https://bangla-times.com/
ঢাকারবিবার , ১৯ নভেম্বর ২০২৩

শিক্ষিত বেকার যুবকদের অনুপ্রেরণা বাদশা

বাংলা টাইমস্
নভেম্বর ১৯, ২০২৩ ৬:৪৮ পূর্বাহ্ণ । ৯ জন
Link Copied!

শাহজাহান আলী বাদশা-১৯৭৭ সালে যখন মাস্টার্স শেষ করেন তখন পাবনা জেলার ঈশ্বরদীর ছলিমপুর গ্রামে বাবা আবু জাফর প্রাংয়ের সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৪-৫ বিঘা। ছাত্রজীবন থেকেই শাক-সবজি আলু, টমেটো, গাজর, বেগুন ইত্যাদির চাষ করতেন।

বাদশা মিয়া বলেন, ১৯৭৭ সালে বেগুন চাষে সাফল্য অর্জন করি। ২ বিঘা জমিতে প্রায় ৩৩ হাজার টাকা মুনাফা অর্জন করেছিলাম। মূলত তখন থেকেই সবজি চাষকে পেশা হিসেবে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেই। ১৯৮৮-৮৯ সালে অন্যের জমি লিজ নিয়ে ৮০ বিঘা জমিতে শাক-সবজি উৎপাদন করি।

এতে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯১ সালে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার লাভ করি। ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধু কৃষি স্বর্ণপদক পদক লাভ করি।

এখন ৬৩ একর (প্রায় ২০০ বিঘা) জমির গড়ে তুলেছি ‘মা-মনি কৃষি খামার।’ যেখানে প্রায় ৩৫ প্রকার সবজি ও ১০-১৫ জাতের ফল চাষ হচ্ছে।পাবনায় মাঠের পর মাঠ সবজির সমারোহ দেখে মনে হয় প্রকৃতি নিজ হাতে এখানে বিছিয়ে দিয়েছে সবুজ গালিচা। একইভাবে গ্রামের পর গ্রাম ঘুরলে চোখে পড়ে হরেক রকমের ফলের বাগান।

এখানকার অধিকাংশ সবজি প্লট কিংবা ফলের বাগান করেছেন শিক্ষিত তরুণ বা যুবকেরা। তারা চাকরির পেছনে সারাদেশ না ঘুরে নিজেরাই এক নতুন পৃথিবী গড়েছেন। একজনের দেখাদেখি অন্যজন, এভাবে এ অঞ্চলে ধীরে ধীরে একটি নীরব সবজি বিপ্লব সংঘটিত হয়ে গেছে।এই বিপ্লবের এক নায়ক পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ছলিমপুর গ্রামের চাষি শাহজাহান আলী বাদশা ওরফে পেঁপে বাদশা। যিনি মাত্র দুই বিঘা জমিতে সবজি চাষ শুরু করেছিলেন।এখন তার খামারের আয়তন প্রায় ২০০ বিঘা। তিনি কৃষিতে বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক পাওয়া থেকে শুরু করে এআইপি (এগ্রিকালচারাল ইমপর্ট্যান্ট পার্সন) হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর, জগন্নাথপুর, ছলিমপুর, বক্তারপুর, চরকালামপুর, চরকুরুলিয়া, ডিগ্রীরচর, চরগরগরি, চরকাৎরা ভারইমারী, পাকুরিয়া, কাঠালবাড়ীয়া, দাশুরিয়া, পুড়ারদাইর শুধু একেকটি গ্রামের নামই নয়, যেন এক একটি সাজানো সবজি বাগান। এসব গ্রামের মধ্যে দিয়ে গেলে মাঠের পর মাঠ পেঁপে বাগান চোখে পড়ে।এখন পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতেই প্রতিবছর প্রায় তিন হাজার বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ হচ্ছে বলে কৃষি অধিদফতর জানায়।

আশির দশকের পর থেকেই ঈশ্বরদীতে পেঁপের চাষ বাড়তে থাকে। নব্বই’র দশকে ঈশ্বরদীর কিছু এলাকা পেঁপে পল্লীতে পরিণত হয়। পেঁপে চাষে রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন আজকের এআইপি শাহজাহান আলী বাদশা ওরফে পেঁপে বাদশা।

বাদশা মিয়া জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতহর, বারি, বিনা, বিএডিসি, রাজশাহী কষি উন্নয়ন ব্যাংক প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় তিনি খামার পরিচালনায় সাফল্য লাভ করেছেন।তিনি এখন দেশের সবচেয়ে বড় চাষি সংগঠন বাংলাদেশ ফার্র্মাস অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএ) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি। তিনি শুধু নিজের খামার নিয়ে ব্যস্ত থাকেননি। তিনি সারাদেশের চাষিদের সমস্যা নিয়ে ভাবেন। তাই গঠন করেছেন বিএফএ।

শাহজাহান আলী বাদশা জানান, সবসময় নতুন নতুন ফল ও সবজি চাষে তার আগ্রহ। শুধু নিজে চাষ করে লাভবান হননি তিনি বহু চাষিকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তারে দেখাদেখি বহু শিক্ষিত তরুণ চাকরির পেছনে না ঘুরে সবজি বা ফল চাষ করে নিজেদের ভাগ্য ঘুরিয়ে নিয়েছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর পাবনার উপপরিচালক ড. জামাল উদ্দিন জানান, পাবনা জেলা কৃষিতে অগ্রসর একটি জেলা। এখানে কৃষির যেমন বৈচিত্র রয়েছে, তেমনি অনেক খ্যাতিমান চাষি রয়েছেন। যাদের অনেকেই জাতীয় পদকপ্রাপ্ত কৃষক। এদের মধ্যে বাদশা মিয়া শীর্ষস্থানে। তিনি কৃষিতে বিশেষ অবদান রাখায় এআইপি মর্যাদা পেয়েছেন