ধাভিযান ‘ অপারেশন জ্যাকপট’ । চট্টগ্রাম বন্দরে আক্রমণের জন্য গঠিত ওই অভিযানিক দলের উপ- অধিনায়ক ছিলেন তিনি । ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সূচনাকালে ফারুক- ই- আজম উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন । ওই সময় তিনি খুলনায় ছিলেন । মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে তিনি চট্টগ্রামে পৌঁছান । ৬ মে তিনি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের হরিণা ইয়ুথ ক্যাম্পে আশ্রয় নেন । এই অবস্থায় তিনি একদিন শুনলেন, নৌবাহিনীর জন্য মুক্তিযোদ্ধা রিক্রুট করা হবে । তিনি লাইনে দাঁড়ালেন । টিকে গেলেন । পলাশিতে দুই মাসের প্রশিক্ষণ শেষে ১ আগস্ট অপারেশনের জন্য তাঁকে মনোনীত করা হয় ।