পালিয়ে বেড়াচ্ছেন আ’ লীগের মন্ত্রী-এমপিরা, গ্রেপ্তার দুই ডজন
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ১২:৩২:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৩৫ বার পড়া হয়েছে
গণ আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান দীর্ঘ ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর দলের শীর্ষ থেকে তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও এমপি এখন গ্রেপ্তার ও মামলা আতঙ্কে ভুগছেন। গ্রেপ্তার এড়াতে অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে, কেউ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বিদেশে অবস্থান গেছেন। এরমধ্যে দুই ডজন মন্ত্রী-এমপি, দলের শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। রিমান্ড শেষে অনেকে কারাগারে রয়েছেন। আর যারা দেশত্যাগ করতে পারেননি তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ তালিকায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
জানা গেছে,ছাত্র আন্দোলন ঘিরে গণহারে হত্যা মামলায় বাদ পড়ছেন না কেউ। যাদের নামে মামলা হয়নি, তাদের কাছে অজ্ঞাতনামা আসামি যেন আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ কেউ অর্থের বিনিময়ে মামলা থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন। অনেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। আত্মগোপনে থাকায় অনেকে চাকরিস্থল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যেতে না পারায় অর্থকষ্টে রয়েছে পরিবারের সদস্যরা।
গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে ছোট বোন শেখ রেহানাসহ ভারতে যান। অবসান ঘটে আওয়ামী লীগের টানা ৪ বারের শাসনামলের।
এরপর ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। তারপর দ্রুত পাল্টে যেতে থাকে দৃশ্যপট। আওয়ামী লীগের নেতা, মন্ত্রী ও এমপিরা গা-ঢাকা দিতে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। অনেকে দেশ ছাড়েন। গ্রেপ্তার হতে শুরু করেন আওয়ামী লীগের নেতা, মন্ত্রী ও এমপি। এরমধ্যে দেশজুড়ে গণহারে হত্যা মামলা দায়ের শুরু হয়, আসামির সংখ্যায় উল্লেখ করা হয় শত শত আওয়ামী লীগের অনুসারীর নাম, অজ্ঞাত রাখা হয় হাজার হাজার। একের পর এক এসব মামলায় আসামির তালিকায় আসতে থাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, তার ছোট বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ শীর্ষ প্রায় সব নেতা ও এমপি-মন্ত্রীর নাম।
আওয়ামী লীগ সরকারের ২৬ জন মন্ত্রী-এমপি, উপদেষ্টা ও শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতা এরইমধ্যে আইশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। গত ১৩ আগস্ট থেকে শুরু হয় আওয়ামী লীগের বিতর্কিত মন্ত্রী, আর্থিক অনিয়মের জন্য আলোচিতদের গ্রেপ্তার। এছাড়া দুজন ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে গ্রেপ্তার হন সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ও এমপি শাহে আলম তালুকদার। সর্বশেষ রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে গ্রেপ্তার হন সাবেক বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী ও সাবেক সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রথম গ্রেপ্তার হন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক বেসরকারি শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এরপর একে একে সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ প্রতিমন্ত্রী এবি তাজুল ইসলাম, সাবেক পর্যটন ও বেসামরিক বিমান চলাচলমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ এবং সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আরিফ খান জয় গ্রেপ্তার হন।
সাবেক এমপিদের মধ্য নেত্রকোনা-৫ আসনের আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মাদারীপুর-৩ আসনের দলের প্রচার সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, বরিশাল-২ আসনের শাহে আলম তালুকদার, চট্টগ্রাম-৬ আসনের এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, কক্সবাজার-৪-এর আব্দুর রহমান বদি, চট্টগ্রাম-১১ আসনের এম এ লতিফ, ঠাকুরগাঁও-১ আসনের রমেশ চন্দ্র সেন, ঝিনাইদহ-১ আসনের নায়েব আলী জোয়ার্দার, ঢাকা-৭ আসনের হাজী সেলিম, ঠাকুরগাঁও-২ আসনের মাজহারুল ইসলাম সুজন, ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফেনী-২ আসনের নিজামউদ্দিন হাজারীকে সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আটক করে।
এছাড়া বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির, ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ মাহমুদকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে, রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করা হয়। ২০২২ সালে ড. ইউনূসকে পদ্মা নদীতে চুবানি এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নদীতে ফেলে দেওয়ার হুমকির অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে এই হত্যাচেষ্টা মামলা হয়।
অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ছাড়াও সারা দেশে এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নামেও মামলা হয়েছে। এখনো মামলা হচ্ছে।
জানা গেছে, খুলনা বিভাগে অন্তত ৪৩টি ও বরিশাল বিভাগে কমপক্ষে ১৯টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে বরগুনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ফোনালাপের কারণে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীরসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রংপুর বিভাগে অন্তত ২১টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে সাবেক স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর নামও আসামির তালিকায় রয়েছে। সিলেট বিভাগে অন্তত দুই ডজন মামলা হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। চট্টগ্রাম বিভাগে অন্তত ৫০টি মামলা হয়েছে। রাজশাহী বিভাগে অন্তত ৪৫টি মামলা হয়েছে। ঢাকা বিভাগে এসব মামলার সংখ্যা শতাধিক।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, হয়রানি করতেই এসব মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঢালাওভাবে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নামে হত্যা মামলা করা হচ্ছে। মামলা থেকে বাদ যাচ্ছেন না সহযোগী সংগঠনের নেতারাও।