অনুসন্ধান শেষই হচ্ছে না!
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৫:১২:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ জুলাই ২০২৪ ১০৬ বার পড়া হয়েছে
বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের অবৈধ সম্পদ নিয়ে দু’দকের অনুসন্ধান এবং সম্পদ জব্দের তথ্য আসছে প্রায়ই। তবে অনেকটাই ভিন্ন চিত্র দেশের অন্যতম বাণিজ্য এলাকা খুলনায়। দু’দকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় খুলনার কর্মকর্তাদের নজর যেন চুনোপুঁটি ধরায়। আর রাঘববোয়ালরা থেকে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে সাতটি মামলা এবং ৬টি অভিযোগপত্র দিয়েছে খুলনা দু’দক। এতে আসামি করা ৩১ জনের বেশির ভাগই নিম্নপদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারী। টাকার অঙ্কে অনিয়মের পরিমাণও কম। অথচ ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিক উদ্দিন, খুলনার প্রভাবশালী কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ উচ্চপদস্থদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধান যেন শেষই হচ্ছে না।
খুলনায় প্রিপেইড মিটার তৈরির কোম্পানি খুলে প্রায় ৩৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিক উদ্দিনের বিরুদ্ধে দু’দকের তদন্ত শুরু হয় ২০২৩ সালের মে মাসে। এই তদন্ত শেষ হওয়ার কথা ছিলো ১৮০ দিনের মধ্যে। তবে এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো শেষ হয়নি তদন্ত।
এছাড়া ভুয়া রপ্তানি বিল তৈরি করে রূপালী ব্যাংকের প্রায় ১১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ব্যাংকের কর্মকর্তার পাশাপাশি মেসার্স বায়োনিক সি ফুড এক্সপোর্ট লিমিটেড, মেসার্স প্রিয়াম ফিশ এক্সপোর্ট লিমিটেডসহ ৪টি কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয় ২০২৩ সালের জুলাইয়ে। এক বছরেও সেই অনুসন্ধান শেষ হয়নি।
এছাড়া খুলনার আলোচিত ওসি মমতাজুল হক, তৈমুর হোসেন ও মোংলা বন্দরের প্রধান প্রকৌশলী এস কে শওকত আলীর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ নিয়ে অনুসন্ধান করছে দু’দক। ২০২২ সালের শেষ দিকে শুরু হওয়া তদন্ত এখনো চলমান রয়েছে।
খুলনা দু’দক কর্মকর্তাদের দাবি, আগামী দু’মাসের মধ্যে বড় কিছু অভিযোগের অনুসন্ধান শেষ হবে। এতে বেশ কয়েকজন বড় মাপের দুর্নীতিবাজ ধরা পড়বেন।
খুলনা সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা বলেন, দু’দককে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। বড় দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে ধীরে চলো নীতি এবং অপেক্ষাকৃত ছোটদের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপে মানুষের কাছে ভিন্ন বার্তা যাবে।
গত ৩১ জানুয়ারি বছরের প্রথম মামলাটি করে খুলনা দুদক। এতে নগরের খালিশপুরের বাসিন্দা সাব-কন্ট্রাক্টর নুরুল ইসলাম রতনের বিরুদ্ধে এক কোটি ৩৮ লাখ ৮৮ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। এর পর ২২ ফেব্রুয়ারি বাগেরহাট সদরের উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শেখ মনিরুল হাসানের বিরুদ্ধে ১৯ লাখ ৭৬ হাজার টাকার এবং স্ত্রী শারমিন আক্তারের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ৪৪ লাখ ১১ হাজার টাকার সম্পদ পাওয়ার অভিযোগে দুটি মামলা হয়।
এছাড়া ৮ এপ্রিল সাতক্ষীরার গাবুরা ইউপি সদস্য জি এম আরিফুর রহমানের বিরুদ্ধে ৩৫ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন, ২ মে খুলনা নগর পুলিশের এসআই সোহেল রানার বিরুদ্ধে ১০ লাখ ৬১ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপন, ২০ মে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ও রুহুল আমিন নামে খুলনার এক ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ৫৫ লাখ টাকায় স্লুসগেটের শিট পাইলিংয়ে অনিয়মের অভিযোগে মামলা হয়।
সবশেষ চলতি বছরের ১১ জুন সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার এলজিইডি অফিসের হিসাবরক্ষক কাজী আবু হাফিজ ফসিউদ্দীনের বিরুদ্ধে মামলা হয় ৫২ লাখ ৬৫ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে।
এদিকে আগের ৬টি মামলায় তদন্ত শেষে দেয়া অভিযোগপত্রের আসামিরা নিম্নপদস্থ। এরমধ্যে দু’টি ক্ষেত্রেই শুধু টাকার অংশ কোটি ছাড়িয়েছে।
বর্তমানে ১০৫ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান এবং ৬৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে জানিয়ে খুলনা দুদকের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, দু’দক খুলনা কার্যালয়ে কর্মকর্তা রয়েছে ৬ জন। আর তাদের কাঁধেই এই ১৭১টি ফাইল রয়েছে। এ জন্য অনুসন্ধান ও তদন্তে সময় লাগছে বেশি।