ওয়ার্কশপ মিস্ত্রী কামালের ‘ভাসমান’ পাওয়ার টিলার
- সংবাদ প্রকাশের সময় : ০৬:৩৭:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৪১ বার পড়া হয়েছে
এখন আর গরু দিয়ে কেউ জমি চাষ করেন না। সবাই ট্রাক্টর বা পাওয়ার টিলার দিয়েই জমি চাষ করেন। অবশ্য বরিশাল অঞ্চলে পাওয়ার টিলারের ব্যবহার বেশী। কৃষিবান্ধব এই দুটি যন্ত্র দিয়ে শুকনো জমি চাষ করা যায়। কিন্তু বরিশাল বিভাগসহ দেশের অনেক অঞ্চল আছে যেখানে বর্ষাকালে বা নদীর জোয়ারে ডুবে যাওয়া জমি ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষ করা সম্ভব হয়না।
এমনকি আদিম পদ্ধতির গবাদি পশু দিয়েও জমি চাষ করা যায় না। আর এ সমস্যা থেকে কৃষকদের মুক্তি দিতে ওয়ার্কশপ মিস্ত্রী মোস্তফা কামাল জলমগ্ন জমি চাষ করার জন্য নিজস বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতা দিয়ে তৈরী করেছেন ভাসমান পাওয়ার টিলার। স্থানীয়দের কাছে অবশ্য এটি নাও (নৌকা) টিলার হিসাবেই পরিচিত।
বরিশাল জেলার বানারিপাড়া উপজেলার বিশারকান্দি ইউনিয়নের চৌমোহনী বাজারের ওয়ার্কশপ মিস্ত্রী গোলাম মোস্তফার নির্মিত এই কৃষিযন্ত্র ইতোমধ্যে সুখ্যাতি ছড়িয়েছে বরিশাল বিভাগ সহ পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর, মাদারিপুর, শরিয়তপুর, গোপালগঞ্জ এলাকার কৃষকদের মধ্যে। তাদের চাহিদানুযায়ী মোস্তফা এখন প্রতি বছর ১০/১২টি নাও টিলার সরবরাহ করে থাকেন। এখন প্রতিটি নাও টিলার ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রী হচ্ছে।
মোস্তফা প্রথমদিকে লোহা বা টিনের পাত দিয়ে নৌকা তৈরী করতেন। কিন্তু লোহা বা টিনের পাতের দাম বেড়ে যাওয়ায় মোটা প্লাস্টিকের শিট দিয়েও নৌকা তৈরী করছেন। যে কৃষক দিনে ৫ হাজার টাকা ব্যয় করে জমি চাষ করতেন তিনি এখন দেড় থেকে দুই হাজার টাকায় সেই জমি চাষ করছেন।
মোস্তফা কামাল জানান, তিনি একসময় পাওয়ার টিলার ব্যবহার করতেন। কিন্তু জোয়ার ভাটার নদী বিধৌত জনপদ হওয়ায় অনেক জমিই চাষাবাদ করতে পারতাম না। কর্দমাক্ত অনেক এলাকা রয়েছে যেখানে চাষের পশু নামে না, আবার টিলারও ব্যবহার করা যায়না। অথচ ওই জমিতে ভাল ফসল হয়। জমি পতিত থেকে যায়। তাই ২০১৬ সনে পরীক্ষামূলকভাবে নৌকা আকৃতির একটি টিলার বানালাম যেটা পানিতে চলতে পারবে আবার জমিও চাষ করা যাবে। এতে কোন চাকা নেই। টিলারের ইঞ্জিন নৌকার উপর। আর লাঙলটি নিচে। এতে করে কর্দমাক্ত জমিতে যখন নৌকাটিকে সামনের দিকে চালানো হবে তখন ইঞ্জিন টিলার সহ পেছনের দিক দেবে যাবে এবং জমি চাষ হবে। প্রথমে নিজের পতিত জমিতেই পরীক্ষামূলকভাবে টিলারটি চালিয়ে চমৎকার ফল পেলাম। এই নাও টিলার দেখে অনেকেই পছন্দ করল। প্রথম বছরে চারটি নাও টিলার বিক্রী করেছিলাম। আর এখন প্রতি বছরই ১০/১২টি করে টিলার তৈরী করছি। এখন পর্যন্ত ৬০টির অধিক টিলার বিক্রী হয়েছে।
উজিরপুরের নাও টিলার ক্রেতা জাহিদ হোসেন জানান এখন আর আমাদের জমি পতিত থাকে না। আর ট্রাক্ট্ররের চেয়ে এই টিলার জমির চাষ গভীর হওয়ায় ফলন ভাল হয়। এক বিঘা জমি চাষ করতে এখন দেড় হাজার বা তার চেয়ে একটু বেশী খরচ হয়।
এ বিষয়ে বানারিপাড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অফিসার অনয় সিংহ বলেন, ভাসমান টিলার সম্পর্কে তাদের জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবেন ব্যবহারকারীরা উপকৃত হচ্ছে কিনা ? যদি জমি চাষের জন্য সহায়ক হয় তাহলে মোস্তফাকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে।