রাজনীতিতে নতুন মোড়! সবার চোখ লন্ডনে

- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১০:১৬:৪৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫ ৩৩ বার পড়া হয়েছে
আগামী এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ঈদের আগের দিন বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া ভাষণে এমন ঘোষণার পর বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলোর মধ্যে অস্তিরতা বিরাজ করছে। বাম গণতান্ত্রিক জোটের দলগুলোর বইছে ক্ষোভ।
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর বিএনপি এক প্রতিক্রিয়ায় নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং প্রধান উপদেষ্টা শব্দ চয়নে ‘রাজনৈতিক ভব্যতার সীমা অতিক্রম’ করেন। বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ‘ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার অভিলাষ’ ফুটে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন। অন্যদিক জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ইসলামী দল এবং এনসিপি নির্বাচনের ঘোষিত সময় সম্পর্কে শর্ত দিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা মনে করেন, বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের আপত্তি উপেক্ষা করে প্রধান উপদেষ্টা যদি এপ্রিলেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অনড় থাকেন তাহলে দেশের রাজনীতিতে সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি হবে। ১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের মিটিংয়ের পর আসলে বোঝা যাবে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে বা যাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ মনে করেন, রাজনৈতিক দলের আপত্তি উপেক্ষা করে প্রধান উপদেষ্টা যদি এপ্রিলেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অনড় থাকেন তাহলে দেশের রাজনীতিতে সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক কে এম মহিউদ্দিন বলেন, জনমনে একটা আশঙ্কা রয়েছে নির্বাচন নিয়ে। এটা থাকা স্বাভাবিক। কারণ এখনো সুনির্দিষ্ট করে কোনো রোডম্যাপ পায়নি জনগণ। একেক সময় একেকটা তারিখ শোনা যাচ্ছে, কখনো ডিসেম্বর, কখনো জুন, এখন এপ্রিলের প্রথমার্ধের কথা আসছে। ১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকের পর বোঝা যাবে যে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে বা যাবে।
নির্বাচন যত দেরিতে হবে বিএনপির জন্য ততই ক্ষতি। ডিসেম্বর পার হয়ে জানুয়ারি এলেই আরো নতুন ভোটার। কয়েকটি দলের ধারণা, তারা নতুন ভোটারদের সমর্থন পাবে। এ জন্য ডিসেম্বরেই জাতীয় নির্বাচন-এই দাবি থেকে বিএনপির সরে আসাটা দলীয়ভাবে ক্ষতি হবে বলে দলটির নেতারা হয়তো ভাবছেন।
অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী মনে করছে, দেরি হলেই তাদের লাভ। এনসিপি আরেকটু সময় চাইবে, যাতে তারা তাদের দলটা গোছাতে পারে। শুরু থেকেই দেখা যাচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপি কিছুটা মুখোমুখি অবস্থায়। বিএনপির পক্ষ থেকে এই সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
নির্বাচনের সময় নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে কী ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে যাচ্ছে, আগামী ১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর তা অনেকটাই পরিষ্কার হতে পারে। এমনটাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঙ্গলবার (১০ জুন) সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ওই বৈঠকে নতুন ‘ডাইমেনশন’ তৈরি হতে পারে। নতুন একটা দিগন্তের উন্মোচন হতে পারে।
তিনি বলেন, রমজানের আগে প্রচার-প্রচারণায় অনেক সমস্যা হবে। প্রতিদিনই ইফতার মাহফিল করা লাগবে। নির্বাচনী ব্যয় দ্বিগুণ হবে। প্রচণ্ড গরমের কারণে সমাবেশে লোকজন আনা যাবে না।
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পরের দিন গত ৭ জুন বাম গণতান্ত্রিক জোট এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলে, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ঈদের আগের দিন দেওয়া ভাষণে সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়ার কোনো প্রতিফলন ঘটেনি, বরং রাখাইনে করিডর, চট্টগ্রামের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালকে বিদেশিদের কাছে লিজ দেওয়ার বিষয়ে এবং ওই বিষয়ে বিরোধিতাকারীদের নিয়ে যা বলা হয়েছে এবং যে সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং দেশবাসীর জন্য গভীর উদ্বেগেরও বটে।
জামায়াতে ইসলামী একসময় জানিয়েছিল তারা আগামী বছর রোজার আগে নির্বাচন চায়। সেই অবস্থান থেকে সরে এসে গত ২ জুন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে দলটি জানায়, চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন চায়। তারা নির্বাচনের তারিখের বিষয়ে কঠোর নয়, নমনীয় থাকতে চায়।
প্রধান উপদেষ্টা এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন হবে জানালে গত ৬ জুন সন্ধ্যায় দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় জাতি আশ্বস্ত হয়েছে এবং ঘোষিত সময়ের মধ্যেই একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে জাতি আশা প্রকাশ করছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য জায়েদ বিন নাসের সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বড় কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে অনবরত চাপের ফলে নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ জানিয়েছে সরকার। তবে আমরা মনে করি, বিচার ও সংস্কারের দিকে এখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া দরকার।