ঢাকা ০৬:০৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৪ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যেভাবে পালিয়ে ভারতে যান শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৫০:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ২২ বার পড়া হয়েছে
বাংলা টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে ২০২৪ সালের বছরের ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা। ওইদিন ঢাকা থেকে পালিয়ে প্রথমে ভারতের কলকাতা, তারপর দিল্লিতে পৌঁছান তিনি। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি উড়োজাহাজ তাকে ভারতে পৌঁছে দেয়।

শেখ হাসিনা পালানোর এক মাস পর জানা যায়, অবস্থান ও যাত্রাপথ গোপন রাখার স্বার্থে তাকে বহনকারী ফ্লাইট ‘এজেএক্স ১৪৩১’ উড়োজাহাজটির ট্রান্সপন্ডার বন্ধ রাখা হয়েছিল।

শেখ হাসিনাকে বহনকারী উড়োজাহাজটি প্রথমে কলকাতার দিকে যায়, কারণ এটি দ্রুত বাংলাদেশের আকাশসীমা ছাড়তে চেয়েছিল। ঢাকা-দিল্লির যে আকাশপথ রয়েছে সেটি দিয়ে গেলে উড়োজাহাজটিকে রাজশাহীর ওপর দিয়ে যেতে হতো। এতে করে বাংলাদেশের আকাশ সীমায় উড়োজাহাজটিকে আরও কয়েক মিনিট থাকতে হতো।

শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবনে বিক্ষোভকারীরা প্রবেশের মাত্র ৩০ মিনিট আগে উড়োজাহাজটি একটি প্রশিক্ষণ ফ্লাইট হিসেবে উড্ডয়ন করে। ওই সময়ই এটির ট্রান্সপন্ডার বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ট্রান্সপন্ডারের মাধ্যমে উড়োজাহাজের অবস্থান, গন্তব্য, উচ্চতা, গতি ও সয়ংক্রিয় জিওলোকেটরের তথ্য পাওয়া যায়। উড়োজাহাজটি যখন পশ্চিমবঙ্গের কাছাকাছি পৌঁছায় তখন এটির ট্রান্সপন্ডারটি চালু করা হয়।

অপরদিকে উড়োজাহাজটির জিওলোকেটর চালু করা হয় ঢাকা-কলকাতা রুটের ‘বিইএমএকে’ ওয়ে পয়েন্টে পৌঁছানোর পর। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ উড়োজাহাজটির কোড নাম্বার দেয় ১৪৩১। এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল থেকে প্রতিটি উড়োজাহাজকে চার সংখ্যার এমন আলাদা একটি কোড দেওয়া হয়। এই কোডটি হাসিনাকে বহনকারী উড়োজাহাজের ট্রান্সপন্ডারে ম্যানুয়ালি যুক্ত করেন ক্রুরা। যদিও বিমানটি সেকেন্ডারি রাডারে দৃশ্যমান ছিল না। কিন্তু পাইলটরা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং কলকাতা অঞ্চলের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছিলেন।

হাসিনাকে বহনকারী উড়োজাহাজের যাত্রাপথ ও বাংলাদেশের ভেতরে এটির অবস্থান গোপন রাখতে বন্ধ রাখা হয় ট্রান্সপন্ডার।

উড়োজাহাজটিকে ২৪ হাজার ফুট উচ্চতায় যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। উড্ডয়নের পর শাহজালাল বিমানবন্দরের ট্রাফিক কন্ট্রোলার হাসিনাকে বহনকারী উড়োজাহাজের পাইলটকে একটি সতর্কতাবার্তাও পাঠান। এতে বলা হয়, ‘একটি উড়োজাহাজ ঢাকার দিকে আসছে এবং এটি তাদের ঠিক উপরে আছে। উড়োজাহাজটি ২৬ হাজার ফুট নিচে নেমে আসছে।’

হাসিনার উড়োজাহাজটি বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করার পরই এটিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাসিমারা ঘাঁটিতে থাকা দুটি ড্যাসাল্ট রাফায়েল যুদ্ধবিমান এসকর্ট দেয়।

হাসিনাকে বহনকারী উড়োজাহাজ ভারত সীমান্ত থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে থাকা অবস্থায় এটিকে অনুসরণ করা শুরু করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা এবং তাদের সাথে থাকা নিরাপত্তা বাহিনীর কোনো সদস্য ইমিগ্রেশন করেননি। হাসিনার কাছে ওই সময় কূটনৈতিক পাসপোর্ট এবং রেহানার কাছে ব্রিটিশ পাসপোর্ট ছিল।

বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে হাসিনাকে বহনকারী উড়োজাহাজটি হিন্দন ঘাঁটিতে অবতরণ করে। যা রাজধানী দিল্লি থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বিমানটি হিন্দন ঘাঁটিতে পৌঁছানোর পর হাসিনাকে উত্তর প্রদেশের একটি নিরাপদ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

যেভাবে পালিয়ে ভারতে যান শেখ হাসিনা

সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৫০:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে ২০২৪ সালের বছরের ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা। ওইদিন ঢাকা থেকে পালিয়ে প্রথমে ভারতের কলকাতা, তারপর দিল্লিতে পৌঁছান তিনি। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি উড়োজাহাজ তাকে ভারতে পৌঁছে দেয়।

শেখ হাসিনা পালানোর এক মাস পর জানা যায়, অবস্থান ও যাত্রাপথ গোপন রাখার স্বার্থে তাকে বহনকারী ফ্লাইট ‘এজেএক্স ১৪৩১’ উড়োজাহাজটির ট্রান্সপন্ডার বন্ধ রাখা হয়েছিল।

শেখ হাসিনাকে বহনকারী উড়োজাহাজটি প্রথমে কলকাতার দিকে যায়, কারণ এটি দ্রুত বাংলাদেশের আকাশসীমা ছাড়তে চেয়েছিল। ঢাকা-দিল্লির যে আকাশপথ রয়েছে সেটি দিয়ে গেলে উড়োজাহাজটিকে রাজশাহীর ওপর দিয়ে যেতে হতো। এতে করে বাংলাদেশের আকাশ সীমায় উড়োজাহাজটিকে আরও কয়েক মিনিট থাকতে হতো।

শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবনে বিক্ষোভকারীরা প্রবেশের মাত্র ৩০ মিনিট আগে উড়োজাহাজটি একটি প্রশিক্ষণ ফ্লাইট হিসেবে উড্ডয়ন করে। ওই সময়ই এটির ট্রান্সপন্ডার বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ট্রান্সপন্ডারের মাধ্যমে উড়োজাহাজের অবস্থান, গন্তব্য, উচ্চতা, গতি ও সয়ংক্রিয় জিওলোকেটরের তথ্য পাওয়া যায়। উড়োজাহাজটি যখন পশ্চিমবঙ্গের কাছাকাছি পৌঁছায় তখন এটির ট্রান্সপন্ডারটি চালু করা হয়।

অপরদিকে উড়োজাহাজটির জিওলোকেটর চালু করা হয় ঢাকা-কলকাতা রুটের ‘বিইএমএকে’ ওয়ে পয়েন্টে পৌঁছানোর পর। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ উড়োজাহাজটির কোড নাম্বার দেয় ১৪৩১। এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল থেকে প্রতিটি উড়োজাহাজকে চার সংখ্যার এমন আলাদা একটি কোড দেওয়া হয়। এই কোডটি হাসিনাকে বহনকারী উড়োজাহাজের ট্রান্সপন্ডারে ম্যানুয়ালি যুক্ত করেন ক্রুরা। যদিও বিমানটি সেকেন্ডারি রাডারে দৃশ্যমান ছিল না। কিন্তু পাইলটরা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং কলকাতা অঞ্চলের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছিলেন।

হাসিনাকে বহনকারী উড়োজাহাজের যাত্রাপথ ও বাংলাদেশের ভেতরে এটির অবস্থান গোপন রাখতে বন্ধ রাখা হয় ট্রান্সপন্ডার।

উড়োজাহাজটিকে ২৪ হাজার ফুট উচ্চতায় যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। উড্ডয়নের পর শাহজালাল বিমানবন্দরের ট্রাফিক কন্ট্রোলার হাসিনাকে বহনকারী উড়োজাহাজের পাইলটকে একটি সতর্কতাবার্তাও পাঠান। এতে বলা হয়, ‘একটি উড়োজাহাজ ঢাকার দিকে আসছে এবং এটি তাদের ঠিক উপরে আছে। উড়োজাহাজটি ২৬ হাজার ফুট নিচে নেমে আসছে।’

হাসিনার উড়োজাহাজটি বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করার পরই এটিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাসিমারা ঘাঁটিতে থাকা দুটি ড্যাসাল্ট রাফায়েল যুদ্ধবিমান এসকর্ট দেয়।

হাসিনাকে বহনকারী উড়োজাহাজ ভারত সীমান্ত থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে থাকা অবস্থায় এটিকে অনুসরণ করা শুরু করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা এবং তাদের সাথে থাকা নিরাপত্তা বাহিনীর কোনো সদস্য ইমিগ্রেশন করেননি। হাসিনার কাছে ওই সময় কূটনৈতিক পাসপোর্ট এবং রেহানার কাছে ব্রিটিশ পাসপোর্ট ছিল।

বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে হাসিনাকে বহনকারী উড়োজাহাজটি হিন্দন ঘাঁটিতে অবতরণ করে। যা রাজধানী দিল্লি থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বিমানটি হিন্দন ঘাঁটিতে পৌঁছানোর পর হাসিনাকে উত্তর প্রদেশের একটি নিরাপদ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।