ঢাকা ০৫:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাগেরহাটে একযুগের ভাঙা কাঠের সেতু ১০ গ্রামের মানুষের ঝুঁকিপূর্ণ চলাচল

বাগেরহাট প্রতিনিধি
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৯:০৯:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫ ১৯ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মরিচা ধরা লোহার পিলার ও রেল পাটির উপর ফাঁকা ফাঁকা কাঠ। দেখতে পরিত্যক্ত কোন সেতুর ধ্বংসাবশেষ মনে হলেও, বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার মূলঘর ইউনিয়নের চিত্রানদীর উপর নির্মিত কলকলিয়া-মায়েরখালী কাঠের সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন পারাপার হয় কয়েক হাজার মানুষ ও শিক্ষার্থীরা। একযুগ ধরে এমন নাজুক অবস্থা চলে আসলেও দেখার কেই নেই ।

ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতুটি দিয়েই মায়েরখালি, কলকলিয়া, গোয়ালখালী, কাঠালবাড়ি, বানিয়াখালীসহ ১০টি গ্রামের মানুষ ফকিরহাট উপজেলা সদর ও জেলা শহরের সাথে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ রক্ষা করেন। এছাড়া সেতুটির একপাশে থাকা কলকলিয়া গুরুচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলকলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন বিপাকে। নাজুক এই সেতু দিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া আসার সময় মাঝে মাঝেই দুর্ঘটনার কবলে পড়েন পথচারী ও শিক্ষার্থীরা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বারবার আশ্বাস পেলেও, সংস্কার হয়নি সেতুটি।

অতিদ্রæত সেতুটি পুনঃনির্মাণের দাবি জানিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বারবার আবেদন করেও কাঠের সেতুটি পুনঃনির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এলাকার লোকজন নিজেরাই চাঁদা তুলে বারবার সাময়িক সংস্কার করেছেন, কিন্তু স্থায়ী সমাধান মেলেনি।

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাইমা আফরিন জানান, ১২ বছর ধরে এই সেতু ব্যবহার করছি। আমাদের কাছে এটি এক অভিশাপ। এখন এটি একদম কঙ্কালসার হয়ে গেছে। স্কুলে যেতে গিয়ে কয়েকবার নদীতে পড়ে গেছি। সংস্কারের কথা অনেক বছর ধরে শুনছি, কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া জানায়, একদিন ব্রিজ পার হতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলাম, খুব ব্যথা পেয়েছিলাম। সরকার যেন তাড়াতাড়ি আমাদের ব্রিজটা ঠিক করে দেয়।

এই সেতুটি নিয়ে অভিভাবকরাও রয়েছেন আতঙ্কে। নীলিমার মা সুবর্ণা সরকার জানান, এক যুগ ধরে বাচ্চাদের একা স্কুলে পাঠাতে ভয় পাই। বাধ্য হয়ে প্রতিদিন সঙ্গে যেতে হয়। এই সেতু পার হতে নিজেকেই ভয় লাগে, ওরা তো এখনো ছোট। সরকারের কাছে অনুরোধ, অন্তত আমাদের এই ভয়টা দূর করে দিন।

কলকলিয়া গুরুচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রজীত কুমার মজুমদার জানান, প্রতিদিন এই ব্রিজ পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। দ্রæত সময়ের মধ্যে ষ্টিল বডির কাঠের এই সেতু পুনর্র্নিমাণ না হলে বড় ধরনের প্রাণহানি ঘটতে পারে।

বাগেরহাট স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরিফুজ্জামান জানান, ফকিরহাট উপজেলার কাঠের সেতুটির স্থানে ৫৫ মিটার দীর্ঘ আরসিসি পাকা সেতু নির্মাণের জন্য নকশা তৈরির কাজ চলছে। প্রয়োজনীয় দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষ হলেই দ্রæত দরপত্র আহ্বান করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

বাগেরহাটে একযুগের ভাঙা কাঠের সেতু ১০ গ্রামের মানুষের ঝুঁকিপূর্ণ চলাচল

সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৯:০৯:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫

মরিচা ধরা লোহার পিলার ও রেল পাটির উপর ফাঁকা ফাঁকা কাঠ। দেখতে পরিত্যক্ত কোন সেতুর ধ্বংসাবশেষ মনে হলেও, বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার মূলঘর ইউনিয়নের চিত্রানদীর উপর নির্মিত কলকলিয়া-মায়েরখালী কাঠের সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন পারাপার হয় কয়েক হাজার মানুষ ও শিক্ষার্থীরা। একযুগ ধরে এমন নাজুক অবস্থা চলে আসলেও দেখার কেই নেই ।

ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতুটি দিয়েই মায়েরখালি, কলকলিয়া, গোয়ালখালী, কাঠালবাড়ি, বানিয়াখালীসহ ১০টি গ্রামের মানুষ ফকিরহাট উপজেলা সদর ও জেলা শহরের সাথে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ রক্ষা করেন। এছাড়া সেতুটির একপাশে থাকা কলকলিয়া গুরুচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলকলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন বিপাকে। নাজুক এই সেতু দিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া আসার সময় মাঝে মাঝেই দুর্ঘটনার কবলে পড়েন পথচারী ও শিক্ষার্থীরা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বারবার আশ্বাস পেলেও, সংস্কার হয়নি সেতুটি।

অতিদ্রæত সেতুটি পুনঃনির্মাণের দাবি জানিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বারবার আবেদন করেও কাঠের সেতুটি পুনঃনির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এলাকার লোকজন নিজেরাই চাঁদা তুলে বারবার সাময়িক সংস্কার করেছেন, কিন্তু স্থায়ী সমাধান মেলেনি।

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাইমা আফরিন জানান, ১২ বছর ধরে এই সেতু ব্যবহার করছি। আমাদের কাছে এটি এক অভিশাপ। এখন এটি একদম কঙ্কালসার হয়ে গেছে। স্কুলে যেতে গিয়ে কয়েকবার নদীতে পড়ে গেছি। সংস্কারের কথা অনেক বছর ধরে শুনছি, কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া জানায়, একদিন ব্রিজ পার হতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলাম, খুব ব্যথা পেয়েছিলাম। সরকার যেন তাড়াতাড়ি আমাদের ব্রিজটা ঠিক করে দেয়।

এই সেতুটি নিয়ে অভিভাবকরাও রয়েছেন আতঙ্কে। নীলিমার মা সুবর্ণা সরকার জানান, এক যুগ ধরে বাচ্চাদের একা স্কুলে পাঠাতে ভয় পাই। বাধ্য হয়ে প্রতিদিন সঙ্গে যেতে হয়। এই সেতু পার হতে নিজেকেই ভয় লাগে, ওরা তো এখনো ছোট। সরকারের কাছে অনুরোধ, অন্তত আমাদের এই ভয়টা দূর করে দিন।

কলকলিয়া গুরুচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রজীত কুমার মজুমদার জানান, প্রতিদিন এই ব্রিজ পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। দ্রæত সময়ের মধ্যে ষ্টিল বডির কাঠের এই সেতু পুনর্র্নিমাণ না হলে বড় ধরনের প্রাণহানি ঘটতে পারে।

বাগেরহাট স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরিফুজ্জামান জানান, ফকিরহাট উপজেলার কাঠের সেতুটির স্থানে ৫৫ মিটার দীর্ঘ আরসিসি পাকা সেতু নির্মাণের জন্য নকশা তৈরির কাজ চলছে। প্রয়োজনীয় দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষ হলেই দ্রæত দরপত্র আহ্বান করা হবে।